আযাহা সুলতান :
আমার দেশ বিষের কারখানা
বিষ খেয়ে খেয়ে আমরা মানুষ
আমাদের চারি পাশে জমে ওঠছে বিষের হাটবাজার—
জমজমাট চলছে বিষের বেচাকেনা
ধানখেতে গমখেতে শসাখেতে—সমস্ত ফলের খেতে বিষের মিশ্রণ
কিছু খাওয়ার সাধ্য নেই আমার—হাওয়া ছাড়া—
হাওয়া খেতে গেলেও পাই বিষের গন্ধ
হাওয়াতেও দূষণ?
তবু—আর তো কিছু খাওয়ার নেই
হাওয়া ছাড়া
মাঠে নেই আর সৎ ও ন্যায়পরায়ণ চাষী
চাষে নেই আর উপকারী ফসলের চাষ
ফলে-ফসলে—সমস্ত খাবারে মৃত্যু আর মৃত্যুর গুণ—
গুণে গুণে বড় হচ্ছে ফসল
স্বার্থান্ধ আজ চাষীরা—
দেখবে না সে পরের ক্ষতি—লাভ যে বুঝে গেছে
সে মরবে সেকথা মিছে
আমি ও আমরা মরব একথা শতভাগ নিশ্চিত
জীবন বাঁচানোর ফসল ফলাবে কে? কোন সুহৃদ?
এমন হৃদয়বান—মহান চাষী কি আর কল্পনা করা যায় এদেশে?
গোটা দেশটাই আজ বিষের কারখানা!
কীসে জীবন বাঁচবে—বাঁচাব বুঝছি না
ফলের দোকানে গেলে দেখি—চিকচিক করছে বিষ
মাছের দোকানে গেলে কাননেড়ে মাছে দিচ্ছে বিষের হাতছানি
তিরিশ বছর শীতল-সিন্দুকে ভরা পচা মাংসে পাচ্ছি তাজা রক্তের গন্ধ
বাজারে বাজারে ঘুরছি—কিছুই কিনতে পারছি নে আমি
শাকসবজি আর মসল্লার বাজারে ভেজাল
পানপাতা খেয়ে তো জীবন বাঁচাতে পারি না আর
পানপাতাও পচে না আজ?
পানপাতাও বলছে—আমি কেন পিছে থাকব ভাই!
হাত দুটো খালি ফিরে এলাম ঘরে—
বধূর নাচন কে দেখে
কী করে বোঝাই—বোঝাব তারে
ভাষা নেই জানা আর বোঝাবার—
বিষ খেয়ে আর জিন্দা থাকবে কতক্ষণ—কত দিন—কতকাল!
আমি যাচ্ছি—গেলাম—
রাগে-দুঃখে-ক্রোধে খেতে গেলাম বিষ
পানির মতো ‘ঢকঢক’ করে খেলাম মরণে—
মরিনি!
বুঝেছি—
বোঝার বাকি রইল না তবে
এখানেও দেখছি—হয়ে গেছে ভেজাল!
একেমন গড়ে ওঠছে ভেজালের দুনিয়া—বাজার আর বাজার—
প্রেমিকার হাসিতে খুঁজে পাচ্ছি ভেজালের ঘ্রাণ
প্রেমিক দিতে চাচ্ছে জান—হারামও না
মা-বাবার আদরেও পাচ্ছি স্বার্থের সুবাস
ভাইবোনের ভালোবাসাতেও দেখছি লাভের সাঁতারান
কোন পৃথিবীতে আছি আমি
কোন পৃথিবীতে বসবাস করছি আমরা
কেমনে কাটবে আমার জিন্দেগি
কেমনে বাঁচাব এ জীবন
প্রিয়ার চুমোতে বিষ!
প্রিয়ের ছোঁয়াতে বিষ!