শেরপুরে সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে অবহিতকরণ সভা

মোঃ আব্দুল করিম, শেরপুর:

শেরপুর সদর উপজেলার কামারের চর ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে ২৬ মঙ্গলবার বিকেল ৪.০০টা থেকে সন্ধ্যা ৬.৩০ টা পর্যন্ত জনউদ্যোগ ও ইউনিয়ন পরিষদের আয়োজনে সার্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

দেশের সকল নাগরিকদের পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আনতে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি (স্কিম) চালু করেছে সরকার। পেনশন কর্মসূচি বা স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হলে ৬০ বছর বয়সের পর থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন একজন চাঁদাদাতা। দেশের মানুষের জন্য চার ধরনের পেনশন স্কিমের বিধান রেখে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা জারি করা হয়েছে।

অর্থ বিভাগ থেকে জারি হওয়া এই বিধিমালায় ‘প্রবাস’ ‘প্রগতি’, ‘সুরক্ষা’ ও ‘সমতা’ নামে চার ধরনের পেনশন স্কিম চালুর কথা বলা হয়েছে। এসব স্কিমের চাঁদার কিস্তি পছন্দ অনুযায়ী মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে পরিশোধ করা যাবে। চাঁদা দেওয়ার সময়ের ভিত্তিতে চারটি স্কিমের জন্যই মাসিক চাঁদার পরিমাণ এবং পেনশনের পরিমাণ আলাদা আলাদাভাবে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। পেনশন স্কিমে অংশ নিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকরাও এই স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। যেসব প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তারা পাসপোর্টের তথ্য দিয়ে পেনশন স্কিমে নিবন্ধনের আবেদন করতে পারবেন।

তৃণমুল পর্যায়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিষয়ক এক অবহিতকরণ সভায় এমন তথ্য জানান অতিথি ও আলোচকরা।

২৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে শেরপুর সদর উপজেলার কামারেরচর ইউনিয়ন পরিষদ হলরুমে এ অবহিতকরণ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। নাগরিক প্ল্যাটফরম জনউদ্যোগ শেরপুর কমিটি ও ১ নং কামারেরচর ইউনিয়ন পরিষদ এবং আইইডি যৌথভাবে এ সভাটির আয়োজন করে।

কামারেরচর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. হাবিবুর রহমান হাবীব এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহনাজ ফেরদৌস। সাংবাদিক হাকিম বাবুল-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জনউদ্যোগ কমিটির আহবায়ক শিক্ষক মো. আবুল কালাম আজাদ।

অন্যান্যের মাঝে আলোচনায় অংশ নেন সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) সাবিহা জামান শাপলা, বিতার্কিক এস.এম. ইমতিয়াজ চৌধুরী শৈবাল, শিক্ষক এস.এম. আবু হান্নান, নারী উদ্যোক্তা আইরীন পারভীন, রাজনীতিক সোলায়মান আহমেদ প্রমুখ।

প্রধান অতিথি সদর ইউএনও মেহনাজ ফেরদৌস বলেন, সরকার সর্বজনীন যে সকল পেনশন স্কিম চালু করেছে, তার মধ্যে বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানরতদের জন্য প্রবাস স্কিম, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য প্রগতি স্কিম চালু করেছে। তাছাড়া কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতিদের জন্য সুরক্ষা স্কিম এবং দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী স্বল্প আয়ের ব্যক্তিরা যাদের আয়সীমা বছরে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা, তাদের জন্য সমতা স্কিম চালু করেছে। এসব পেনশন স্কিমে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী জাতীয় পরিচয়পত্রধারী সকল বাংলাদেশি নাগরিক নিবন্ধন করতে পারবেন। স্কিমে অংশ নেওয়ার তারিখ থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে। ১০ বছর চাঁদা দেওয়া শেষ হওয়ার পর থেকে আজীবন পেনশন পাবেন চাঁদাদাতারা। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় থাকা ব্যক্তিরাও সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা সমর্পণ করে পেনশন স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।

জনউদ্যোগ আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই নাগরিক প্ল্যাটফরম জনউদ্যোগ সকল নাগরিকের জন্য সর্বজনীন পেনশন, পারিবারিক রেশন ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যবীমা সহ বিভিন্ন নাগরিক ইস্যুতে কাজ করে যাচ্ছে। সরকার সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করায় এ বিষয়ে সাধারণ নাগরিকদের অবহিত করতে জনউদ্যোগ শেরপুর কমিটি এ ধরনের অবহিতকরণ সভার আয়োজন করেছে। যাতে তৃণমুল পর্যায়ে সাধারণ মানুষ এ বিষয়ে সচেতন হতে পারেন এবং সঠিক তথ্য জানার সুযোগ পান।

কামারেরচর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মা. হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, যে কোনো স্কিমে নিবন্ধিত হওয়ার পর পেনশন কর্তৃপক্ষ ধার্যকৃত হারে নিয়মিত চাঁদা দিতে হবে। পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে মাসিক চাঁদা জমা দেওয়া যাবে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনলাইন ব্যাংকিং, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে চাঁদা জমা দিতে পারবেন। ব্যাংকের পাশাপাশি নগদ, বিকাশ সহ যেকোনো মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও চাঁদা পরিশোধের সুযোগ রয়েছে।

অনুষ্ঠানে জনউদ্যোগ কমিটির পক্ষ থেকে সরবরাহকৃত লিফলেটের তথ্যে জানা যায়, প্রবাস স্কিমে ১০ বছর পূর্তিতে ৫ হাজার টাকার কিস্তিতে পেনশন পাওয়া যাবে মাসে ৭ হাজার ৬৫১ টাকা হারে। সাড়ে ৭ হাজার টাকা কিস্তিতে মাসে ১১ হাজার ৪৭৭ টাকা এবং ১০ হাজার টাকা কিস্তিতে মাসে ১৫ হাজার ৩০২ টাকা পাওয়া যাবে। এভাবে ১৫, ২০, ২৫, ৩০, ৩৫, ৪০ ও ৪২ বছর পূর্ণে পেনশনের হারও বাড়বে। প্রগতি স্কিমে মাসিক ২ হাজার, ৩ হাজার কিংবা ৫ হাজার টাকা কিস্তি দিয়ে ১০ বছর পূর্তিতে পেনশন পাওয়া যাবে যথাক্রমে মাসে ৩ হাজার ৬০ টাকা, ৪ হাজার ৫৯১ টাকা এবং ৭ হাজার ৬৫১ টাকা। সুরক্ষা স্কিমে মাসিক ১ হাজার, ২ হাজার, ৩ হাজার কিংবা ৫ হাজার টাকা কিস্তি দিয়ে ১০ বছর পূর্তিতে মাসে পেনশন পাওয়া যাবে যথাক্রমে ১ হাজার ৫৩০ টাকা, ৩ হাজার ৬০ টাকা, ৪ হাজার ৫৯১ টাকা এবং ৭ হাজার ৬৫১ টাকা। সমতা স্কিমে মাসিক ১ হাজার টাকা কিস্তি দিয়ে যুক্ত হয়ে ১০ বছর পূর্তিতে মাসে পেনশন পাওয়া যাবে ১ হাজার ৫৩০ টাকা হারে। এভাবে ১৫, ২০, ২৫, ৩০, ৩৫, ৪০ ও ৪২ বছর পূর্ণে পেনশনের হারও বাড়বে। এ অবহিতকরণ সভায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, বেসরকারি চাকুরীজীবী, নারী, উন্নয়নকর্মী সহ ৩ শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।