জমি নিয়ে বিরোধ!

সম্পাদকীয়…

যাদের জমি রয়েছে, জমি নিয়ে বিরোধে কোনো না কোনোদিন জড়িয়েছেই। আর এ পর্যন্ত জমি নিয়ে বিরোধ যা হয়েছে, তার প্রায় ৯৫ শতাংশই রক্তের সম্পর্কের মধ্যেই হয়েছে। এ ধরনের ঝামেলা বছরের পর বছরও চলতে থাকে। বলা যায়, কয়েক যুগও যে ঝামেলা পার হয়েছে এমন উদারণের অভাব নেই। এ নিয়ে ঝগড়াঝাটি, রেষারেষি, মারামারি এমনকি খুনও পর্যন্ত হয়ে থাকে। কখনো কখনো সম্পর্কও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

প্রিয় সময়ে ‘শিবচর-জাজিরায় সীমানায় জমি নিয়ে বিরোধে গুলিতে নিহত-১, গুরুতর আহত ২’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা। জমির জন্যে কেউ কাহারেও নাহি ছাড়ি, অবশেষে গুলি ও মৃত্যু। কিন্তু আইনের আওতায় এসে সেই জমি ভোগ করা যায় কিনা সেটা একবারও ভেবে দেখে না কেউ।

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, শিবচর-জাজিরার সীমানায় শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় জমি নিয়ে বিরোধে প্রতিপক্ষের গুলিতে ফরহাদ মল্লিক (২৭) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। বুধবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে তিনি মারা যান। নিহত ফরহাদ মল্লিক উপজেলার নাওডোবা ইউনিয়নের হাজী তাহের আলী মল্লিকের কান্দি গ্রামের তৈয়ব আলী মল্লিকের ছেলে। এ ঘটনায় অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- রেজু মল্লিক (৩০), দিদার মুন্সী (২২) ও ইমামুল মল্লিক (২৫)। ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহভাজন পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ।’

এসব ঘটনা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আতঙ্কিত করে ও জমির উপর লোভ আরো বাড়িয়ে তোলে। ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মাটির জন্যে আরো করুণ পরিস্থিতির সৃষ্টি যে করবে না তেমন চ্যালেঞ্জ দেয়া যায় না!

যে কোনো কারণেই হোক, জমি নিয়ে কখনো কখনো বিরোধ দেখা দিতে পারে। সেসব ক্ষেত্রে নৈতিকতার আশ্রয় নিয়ে সচেতন মহলের সহযোগিতায় আত্মীয়স্বজনকে সাক্ষী রেখে বিরোধ নিষ্পত্তি করা যায়। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে সাধারণত যা’ দেখা যায়, তাহলো সকলেরই দাবি থাকে যে, জমি আমার চাই চাই। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি, তারপর মারামারি, তারপর খুন পর্যন্ত; যা আমরা প্রত্যাশা না করলেও ঘটনা যা ঘটার তা ঘটে যায়।

দেখা গেছে, জমি নিয়ে বিরোধের নিষ্পত্তি দীর্ঘদিনেও নিষ্পত্তি হয় না। বরং জটিলতা বাড়তে বাড়তে করুণ পরিণতির দিকে ধাবিত হয়। আমরা বাস্তবে যা দেখি তাহলো, কোনো ব্যক্তি জমি কিনেছে তো তার জমি কেউ দখল করে বসে আছে। আর মালিকানা দাবি করে জাল দলিল তৈরির করার মাধ্যমে নিজের হিসেবে দাবি তোলে। কিছু স্বাক্ষী দাঁড় করিয়ে আদালতে মিথ্যা স্বাক্ষীরও ব্যবস্থা করে। এতে ঝামেলা আরো সৃষ্টি হয়। প্রতিপক্ষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে; আর ঘটনা মর্মান্তিক পর্যায়ে চলে যায়।

তো আমরা সকলে সুখে ও শান্তিতে থাকতে চাই। জমি নিয়ে বিরোধ এড়াতে আইনের আশ্রয় নিয়ে নিষ্পত্তি করা সবচেয়ে ভালো। মারামারি খুনাখারাবিতে ভালো কোনো সমাধান হয় না। এতে জীবনের উপর তিক্ততা আরো বেড়ে যায়। আইনের জটিলতায় জড়িয়ে জীবন তখন অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। জীবন দুর্বিষহ হিসেবে চিরকাল ভুক্ত হয়, যা আমরা এই সংবাদের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আমরা আশা করবো, যথাযথক কর্তৃপক্ষ আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করবেন ও সমাধানের পর্যায়ে আসবেন।