চাঁদপুরে কিস্তি আদায়ে ব্যস্ত এনজিও কর্মীরা: বিপাকে ঋণ গ্রহণকারী অসহায় মানুষ

সাইদ হোসেন অপু চৌধুরী :

করোনাভাইরাসের কারণে সরকার জুন মাস পর্যন্ত সব এনজিওর কিস্তি আদায় কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে। গত ২৫ মার্চ মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটির পরিচালক মোহাম্মদ ইয়াকুব হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সনদপ্রাপ্ত ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের এ অনুরোধ জানানো হয়।

চিঠিতে বলা হয় ‘করোনা ভাইরাস এর প্রাদুর্ভাব এর কারনে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ঋনগ্রহীতাদের আর্থিক অক্ষমতার কারনে ক্ষুদ্রঋনের অপরিশোধিত থাকলেও তাদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে আগামী ৩০ জুন ২০২০ পর্যন্ত প্রাপ্য কোন কিস্তি/ঋন কে খেলাপী দেখানো যাবে না।অর্থাৎ এই সংকটময় সময়ে এমএফআই কর্তৃক ঋনগ্রহীতাদের কিস্তি পরিশোধে বাধ্য করা যাবে না।’ কিন্তু তার পরও চাঁদপুর সদর উপজেলায় সেই নির্দেশনা অমান্য করে কিস্তি আদায় কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে।

আর কিস্তির টাকা আদায়ে পূর্বের ন্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার বিভিন্ন এনজিও কর্মীরা। এমনকি কিস্তি আদায়ের জন্য গ্রাহকদের বাড়িতে গিয়ে বসে থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে আয় উপার্জন ও ব্যবসা না থাকায় কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন না ঋণগ্রহীতারা। জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে লোকজন চলাচল সীমিত করে দেওয়া হয়েছে।

ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের কর্মসংস্থান কমে গেছে। এতে দিনমজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আয় নেই বললেই চলে। এমন পরিস্থিতিতেও চলছে এনজিওর ঋণ আদায় কার্যক্রম।

এতে এনজিওর ঋণ গ্রহণকারী দরিদ্র মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। তার পরও এনজিওকর্মীরা বাড়িতে এসে কিস্তি পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছেন। এ কারণে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেক ঋণগ্রহীতারা।

কয়েকজন ঋনগ্রহিতা অভিযোগ করে বলেন, সরকার শর্ত সাপেক্ষে দোকানপাট খোলা কিংবা অন্যান্য কাজকর্ম করার অনুমতি দিলেও বিগত ২ মাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কিছুটা হিমসিম খেতে হচ্ছে।

তার উপর অফিস খুলতে না খুলতে এনজিওসহ অন্যান্য ঋন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের অফিসাররা বাড়িতে এসে কিস্তির জন্য বলা হচ্ছে। চাঁদপুর সদরের বিভিন্ন ইউনিয়নেই এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে।

অনেকে আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিরূপ মন্তব্য করেতেও দেখা যায়। তারা বলছেন, দেশের এই দূর্যোগ মুহুর্তে মানুষের দুঃখ কস্টে দিন কাটছে। তার উপর কিস্তির চাপ।

বৃহষ্পতিবার (১১ জুন) দুপুর ১২টার দিকে চাঁদপুর সদরের মহামায়া শাখার আশা এনজিও’র মাঠকর্মী ওমর ফারুক এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আশা এনজিও আন্তর্জাতিক একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান।

আমরা আমাদের গ্রাহকদের বাড়িতে যাচ্ছি, তাঁদের কিস্তি পরিশোধের জন্য বলছি। যদি কেউ কিস্তি দিতে রাজি বা আগ্রহী হন, সে ক্ষেত্রে তাঁরটা নেওয়া হচ্ছে। তবে কেউ যদি অপারগতা প্রকাশ করেন, সে ক্ষেত্রে তাঁর কিস্তি নেওয়া হচ্ছে না বা চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে না। তবে আমাদের কথার মাধ্যমে তাদেরকে বুঝিয়ে কিস্তি আদায় করা হচ্ছে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের অনুমতি নিয়েই আমরা মাঠে নেমেছি। সারাদেশে আশা’র প্রায় ২৮ হাজার অফিসার কাজ করছে। সবার কাছেই সরকারের অনুমতির ফাইল আছে। তিনি আরো বলেন, যারা কিস্তি ঠিক মত চালিয়ে যাবেন তারা পরবর্তীতে পূণরায় ঋন নিতে কোন সমস্যা হবে না’।

এই কর্মীর কথা বার্তায় বুঝা যায় যে, ঋন গ্রহীতারা যদি এই দূর্যোগের মধ্যেও ঠিকমত কিস্তির টাকা পরিশোধ না করেন, তাহলে পরবর্তীতে পূণরায় ঋন নিতে বিরম্বনার শিকার হতে হবে।

 

এদিকে ব্রাক মহামায়া অফিসের এনজিও কর্মী মোস্তাফিজুর রহমানসহ আরেক অফিসার বলেন, এবিষয়ে জেলা অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জানানোর জন্য এ প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন। তার সাথে কোন ঋনগ্রহিতাদের সাথে কোন প্রকার চাপাচাপি করা হচ্ছেনা বলে জানান এবং সারাদেশে সরকারী নির্দেশ মত সকল অফিস খোলা হয়েছে।

এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কানিজ ফাতেমা বলেন, এনজিও’র মত এসব প্রতিষ্ঠান মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি দ্বারা পরিচালিত হয়।

লকডাউন খোলার পর কিছু কিছু এনজিওর প্রধান কার্যালয় থেকে রেগুলেটরী অথরিটি হতে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার জন্য অনুমতি নেন। এবং ঋণ আদায় ও বিতরনের জন্য অনুমতি নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে।