সাদা রক্ত

যুবক অনার্য :

আমি জরিকে WhatsApp করি: আমাকে শুধু ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় দিলেই হবে।
জরির সংক্ষিপ্ত উত্তর: ওকে।
তারপর একটি সমগ্র বছর কেটে যায়
জরির কোনো খবর নেই।একদিন আমি যখন মেঘনা থেকে ঢাকায় আসছি, জরির ফোন: দাদা,আপনি কোথায়?
আমি বাসে
কোথায় যাচ্ছেন?
যাচ্ছি না, আসছি
কোথায়?
ঢাকা
যদি ফ্রি থাকেন তাহলে ঢাকা ল্যান্ড করে একটু এফডিসি আসতে পারবেন?
নিশ্চয়ই। আসছি।

আমি এফডিসি পৌঁছে যাই
এফডিসিতে জরির সেদিন একটা মিটিং ছিলো।মিটিং শেষ করে জরি আমাকে নিয়ে চলে আসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। আমরা বসি সবুজ ঘাসের বুকে।জরি খুব সাবলীল মেয়ে।ঘাসের উপর আমাকে নিয়ে বসতে তার কোনো দ্বিধা হয় না।
তারপর দাদা কি অবস্থা বলেন
এই তো চলছে
কেমন চলছে সেটাই তো শুনতে চাইছি
নিয়তিলিপ্তভাবে পরিত্রাণহীনভাবে
এতোসব ভারী কথা আমি কি করে বুঝবো,হালকা করে বলেন
আমি বলি: বিড়ি আছে সংগে?
জরি ম্যাচ লাইট দিয়ে বিড়ি ধরিয়ে দেয়
আমি সিগ্রেটে টান দিয়ে বলি:
হালকা ভারী আজ থাক।আপনার সংগে দেখা হবে সেই আশা আমি ছেড়েই দিয়েছিলাম।আপনার ফোন পেয়ে সত্যিই সারপ্রাইজড হয়েছি।
আমি খুব লজ্জিত,দাদা।আমি আসলে ব্যক্তিগত জীবনে খুব বেশি ঝামেলায় ছিলাম।এখন ওসব চুকেবুকে গেছে।এখন আমি স্বাধীন যেদিকে খুশি উড়ে যেতে পারি
কিছুক্ষণ নীরবতা।
জরির ব্যক্তিগত ঝামেলা আমি অনুমান করে নিতে পারি এবং আমার ধারণা অনুমান শতভাগ মিলে যাবে।
নীরবতা ভেংগে জরি বলে:আশা করি আপনি ভুল বুঝবেন না
আমি ভুল বুঝিনি।আমি ধারণা করেছিলাম আপনি হারিয়ে গেছেন
কীরকম?
আসলে আপনার সংগে আমার যেরকম পরিচয় সূত্র এমন সামান্য সূত্রর উপর ভর করে আপনার কাছে সময় পাবার তেমন কোনো অধিকার আমার সত্যিই নেই
দাদা আপনি আবারও ভারী করে ফেলছেন
ওকে,হালকা ভারী বাদ।তারপর বলুন।
আপনি বলুন।
আরেকটা সিগ্রেট দিন
জরি লাইটার জ্বালায়
আমি সিগ্রেট ধরাই ধোঁয়া উড়াই সিগ্রেট পুড়াই সময় বয়ে যায়
জরি অপেক্ষা করে থাকে আমার কথা শুনবার
আমি অপেক্ষা করি আমার কথা বলবার কিন্তু বলতে ইচ্ছে হয় না, আমি বস্তুত উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছি।

