সারাদেশে কিশোর অপরাধ বাড়ছে, নিয়ন্ত্রণ কীভাবে?

বিশেষ প্রতিবেদন

বার্তাকক্ষ :
বিষয়টা একেবারে অভিনব, যা মানুষ কল্পনাতেও আনতে পারেনি দু’দশক পূর্বে। যে তরুণ-কিশোররা হবে নম্র -ভদ্র, মেধাবী। যারা দেশ-বিদেশে নেতৃত্ব দেবে, সমাজ-রাষ্ট্রর মুখ উজ্জ্বল করবে। যাদের অবদানে সমাজের মানুষ অন্যায়-অসত্য থেকে পরিত্রাণ পাবে, তারাই কি-না জড়িয়ে পড়ছে অসামাজিক কাজে। তারা বেপরোয়া হয়ে খুন, ধর্ষণ, হানাহানি-মারামারি, মাদক সেবন ইত্যাদিতে জড়িয়ে আমাদের সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। সারাদেশে কিশোর অপরাধ বাড়ছে, এদের নিয়ন্ত্রণ কীভাবে সম্ভব?

কিশোর অপরাধ একটি সামাজিক অপরাধ। ৭ থেকে ১৮ বছর বয়সীরা অপরাধে জড়িয়ে পড়লে, একে কিশোর অপরাধ বলা হয়। যদিও অনেকে কিশোর অপরাধের প্রেক্ষাপটকে দারিদ্রতা হিসেবে উল্লেখ করেন, তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শুধুমাত্র দরিদ্র পরিবারের কিশোররাই অপরাধে জড়িত হচ্ছে না। বরং ধনীর সন্তানরাও অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে।

বগুড়ায় কিশোর অপরাধীদের গ্যাং গড়ে না উঠলেও অভিভাবকদের অবহেলা-প্রশ্রয়ে দিন দিন কিশোর অপরাধ বাড়ছে। মধ্যবিত্ত ও ধনী পরিবারের অনেক কিশোর বিভিন্ন অপকর্মে সম্পৃক্ত হয়ে সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করছে। জানা যায়, পরিবারের কাছে আবদারেই স্বপ্নপূরণ হচ্ছে ওইসব কিশোরদের। আর এতেই বাড়ছে তাদের দৌরাত্ম্য। বগুড়া শহরে রেজিস্ট্রেশন ও লুকিং গ্লাসবিহীন উচ্চ শব্দের সাইলেন্সার ব্যবহার করা মোটরসাইকেলে চেপে চোখে সানগ্লাস, মুখে হালকা ফার্স্ট দাঁড়ি, গলায় চেইন, টি-শার্ট ও থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরা কিশোররা শহরের গার্লস স্কুল-কলেজ, কোচিং সেন্টারসংলগ্ন এলাকা এবং বিভিন্ন মোড়ে আড্ডার সঙ্গে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অনেকে স্কুল ব্যাগে বই-খাতার সঙ্গে থাকে মাদক ও ধারালো ছুরি।

তাদের অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে চাঁদাবাজি, মারামারি, খুন, চুরি, উত্যক্ত, ধর্ষণ, ছিনতাই, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্নপ্রকার অপরাধের অভিযোগ। ১ জানুয়ারি থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত গত ১০ মাসে আদালতের নির্দেশে জেলার প্রায় ৮০ জনকে যশোর জেলার পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগরীতে কিশোর গ্যাং এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এরা যখন তখন যেখানে সেখানে ছিনতাই, রাহাজানিসহ অপরাধ কর্মের সাথে চালাচ্ছে মাদকের ব্যবসা। কিশোর গ্যাং এখন গ্যাং স্টার হয়ে পাড়া মহল্লায় স্বর্গ গড়ে তুলেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নগরীর প্রায় ওয়ার্ডে কিশোর গ্যাং অপরাধের ঘটনা একের পর এক সংঘটিত করছে অপকর্ম। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, মাদক বেচাকেনা, মাদক সেবন, খুনাখুনি, ইভটিজিংসহ নানা অপরাধ দলবল নিয়ে নিজেরাই করে থাকে। অপরাধের নিজস্ব রোডম্যাপ, পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন নিজেরাই করে।

বলা যায়, ওইসব এলাকার আধিপত্য এখন কিশোর গ্যাংয়ের হাতে। জিম্মি হচ্ছেন নগরবাসী। এসব গ্যাং কালচার নিরসনে মানুষ সোচ্চার হচ্ছেন না। বেশিরভাগ মানুষই উটকো ঝামেলা থেকে বেঁচে থাকতে চান, এসব কিশোর অপরাধীদেরকে এড়িয়ে চলেন। তবে এসব কিশোর অপরাধীরা যখন মারাত্মক অপরাধ করে বসে, নিজেদের ঘাড়ে এসে পড়ে তখন টনক নড়ে সাধারণ মানুষের।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব কিশোর অপরাধের বেশিরভাগই শুরু হয় পরিবারের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে। পরিবারের প্রধান বাবা-মা অনেক সময় কিশোরদেরকে তাদের অপরাধকে অপরাধ মনে করেন না। মনে করেন এটা সন্তানদের স্বাধীনতা। কিন্তু ওই স্বাধীনতার কুফল যখন মাঝে মাঝে বিশাল অপরাধ হয়ে ফিরে আসে, তখন ওই কিশোর বা তাদের বাবা মায়ের আর করণীয় কিছুই থাকে না, শুধু সামনে অন্ধকার দেখা ছাড়া।

আমরা খবরের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, সঠিক সংবাদ পরিবেশনই আমাদের বৈশিষ্ট্য

০২ নভেম্বর ২০২০ খ্রি. ১৭ কার্তিক ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪২ হিজরি, সোমবার