ফরিদপুরের সালথায় তাণ্ডব : ৫ মামলায় আসামি ১৬ হাজার ৮০০

ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় তাণ্ডবের ঘটনায় একটি মামলার পর সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) রাত ১২টা পর্যন্ত নতুন করে আরও চারটি মামলা হয়েছে। এনিয়ে পুলিশের করা একটি মামলাসহ মোট মামলার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল পাঁচটি।

নতুন করে যে চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, তার একটি করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বাচ্চু মাতুব্বর। এ মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৮০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও তদন্ত) জামাল পাশা এতথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, সালথায় সহিংসতায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ২৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরমধ্যে ১১ জনকে বুধবার (৭ এপ্রিল) ১০ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত প্রত্যেকের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বৃহস্পতিবার বাকি ১৭ জনকে সাত দিন করে রিমান্ড চেয়ে জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে সোপর্দ করা হয়।

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়িচালক মো. হাশমত আলী বাদী হয়ে ৫৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং চার হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি একটি মামলা করেছেন। আরেকটি মামলা করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষী সমীর বিশ্বাস। এ মামলায় তিনি ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে চার হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করেছেন। এছাড়া সালথা উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ির ড্রাইভার সাগর সিকদার বাদী হয়ে করা মামলাটিতে ৪২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে চার হাজার জনকে।

এর আগে গত মঙ্গলবার পুলিশের উপ-পরিদর্শক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান বাদী হয়ে ৮৮ জনের নাম উল্লেখ করে চার হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা দেখিয়ে থানায় হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে প্রথম মামলাটি করেন। এ পর্যন্ত যে পাঁচটি মামলা করা হয়েছে, তাতে নাম উল্লেখ করা হয়েছে ২৬১ জনের। অজ্ঞানামা আসামি করা হয়েছে ১৬ হাজার ৮০০ ব্যক্তিকে।

উল্লেখ্য, গত সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ফুকরা বাজারে লকডাউনের কার্যকারিতা পরিদর্শনে যান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হিরামণি। এসময় সহকারী কমিশনারের উপস্থিতিতে মানুষ ছোটাছুটি করেন। পরে স্থানীয়রা জড়ো হন। মানুষের ভিড় দেখে এসিল্যান্ড ফুকরা বাজার থেকে চলে আসেন। পরে হেফাজতের জনৈক এক আলেমকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এমন গুজব ছড়িয়ে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১ পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ উপজেলা চত্বরে দেশীয় অস্ত্র ঢাল-কাতরা ও লাঠিসোটা নিয়ে প্রবেশ করে বিভিন্ন সরকারি দফতর ও থানায় তাণ্ডব চালান।

হামলাকারীরা তিন ঘণ্টাব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ চালান। তাদের এই হামলায় রক্ষা পায়নি উপজেলা পরিষদ চত্বরের গাছপালা ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল। এতে সালথা উপজেলা সদর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ইউএনও-এসিল্যান্ডের দুটি সরকারি গাড়ি সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেন তারা। এছাড়া সাংবাদিকের একটি মোটরসাইকেলসহ তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয় ও দুটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়া হয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৫৮৮ রাউন্ড শটগানের গুলি, ৩২ রাউন্ড গ্যাসগান, ২২টি সাউন্ড গ্রেনেড এবং ৭৫ রাউন্ড রাইফেলের গুলি ছুড়ে।