আত্মহত্যা!

সম্পাদকীয়

আত্মহত্যাকে আবেগ নিয়ে দেখা উচিত, নাকি ঘৃণা নিয়ে দেখা উচিত সে বিষয়ে বিতর্ক করাটা কতোটা যুক্তিযুক্ত হবে সেটা একটা বড় প্রশ্ন! তবে আমরা বলতেই পারি যে, কোনো কোনো বিশেষ মুহূর্তে কতটা অসহায় হলে, বিপদগ্রস্ত হলে নিজেকে মেরে ফেলতে পারে সেটাও আসলে চিন্তার বিষয়। আবার একটা মানুষ কতটা দুর্বল হলে লড়াই না করে মরে যায়, সেটাও কিন্তু আমরা জানি না। তবে, হ্যাঁ, আত্মহত্যা মহাপাপ তাতে কোনো সন্দেহ নেই, আত্মহত্যা একধরনের মানসিক অসুস্থতা! আত্মহত্যার প্রবণতা রাতারাতি তৈরি হয় না। এটি অনেকদিন ধরেই মানুষের ভেতর থাকে। বারবার কোনো ব্যর্থতায় নিজেকে মেরে ফেলতে চাওয়া মানুষ একসময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। তখন হয়তো দেখা যায়, অনেক ছোট ঘটনাতেই ‘ওই ব্যক্তিটি’র আর বাঁচার আগ্রহ থাকে না। আত্মহত্যা এমন এক ধরনের অস্বাভাবিক মানসিক অবস্থা- কখনও কখনও কোনো ব্যক্তি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, এই ব্যাপারটা নিয়ে ‘ওই ব্যক্তি’ কারও সঙ্গে কথা বলার মতো অবস্থায়ও থাকে না।

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যাটা আজকাল খুব চোখে পড়ছে। এ প্রবণতার মূল কারণ হতে পারে- সহানুভূতি পাওয়া, আর নিজের প্রচারণা। আত্মহত্যার পর- বিষয়টি খবরের কাগজের হেডলাইন হবে, নিউজ চ্যানেলে লাইভ হবে, ফেসবুকে বড় বড় স্ট্যাটাস লেখা হবে, ভার্চুয়াল একটা ইভেন্ট হবে, একটা পোর্ট ফোলিও তৈরি হবে…। কিন্তু এটা মোটেও ঠিক নয় মানুষের জীবনের জন্যে। সত্যিই আত্মহত্যাকারী প্রশংসার যোগ্য কোনো কাজ কর না-আর এটাই যদি আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে বোঝাতে ব্যর্থ হই তবে এই ব্যর্থতার মাসুল আমাদেরই দিতে হবে।

প্রিয় সময়ে ‘ফরিদগঞ্জে ১ সন্তানের জননীর বিষপানে আত্মহত্যা’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি আমাদের আত্মহত্যার দুঃখজনক পরিস্থিতিকে আরেকবার উন্মোচন করে দিয়েছে। আমরা সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় পারিবারিক কলহের জেরে বাকিরুন আক্তার (২৩) নামে এক সন্তানের জননী বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। পারিবারিক বিষয় নিয়ে স্বামীর সাথে মনোমালিন্য হয়। এ কারণে রাগে অভিমানে সে পরিবারের সকলের অজান্তেই বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্মার মতো ঘটনা একটি পরিবারের খুবই মারাত্মক ও দুঃখজনক!

আমাদের মনে হয়, বিষপানে আত্মহত্যার মতো ঘটনা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন হ্যালুসিনেশন ও নেশার ঘোরে অনেক সময় আত্মহত্যা করে থাকে। তাছাড়াও মান-অভিমান, বিরহ-বেদনা, দারিদ্র্য, যৌতুকপ্রথা, ধর্ষণ, অপমান এসব কারণে অনেকে এই পথ বেছে নেয়।

আমরা মনে করি, আত্মহত্যা কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না। জীবনে চলতে হবে সাহসিকতার সঙ্গে, নির্ভয়ে, নির্ভারে। ছোট এই জীবনটাকে নিজ হাতে আরও ছোট মোটেও উচিত হবে না। চারপাশের সমস্যাগুলোকে ছোট মনে করে নিজের জন্য বাঁচতে হবে। অন্যের জন্যে নিজে আনন্দ থেকে বঞ্চিত হওয়া উচিত নয়। আবার এটিও ঠিক যে কিছু কিছু সমস্যা আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না। তবু আত্মহত্যা কোনো সমাধান দিতে পারে না।