কিন্তু এ কথা জরিকে বলা যায় না।তবু বলি: জরি
জ্বি
আপনি আসলে একজন ভালো মানুষ
আপনি কি এ কথাই বলতে চেয়েছিলেন যা বলবার জন্য একটি সমগ্র বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে?
আমি হো হো করে হেসে উঠি
জরিও হেসে উঠলো
ওকে দাদা বলেন
বলছিই তো।বলছি, আপনাকে আমি একাধিকবার নক করেছিলাম কারণ আপনি অহংকারী নন
তাই নাকি?
জরি I am serious.আমার জীবনে আমি কাউকে ২ বারের বেশি নক করি নি।আপনাকে করেছি কারণ আপনি অহংকারী নন
তারপর?
তারপর?তারপর একদিন আপনার ফোন।তারপর আপনার মুখোমুখি ঘাসের বুকে বসে অনন্তকাল বসে থাকা
তারপর?
তারপর আমি বললাম: আপনি হারিয়ে গিয়েছিলেন
আপনি বললেন: হারাতে চেয়েছিলাম, পারিনি।বার বার ফিরে এসেছি
আমি বললাম:ফিরে এসে সেই তো না ফেরাই ইতিহাস হয়ে জেগে রয়
আপনি বললেন….নাহ্,আর পারছিনা।আপনিই বলুন আপনি কি বললেন
মারিয়া বললো: আমি বললাম- চলে যাওয়া মানে ছেড়ে যাওয়া নয় ফিরে আসা মানে থেকে যাওয়া নয়
বাহ্ দারুণ তো
ধুর কি যে বলেন।এটা খুব সাদামাটা কথা।যাইহোক এক বছর আগে যা বলতে চেয়েছিলেন আজ তা বলেই ফেলুন
সত্যিই বলবো?
না মিথ্যেমিথ্যি বলবেন
আচ্ছা মিথ্যে করেই বলি
আমি বলতে শুরু করি।তার আগে তৃতীয় নম্বর সিগ্রেট তৃতীয় নম্বর ধোঁয়া
জরি আমার দিকে সিরিয়াস ভঙিমায় তাকিয়ে আছে
আমি বলি: আমি সব সময় লক্ষ্য করেছি আমি যা ভেবে রেখেছি করবো বোলে দেখি আমি না করতে পারলেও কেউ না কেউ করে ফেলে।ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ একটা প্রবন্ধে দেখিয়েছিলেন- পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ একই সময়ে বা আলাদা সময়ে একই রকমের বিষয় ভাবে মানে ভাবনার মিল থাকে কিন্তু এরা কেউ কাউকে চেনে না বা কারো সংগে কারো পরিচয় যোগাযোগ ইত্যাদি থাকে না।তো আমি যে বিষয় আপনার সংগে শেয়ার করতে চেয়েছি তা হলো আপনার কাজের এলাকা অর্থাৎ ফিল্ম বা চলচ্চিত্র।চলচ্চিত্র জগতে আপনি ছাড়া অন্য কারো সংগে আমার পরিচয় নেই।
থাকলে তো আমাকে পাত্তাই দিতেন না, তাই না?
নিশ্চয়ই না।অন্য কেউ আর আপনি এক নন আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি
থাক,আর বলতে হবে না
আসলেই এক নয়। যাইহোক
বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এখন খুব নাজুক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু চাইলে ভালো করা খুবই সম্ভব
আমিও তা বিশ্বাস করি
বিশ্বাস করেন বলেই তো আপনাকেই বলছি
আপনি কীভাবে জানলেন যে আমি বিশ্বাস করি?
বিশ্বাস করেন বলেই তো ধৈর্য্য ধরে কাজ করে চলেছেন।যা বলছিলাম, সাম্প্রতিক সময়ে দু’চারটি মুভি দর্শককে হলমুখী করেছে।এটা বেশ প্লাস,আশাপ্রদ।কিন্তু দু’ চারটি মুভি দিয়ে তো আর হবে না
পর্যাপ্ত ভালো ছবি লাগবে
তা তো বটেই
কিন্তু সমস্যা হলো প্রোডিউসার যে লগ্নি করবেন টাকাটা উঠে না এলে লগ্নি করতে না চাওয়াই স্বাভাবিক।
একশো ভাগ ট্রু
আমি ধারণা করি আপনার হাতেও তেমন কোনো প্রোডিউসার নেই
আসলেই নেই
আপনি প্রোডিউসার পাবেন তবে হয়তো দেরি হতে পারে
তা পারে
কিন্তু আমার কাছে যে থিম আছে প্রোডিউসার বুঝতে পারলে রাজি হয়ে যেতেন টাকা লগ্নি কর‍তে।-
এ কথা বলার পরপরই আমার মনে হলো- জরি নিশ্চয়ই ভাবছে আমি নিজের ঢোল নিজেই পিটাচ্ছি।আমার চেহারা কি কিছুট ফ্যাকাশে দেখাচ্ছিলো!
আনইজিনেস কাটাতে আমি বলি:আমি থিমটা শেয়ার করার পর আপনি বুঝতে পারবেন আমার কথার ভিত্তি কতোটুকু।
আমার চেহারার ফ্যাকাশে ভাব তবুও হয়তো থেকে যায়;
ফ্যাকাশে ভাব নিয়েই আমি আমার থিম শেয়ার করি।
থিম জরির বেশ পছন্দ হয় কিন্তু দুঃখ প্রকাশ করে বলে:দাদা আপনার এই এক ছবিতেই প্রোডিউসার কোটি কোটি টাকা কামিয়ে ফেলতে পারবেন আমি নিশ্চিত কিন্তু আমার হাতে যে এই মুহুর্তে প্রোডিউসার নেই।আর ঝুকিপূর্ণ বিষয় হলো থিম শেয়ার করলে প্রোডিউসার আমাকে ডিরেক্টর হিসেবে না নিলেও থিম চুরি করে অন্য কাউকে দিয়ে করিয়ে ফেলতে পারে।সেক্ষেত্রে বিষয়টি আপনার জন্য হবে খুবই কষ্টের বিষয়।
আমি এসব কিছুই চিন্তা করেই রেখেছি।
কিন্তু হতাশ হলে চলবে না।প্রোডিউসার আজ হোক কাল হোক পাওয়া যাবেই
জরি বলে – চেষ্টা চলুক।

জরির সংগে সেদিন তারপর আর কথা আগাচ্ছিলো না।অগত্যা বিদায় নিয়ে মিরপুর চলে এসেছিলাম।

জরি খুব চেষ্টা করছিলো প্রোডিউসার পেতে।কিন্তু পাচ্ছিলো না।দুই একজন পাওয়া গেলো যারা জরিকে অফার করে লং ড্রাইভে যেতে।কিন্তু লং ড্রাইভে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।লং ড্রাইভে যাওয়া না যাওয়া নিয়েই জরির সংসারটা ভেঙে গিয়েছিলো।লং ড্রাইভে না গিয়েও জরি ওর হাসবেন্ডের সন্দেহের দৃষ্টিতে পড়েছিলো।শেষ পর্যন্ত তো সংসারটাই ভেঙে গেলো।

জরির সংগে এক সময় একটু একটু করে আমার যোগাযোগ কমে গেলো- স্বাভাবিকভাবেই।আমি বাংলাদেশ ছেড়ে পারি জমালাম বিদেশ বিভুঁই।একদিন দেখি আমার সেই থিম নিয়ে জরি ছবি করে ফেলেছে।আমি খুব অবাক আর মুগ্ধ হলাম।
ছবি দেখতে হলে দর্শক উপচে পড়েছে।দেশে বিদেশে ছবিটির জয়জয়কার।
কিন্তু নিজেকে খুব দায়ী আর ক্ষমার অযোগ্য মনে হলো যখন জরির WhatsApp পেলাম: দাদা,আপনি আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।প্রোডিউসার কোনোভাবেই পাচ্ছিলাম না।অগত্যা লং ড্রাইভে যেতেই হলো।আমি গিয়েছিলাম শিল্পের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা থেকে। চোখ জুড়ানো আর মন ভোলানো শিল্পের জন্য কী করতে হয় আমি জানিনা কিন্তু যে শিল্প হৃদয়ের মাঝখানে তৈরি করে দগদগে ক্ষত আর অভূতপূর্ব হাহাকার সেই শিল্পের জন্য অনেক রক্ত দিতে হয়।সাদা সাদা সেই রক্ত আমি দিয়েছিলাম কেবলি শিল্পের উদ্দেশে। নিজেকে আমার একটুও অপরাধী মনে হয়নি।বার বার শুধু মনে পড়ছিলো আপনার কবিতার সেই লাইন:’ শিল্প, সে বড়ো নির্মম নিষ্ঠুরভাবে সুন্দর’।

আমি স্তব্ধ হয়ে যাই।আমার সমগ্র শরীর কাঁপতে থাকে
। নিজের চুল টেনে ছিঁড়তে থাকি।আমার এ অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য।কেনো যে আমি থিম দিতে গিয়েছিলাম!আমি আসলেই একটা স্টুপিড সেল্ফিশ।আমি যে দেশে থাকি এখানেও একটি হলে ছবিটি রিলিজ হয়েছে।দর্শক ছবি দেখে হল থেকে বের হন পরিতৃপ্তি নিয়ে।বুঝতে পারি ছবি দর্শকনন্দিত হয়েছে।কিন্তু আমি কোনো তৃপ্তি পাই না।নিজেকে কেবলি অপরাধী মনে হয়।মনে হয় দেশে ফিরে জরির পা ছুঁয়ে ক্ষমা চাই।কিন্ত দেশে ফেরা হয় না আমার ক্ষমাও চাওয়া হয় না।জরির সাদা রক্তের কাছে আজন্ম ঋণী হয়ে থাকি যে রক্ত শিল্পের কাছে দায়বদ্ধ যে শিল্প হৃদয়ের মাঝখানে তৈরি করে দগদগে ক্ষত অভূতপূর্ব হাহাকার।

প্রকাশিত :  শনিবার, ০৬  এপ্রিল ২০২৪

স্ক্যাবিস বা চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কী করবেন?

ডায়াবেটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে শক্তিশালী ঔষধ

শ্বেতী রোগের কারণ, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা

যৌন রোগের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

শেয়ার করুন