ফরিদগঞ্জে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব!

মো. মহিউদ্দিন :

ফরিদগঞ্জে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে অবাধে ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। এতে জমির ফসল উৎপাদনের উপযোগিতা হারানোর পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে পাশ্ববর্তী রাস্তাাঘাটও। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ থাকলেও জনপ্রতিনিধিদের সংশ্লিষ্টতা থাকায় কেউ মুখ খুলছে না।

অভিযোগ রয়েছে, নিরীহ কৃষক আব্দুল মান্নানের ফসলি জমি থেকে না জানিয়ে ফ্লিমি স্টাইলে জোর করে মাটি কেটে নিচ্ছেন খোরশেদ আলম পাটোয়ারী। যা মধ্যযোগীয় বর্বরতাকেও হারিয়ে মানিয়ে নিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে তিনি এ পর্যন্ত ফসলি জমির মাটি বিক্রি করেছে প্রায় বিশ লক্ষ টাকার মত। উক্ত জমিতে মাটি কাটার নিষেধাজ্ঞায় ১৪৪ ও ১৮৮ জারি থাকলেও রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রথমে রাতের অন্ধকারে মাটি কাটা শুরু করেন খোরশেদ আলম পাটোয়ারী। পরবর্তীতে শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে দিন ও রাতে বিরতিহীনভাবে মাটি কাটার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

২০০০ সালে জমির মালিকানার জন্য মামলা দায়ের করেন আব্দুল মান্নান। অবশেষে ২০১৬ সালে কোর্ট ডিক্রি জারি করে তাকে জমির মালিকানা হস্তান্তর ও ভোগ দখল করার হুকুম দেন আদালত।

উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা একাধিকবার সেখানে গিয়ে উক্ত মাটি কাটার কাজে খোরশেদ আলমকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি প্রশাসনের অগোচরে ও রাস্তায় পাহারা বসিয়ে অবৈধ এ মাটি কাটার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ৮নং পাইকপাড়া দক্ষিন ইউনিয়নের কড়ৈতলী গ্রামের পাটোয়ারী বাড়ি সংলগ্ন কৃষি জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। খননযন্ত্র দিয়ে কাটা মাটিগুলো পিকআপে করে অন্যত্র নেওয়া হচ্ছে। খোরশেদ আলম প্রতি পিকআপ ভর্তি মাটি বিক্রি করছেন ১ হাজার ৫০০ টাকা। সেখানে মাটি কেনাবেচার কারবার করছেন স্থানীয় মেসার্স মশিউর রহমান ব্রিকফিল্ড মালিক। সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বর্গাচাষী আলমগীর ও আবু তাহের সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এই জমিগুলো চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। কিন্তু সেগুলো খোরশেদ আলম এবং তার সন্তানরার জোর করে দখল করাতে বিগত একবছর আমরা জমি চাষ করতে পারছি না। তারা ক্ষমতার জোরে আমাদেরকে চাষ করতে দিচ্ছে না।’

জমির মালিক আব্দুল মান্নান জানান, ‘সম্পুন্ন ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে খোরশেদ আলম গংরা জোর করে আমাদের জমি দখল করে খাচ্ছেন। আমি নিরুপায় হয়ে আইনের আশ্রয় নেই। আদালত আমার পক্ষে রায় দিলেও পুলিশ প্রশাসনের কার্যকর ভ‚মিকা না নেওয়াতে তারা জোর করে আমাদের ভ‚মি দখল করে মাটি বিক্রি করছে।’

এদিকে অভিযুক্ত খোরশেদ আলম’র ছেলে ফয়সাল অন্যের ভূমি দখল করে সেখানে ছোট একটি ঘর করে রাতের বেলায় সেখানে অবস্থান করে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত খোরশেদ আলম পাটোয়ারীর সন্তান ফয়সাল সাংবাদিকদের সংবাদ পেয়ে দ্রæত সেখানে উপস্থিত হন। এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে বলেন,‘এটা আমাদের জায়গা। আপনারা কেন এসেছেন? এটা বলে সে মোটর সাইকেলে করে চলে যায়।’

স্থানীয় মেম্বার আলী হায়দার পাটোয়ারী উজ্জ্বল জানান,‘এই ঘটনার পর আমি একবার উদ্যোগ নিয়েছিলাম দুই পক্ষকে বসিয়ে সামাধান করতে কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। যেহেতু বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে, আমি ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য হয়ে কী করতে পারি?’

ফসলী জমির মাটি কাটা নিয়ে ব্রিকফিল্ড মালিক জানান, যারা আমার কাছে মাটি বিক্রি করার কথা তারা আমাকে মাটি দেয়নি। শুনেছি তারা নাকি অন্যত্র মাটি দিয়েছে। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা ভাই।

ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মুহম্মদ শহীদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এ ব্যাপারে ১৬ একরের অন্ধরে ৮ একরের মালিকানা দাবীর প্রেক্ষিতে আদালত কর্তৃক আমাকে রিসিভার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি দতন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। আমি এস.আই আনোয়ারকে দায়িত্ব দিয়েছি।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন আক্তার’র সাথে মুঠো ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।’