ওসির আহবানে সাড়া দিয়ে কচুয়ায় করোনা মোকাবেলায় মাঠে ২ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক

মো. নাইম সর্দার মুকিত, কচুয়া করেসপন্ডেন্ট :

কচুয়ায় করোনার প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে করনীয় সংক্রান্তে ৫ এপ্রিল (রবিবার) সকালে উপজেলার ৮টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে মত বিনিময় করেন কচুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ওয়ালী উল্লাহ (অলি)।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কচুয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল, আলোর মশাল সামাজিক যুব সংগঠন এর সভাপতি ওমর ফারুক সায়েম, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ মেহেদী হাসান, সেফই লাইফ ব্লাড ডোনেটিং ফাউন্ডেশন এর সভাপতি সুজন মিয়া, আহব্বান রক্তদান সংস্থার সাধারন সম্পাদক মেহেদী হাসান, জাগ্রত তরুন মানব কল্যান সংস্থর সভাপতি ফাহিম আহম্মেদ, জীবনের আলোর সভাপতি অহিদুর রহমান, বহ্রিশিখা এর সাধারন সম্পাদক ফয়সাল প্রধান, নির্ভর রক্তদান সংস্থার সাধারন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, বন্ধন রক্তদান সংস্থার সভাপতি বাহার হোসেন লিটনসহ থানা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ এবং স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ। এসময় স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ কচুয়া থানায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দুরত্ব বজায় ও হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতকল্পে থানা পুলিশের সাথে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

gif maker

উপস্থিত সংগঠনের সকল সদস্যদের শুভেচ্ছা প্রদানকালে ওসি ওয়ালী উল্লাহ (অলি) কচুয়ায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গৃহীত সকল পদক্ষেপ, বাস্তবায়নকৃত সকল পদক্ষেপ সম্পর্কে আলোকপাত করেন। আগত স্বেচ্ছাসেবীকগন সংগঠকদের প্রান্তিক পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে কি রকম সমস্যা ও অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন তা তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনেন।

ওসি ওয়ালী উল্লাহ (অলি) বলেন, আমি একা বা আমার কয়েকজন কর্মকর্তার পক্ষে থানার প্রতিটি স্থানে গিয়ে সকল কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। আমাদের টিম প্রতিদিনিই উপজেলার সকল হাট-বাজারে টহলরত আছে। তার পাশাপাশি উপজেলার সকল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে একীভূত হয়ে সচেতনতা মূলক কার্যক্রম করার জন্য আহ্বান জানান তিনি। ওসি স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, তারা যে যার ইউনিয়নের প্রতিটি মসজিদের মধ্যে যেন সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে (প্রয়োজনে মাইকিং করে), সোস্যাল ডিসটেন্স বজায় রাখতে সকলকে সচেতন করা, ঔষধ দোকান সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানগুলোতে সামাজিক দুরত্ব নির্দিষ্ট করে দিতে ১ মিঃ দুরত্ব সাদা বা লাল কালি দারা চিহ্নিত করন ব্যবস্থা করা। প্রতিটি বাজারে ও অযুখানাতেও সাবান হাত ধোয়ার এবং জীবানুনাশক স্প্রে করার ব্যবস্থা করতে হবে।

/

বৈশ্বিক সংকট গ্লোবাল তা এখন দেশের যা আমাদের ঘাড়ের উপর খড়গ। এমতাবস্থায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীকে শতভাগ নিরাপদ রাখতে পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি ইউনিয়ন পর্যায়ের গ্রামাঞ্চলে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী কর্মীদের সাথে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে পারস্পারিক যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধন করার উদ্দেশ্যেই পুলিশ সুপার কার্যালয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধি ও কর্মীদের উপস্থিত হওয়ার জন্য সকলকে আহবান জানিয়েছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায় ।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত স্বেচ্ছাসেবী বন্ধুদের সাথে নিয়মিত সামাজিক কাজের পাশাপাশি অনাহুত কোভিড-১৯ এর যে কোন সংক্রামক দূর্যোগ মোকাবেলায় আগাম সতর্কতা ও প্রস্তুতি গ্রহণের প্রথম ও শেষ ধাপ সম্পন্ন করতেই শর্ট নোটিশে এ মতামত সভা গুরুত্বপুর্ন ছিলো বলে পুলিশের কর্মকর্তারা মন্তব্য করেছেন। সমন্বিত উদ্যোগে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় উপস্থিত যুবকদের আগ্রহকে সাধুবাদ জানিয়ে সকলকে ধন্যবাদ জানান কচুয়া থানার ওসি মো. ওয়ালী উল্লাহ (অলি)।

তিনি সকলকে নিজ ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে প্রান্তিক মানুষদের দিকে বিশেষ নজর দিতে, তাদের সচেতনতা সৃষ্টিতে নিয়মিত কাজ করার জন্য বলেন। তিনি মনে করেন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি আরো নজর দেয়া প্রয়োজন। তাদের কোথাও কোন সমস্যা হলে, সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত করা হলে পেজ মেসেন্জারে, ফোনে অথবা থানায় জানানোর কথা বলেন। করোনা কালের কর্মহীন এসব মানুষদের খাদ্য, চিকিৎসা ঔষধ সংকট দেখা দিলে স্থানীয় মেম্বার, চেয়ারম্যানদের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনায় রেখে যথেষ্ট খাদ্য মজুদ ও সরবরাহের ব্যবস্থা রেখেছে। সুষ্ঠ নীতিমালা অনুযায়ী তালিকা ও বন্টন হলে যতবড় দূর্যোগ আসুক তা মোকাবেলা সম্ভব। বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান ওসি ওয়ালী ‍উল্লাহ (অলি)।

ওসি যে সকল স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, সকল স্বেচ্ছাসেবক সঠিক গাইডলাইন ও একক লিংকে সমন্বিত থেকে সেবামুলক কাজের যথেষ্ট আগ্রহ প্রকাশ করছেন এবং আমাদের তথ্যমতে আপনাদের অনেকের সমাজসেবা মুলক কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে, করোনা ইস্যুতে অনেক সংগঠন সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজও করছে,যা ইতিবাচক। নিজ এলাকায় নিজেদের নিরাপত্তায় যথেষ্ট সতর্ক থেকে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে কাজ করার পরামর্শ দেন। নিজেদের আচরন ও চলাফেরায় যেন শিক্ষনীয় বার্তা থাকে, তা দেখে অন্যরা যেন অনুকরনে আগ্রহী হয়। করোনাভাইরাস আতংক নয়, ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখলেই প্রতিহত করা সম্ভব, এ বিষয়কেই গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার আহবান জানান। তিনি মনে করেন আবেগপ্রবন মানুষ পরিবারে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলেও এখনও ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে প্রায়ই ছন্দের পতন ঘটানোর সম্ভাবনা ও ঝুকি প্রবনতা থাকছেই। আগামী এক/ দুই সপ্তাহে আমাদের সকলের মারাত্মক ঝুকি আসতে পারে এরকম আশংকা মাথায় রেখে নিজেদের শতভাগ নিরাপদ ও সাবধানতা অবলম্বন করতে বাড়ীতে অবস্থান করি।

ইতোমধ্যেই কচুয়া উপজেলার স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে থানাপুলিশের পক্ষ থেকে জীবানুনাশক স্প্রে, ত্রাণ বিতরণ, সচেতনতামূলক মাইকিং, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। থানার প্রতিটা বাজার নিয়মিত মনিটরিং করে যাওয়ার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় কাচামাল ও ঔষধের দোকানে আসা ক্রেতাদের সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার বিষয়টিকে গুরত্ব দিয়ে কাজ করে চলেছে।

শুধুমাত্র নিত্য প্রয়োজনীয় দোকান ব্যতীত সকল দোকান বন্ধ রাখা, সন্ধ্যা ৬ টার আগেই ঔষধের দোকানব্যতীত সকল দোকানপাট বন্ধ করা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সবাইকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে উদ্বুদ্ধ করা, দ্রব্যমূল্যের দাম যাতে কেউ বেশি নিতে না পারে এজন্য নিয়মিত বাজার মরিটরিং করা প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছে কচুয়া থানা পুলিশ।

ওসির আহবানে সাড়া দিয়ে কচুয়ায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা ও হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতকল্পে থানা পুলিশের সাথে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে সোমবার (৬ এপ্রিল) থেকে মাঠে কাজ করছে প্রায় ২ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক।