সেই রাতে এনকাউন্টারের কথা বলে কালেমা পড়তে বলা হয় আরিফকে

জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম:

ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মধ্যরাতে কারাদণ্ড পাওয়া অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউন ও ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যান জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এরপরই তাকে কারাগার থেকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রোববার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এসময় চিকিৎসকরা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন।

এর আগে রোববার সকালে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে তাকে জামিন দেয়া হয়।

আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাখাওয়াত হোসেন জানান, আরিফুল ইসলাম তাকে তার আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। ২৫ হাজার টাকা জামানত রেখে আরিফকে জামিন দেয়া হয়েছে। তবে মামলাটির আপিল চলমান।

হাসপাতালের বিছানায় চিকিৎসাধীন আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘শুক্রবার মধ্যরাতে আমার ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে আমাকে মারধর করা হয়। এসময় আরডিসি (সহকারী কমিশনার, রাজস্ব) নাজিমুদ্দিন আমাকে টেনে হেঁচড়ে বাইরে বের করে নিয়ে আসেন। এরপর মাইক্রোতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আমার হাত ও চোখ বেঁধে ফেলা হয়। এসময় আমাকে এনকাউন্টার দেয়া হবে বলে একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান। আমি অনেক অনুরোধ করার পরও আমাকে অকথ্য ভাষায় গালি দিতে থাকেন মাইক্রোবাসের অন্যরা। তারা আমাকে বারবার কালেমা পড়ে নিতে বলছিলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এরপর সেই স্থান থেকে ঘুরিয়ে আমাকে ডিসি অফিসে নিয়ে আসা হয়। সেখানে অনেক কষ্টে বুঝতে পারি আমাকে ডিসি অফিসে নিয়ে আসা হয়েছে। পরে সেখানে একটি রুমে নিয়ে আবার আমাকে গালি দিতে থাকেন আরডিসি নাজিমুদ্দিন। তারা আমাকে মারধর করেন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেছেন। সবশেষে আমার চোখবাঁধা অবস্থায় ৪টি স্বাক্ষর করিয়েছেন। যেহেতু চোখ বাঁধা ছিল তাই কোথায় স্বাক্ষর করেছি আমি জানি না। এরপর তারা আমাকে কারাগারে রেখে আসেন। তারা যে আমাকে নির্যাতন করেছেন তার চিহ্ন আমার সারা শরীরে আছে।’

অন্যদিকে সাংবাদিক আরিফের জামিন আবেদিন নিয়েও ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে। অ্যাডভোকেট শাখাওয়াত হোসেন বলছেন আরিফুল ইসলাম তাকে নিযুক্ত করেছেন। তবে আরিফুল ইসলাম ও তার পরিবার বলছে তারা কোনো জামিন আবেদন করেননি। কাউকে নিযুক্ত করেননি। জামিন আবেদন কে করেছে সেটাও জানেন না।

এ বিষয়ে আরিফের বড় বোন রিমা আক্তার জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে জামিনের বিষয়টি তারা মেনে নিতে পারছেন না। তারা আরিফের জামিন আবেদন করেননি। তারা আরিফের জামিন চান না, নিঃশর্ত মুক্তি চান।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৩ মার্চ) দিবাগত মধ্যরাতে কুড়িগ্রামের বাংলা ট্রিবিউনের জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে মাদকবিরোধী অভিযানে আটক এবং পরে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানের সময় মাদকসহ আরিফুল ইসলাম রিগানকে আটক করা হয় বলে দাবি করেন অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা।

আরিফুল ইসলামের স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার বলেন, ‘মধ্যরাতে বাড়ির দরজা ভেঙে ঢুকে আরিফকে পিটিয়ে জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। কোনো মাদক পাওয়া যায়নি।’

‘মাদকবিরোধী অভিযানের’ উদ্যোগ জেলা প্রশাসন নাকি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কুড়িগ্রাম জেলা কার্যালয় নিয়েছিল, তা নিয়ে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক ও জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালকের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। গত শুক্রবার রাত ১২টার দিকে আরিফকে কুড়িগ্রাম শহরের চড়ুয়াপাড়ার বাড়ি থেকে আটকের পর সাজা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

এদিকে মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দেয়ার ঘটনায় কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনকে প্রত্যাহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।

রোববার (১৫ মার্চ) সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান।