করোনা ভাইরাস ও আমাদের সচেতনতা

কবির হোসেন মিজি :

সারাবিশ্ব জুড়ে এখন একটাই আতংক মরণঘাতী করোনা ভাইরাস। অদৃশ্য এই মহামারীর কাছে পৃথিবীর মানুষ আজ বড় অসহায়। তিন অক্ষরের একটি শব্দের কাছে পৃথিবী আজ অঁচল।

এই ছোট্ট শব্দটির কাছ থেকে রক্ষা পেতে, ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে সবাই যেনো অবুঝ, নিস্পাপ শিশুর মতো তাঁকিয়ে আছে মহান সৃষ্টি কর্তার দিকে। পৃথিবীর বড় বড় ক্ষমতাশীন রাষ্ট্রের লোক গুলো আজ বড় অসহায়। অদৃশ্য বস্তু করোনা,র সাথে যুদ্ধ কিংবা মোকাবেলা করার কোন শক্তি, সাধ্য, সামথ্যই কারো নেই।

একটি দেশ থেকে শুরু হয়ে এই ভাইরাসটি ধীরে ধীরে আজ বিশ্বের বহুদেশে তার বিস্তার ঘটিয়েছে। একজন দিয়ে শুরু হয়ে ভয়াবহ এই ছোঁয়াছে রোগে এখন পৃথিবীর কয়েক লাখ মানুষ এরদ্বারা সংক্রমিত হয়েছে।করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে করুন মৃত্যুবরণ করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজার, হাজার মানুষ।

এমন করুন মৃত্যু, যা পৃথিবীর বুকে আর কখনো ঘটেনি। কারন করোনা ভাইরাস এমন একটি ছোঁয়াছে রোগ, যা খুব দ্রæত গতিতে মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে। তাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া কোন লাশের পাশে মা, বাবা, ভাই বোন, আত্মীয়, স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী কেউই সেই লাশের দাফন করতে কিংবা দাহ করতে এগিয়ে আসতে চাননা। তাই এই মৃত্যুটি খুবই দুর্ভাগ্য জনক মৃত্যু।

যতই দিন গড়চ্ছে পৃথিবীতে ততোই করোনা,র ভয়াবহতা বাড়ছে। যার প্রতিশেধকের জন্য বিজ্ঞানীরা আজো পর্যন্ত কোন টিকা বা তেমন কোন ঔষধ আবিস্কার করতে পারেননি। কিংবা এর ব্যাতিক্রম অথবা উন্নত কোন চিকিৎসাও নেই। তাই যা হবার তাই, ই হচ্ছে। এক এক করে মৃত্যুর সিরিয়ালে ঢলে পড়ছে হাজার, হাজার মানুষ।

সারাবিশ্বের সাথে বর্তমানে বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা পর্যায়ক্রমে বেড়েই চলেছে। প্রথম যেদিন বাংলাদেশে এই মহামারী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়।

তারপর থেকেই দেশের সর্বস্তরের মানুষ আতংকিত হয়ে পড়েন। সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা, দিন, রাত প্রতিটি মুহুর্ত মানুষের মনে একটাই চিন্তা বিরাজ করছে, মরণঘাতী করোনা ভাইরাস। যে ভাইরাসটিতে একবার কেউ আক্রান্ত হলে তার আর কোন নিস্তার নেই। এতে যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কম থাকে, করোনায় আক্রান্ত বেশির ভাগ সেসব রোগীরাই মারা যাচ্ছেন। আর যারা সুস্থ্য হচ্ছেন তারা হয়তো, বিধাতার কৃপায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারনে সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন।

তিন অক্ষরের একটি শব্দের কাছে পৃথিবী আজ বড় অঁচল হয়ে গেছে। রাস্তা, ঘাট, অফিস, আদালত, ব্যাংক, বীমা, সড়ক ও জনপদ, নৌ-পথ, রেলপথ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গুলো আজ একধম ফাঁকা।

যেখানে প্রতিদিন শহরে বের হলেই সড়কে গাঁদা, গাঁদা যানবাহন এবং বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের উপস্থিতি দেখা যেতো ।

সেইসব স্থানগুলো আজ বড় শুনশান নিরবতা। সেখানে নেই কোন ছোট- বড় বিভিন্ন যানবাহনের ঝাঁঝাঁলো হুইসেল ও মানুষের আনাগোনা। একেকটি শপিং মল বোবা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে।

ফুটপাত, চায়ের দোকান গুলো বন্ধ রয়েছে। নিজেদের আত্মরক্ষায় বিভিন্ন হাসপাতাল গুলোতেও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত তেমন কোন রোগী নেই। একেকটি রাজপথ যেনো আজ ভূতুরে পরিবেশ।

যেদিন থেকে বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়েছে, সেদিন থেকে সরকার দেশবাসিকে সর্তক এবং সচেতন থাকতে নির্দেশনা প্রদান করেন। তার কয়েক দিন পর গত ২৬ মার্চ থেকে সমস্ত কিছু বন্ধ করে সরকারি ছুটির ঘোষনা দেন। কিন্তু আফসোসের বিষয় হচ্ছে সরকার যে কারনে জনগনের মঙ্গলের জন্য এই ছুটি ঘোষনা করেছেন।

তার সেই সুফল টুকু আমরা সরকারকে দিতে পারিনি। করোনায় সচেতন না হয়ে আমরা ঈদের আনন্দের মতো জড়োসড়ো হয়ে ভিড় জমিয়ে সড়ক পথ, রেলপথ এবং নৌ-পথ সহ বিভিন্ন যানবাহনে পাড়ি দিয়ে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে, যার যার নিজ গন্তব্যে ছুটে চলেছি।

আমরা এতটাই নির্বোধ যে কখনো ভেবে দেখলামনা যে, সরকার যে কারনে আমাদের হোম কোয়ারেন্টানে থাকতে ছুটি ঘোষনা করে নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা মূর্খতার পরিচয় দিয়ে সেই সচেতনতার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছি। তাই যা ঘটার তাই ঘটেছে।

আমাদের অসর্তকতা এবং অসচেসনতার কারনে দিনের পর দিন পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। যতদিন না পর্যন্ত আমরা সচেতন না হবো এবং এই মহামারী নির্মুল না হওয়া পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইনে না থাকবো। ততোদিন এই মরণঘাতী করোনা ভাইরাস থেকে আমরা কেউ রক্ষা পাবোনা।

দেশের অনেক স্থানেই দেখা গেছে মানুষজন সামাজিক দুরত্ব বজায় না রেখে কিংবা হোম কোয়ারেন্টাইন না মেনে নিজেদের মতো করে রাস্তা ঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় বন্ধু বান্ধবের আড্ডাও ছাড়তে পারছেন না অনেকে। আবার কোন কোন শ্রমিক জীবনের তাগিদে পেটের দায়ে ছোট বড় যানবাহন নিয়ে সড়কে নামছেন।

কেউ কেউ নানা অযুহাতে তেমন কোন প্রয়োজন ছাড়াই বাহিরে বের হচ্ছেন। অন্যদিকে দেখা গেছে মসজিদ গুলোতে গনজামায়াত করে নামাজ না পড়ার জন্য বলা হলেও অনেক মুসল্লিরা চুপিসারে মসজিদে এবং বিভিন্ন বাসা বাড়ির ছাদে গনজামায়াত করে নামাজ আদায় করছেন।

এমন গন জমায়েতের কারনে কিন্তু করোনা ভাইরাস সংক্রমন হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। আসলে আমরা অনেকেই বুঝতে চাইনি এই মহামারী কিভাবে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে।

আরে ভাই আপনাকে, আমাকে বুঝতে হবে। কারন কার মধ্যে কি আছে সেটা কখনো বুঝা সম্ভব না। এসব গনজমায়েতে যদি কোন একজন ব্যাক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে সেই আক্রান্ত ব্যাক্তি থেকে সেখানে যতগুলো লোক ছিলো তাদের মধ্যে কোন না কোন ব্যাক্তি ওই আক্রান্ত ব্যাক্তি থেকে করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন।

একই ভাবে সেই ব্যাক্তি থেকে অন্যান্যরাও এভাবে আক্রান্ত হবেন। আর এভাবেই করোনা সংক্রমন বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং থাকবে । তাই আমাদেরকে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। অনির্দিষ্ট কালের জন্য কষ্ট করে হলে নিজ, নিজ বাসস্থানে থাকতে হবে।

এই মহামারী থেকে রক্ষা পেতে হলে এখন আমাদের মাত্র একটাই অবলম্ভন, সেটা হচ্ছে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা । অর্থাৎ সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা, হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা, প্রশাসনের নির্দেশনা এবং স্বাস্থ্যসেবা মেনে চলা। তবেই আমরা এই মহামারী থেকে অনেকেটা রক্ষা পাবো।

তা না হলে এভাবে দিনের পর দিন করোনায় আক্রান্ত একেক জন ব্যাক্তি থেকে এটি ছড়িয়ে বিশালতা ধারন করবে। তখন চাইলও কিছুই করার থাকবেনা।

আসুননা আমরা একটু সচেতন হই। নিজে বাঁচি, পরিবার এবং দেশবাসিকে বাঁচাই। একটু কষ্ট করে সচেতনতা অবলম্ভন করি। কারন এই মহামারী করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদের এখন একটাই মাত্র অবলম্বন আর তা হলো সতর্কতা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।