শিক্ষক কেন ছাত্রদের চুল কাটবেন?

অপমানের সীমা আছে বৈকি! কিন্তু এটা কী ধরনের অপমানের পরিস্থিতি। এমন কী রেষ থাকতে পারে যার কারণে ছাত্রদের চুল কেটে দেয়া হয়। নাকি এমন কোনো লুকায়িত বিষয় থাকে, যার কারণে এভাবে চুল কেটে প্রতিশোধ নেয়া হয়। সত্যি শিক্ষকের মনের মধ্যে কেমন প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে যার কারণে এমন নোংরামী করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

প্রিয় সময়ে প্রকাশিত ‘এবার রায়পুরে ৬ ছাত্রের চুল কেটে দিলেন শিক্ষক’ শিরোনামে আমরা জানতে পারলাম এমন দুঃখজনক ঘটনা। তবে ছয় ছাত্রের চুল কাটার বিষয়টির কারণ খতিয়ে দেখা দরকার বলে আমরা মনে করি। সত্যি যদি কোনো কারণ থাকে অথবা না থাকে তবুও শিক্ষকের এমন নোংরামী কেউ পছন্দ করবে না বলে আমরা মনে করি।

আমরা প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জেনেছি, প্রকাশ্যে মাদ্রাসার বারান্দায় এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন, যেন সকলেই তা দেখতে পারে। যদিও বিষয়টি হাস্যকর কারো কারো কাছে; কিন্তু এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এতে করে ছাত্রদের মানহানি হয়েছে, তাদের মনে আঘাত করা হয়েছে, তাদের আত্ম সম্মান ক্ষুণœ হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো এ ঘটনার এক মিনিট ১০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল করা হয়েছে।

এ ধরনের ঘটনা সমাজ গ্রহণ করে না। সমাজে নোংরামীর প্রভাব পড়ে। এতে শিক্ষার্থীদের মনে স্কুলভীতি সৃষ্টি হয় ও পড়াশোনায় বাধাপ্রাপ্ত হয়। আমরা জেনেছি এ ঘটনায় ঐ চুল কেটে দেয়া শিক্ষার্থীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। এরপর তারা লজ্জায় ক্লাস না করেই বের হয়ে যায়।

ঐ শিক্ষক জামায়াতে ইসলামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। হতেও পারি তিনি জোর করে তার দলে টেনে আনার জন্যেই এমন ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছেন। অথবা তার সমর্থন না করায় ভিন্নভাবে তাদের সম্মানে আঘাত করেছেন। প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানা গেছে, তিনি সবসময় দলীয় প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। তার ভয়ে ঐ মাদ্রাসার অন্য শিক্ষকরাও নিরূপায়। তাহলে মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের কী করুণ পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হতে পারে?

সংবাদ মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, বিভিন্ন এংগেল থেকে জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে। অবশ্য ঘটনাটি যেহেতু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েই গেছে সেহেতু লিখিত অভিযোগের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। ঘটনাটি এখন ঐ ছয় ছাত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। সুতরাং ঐ দুষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ঐ ছয় শিক্ষার্থীর লিখিত অভিযোগের অপেক্ষা করার দরকার নেই। অবশ্য ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে হয়তো ঐ শিক্ষক আরো বেপরোয়া হয়ে যেতে পারেন; কেননা ঐ মাদ্রাসার অন্যান্য শিক্ষকরা পর্যন্ত নিরূপায় তার কাছে।

‘কেউ অভিযোগ করেনি’-এভাবে চিন্তা করে আমরা ঘটনাটি কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারি না বা এড়িয়ে যাওয়া উচিতও নয়। ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে’-এমনটা চিন্তা করে নীরব থাকলে সমাজের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে। সুতরাং সেই দিক চিন্তা করে দ্রæত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

কেননা আমরা সংবাদ মাধ্যমে জেনেছি, এর আগে ২৬ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জ রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪ শিক্ষার্থীর মাথার চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় হয়। আর অপমান সইতে না পেরে শিক্ষার্থী নাজমুল হোসেন তুহিন ছাত্রাবাসে গিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এরপরই ল²ীপুরের রায়পুর উপজেলার হামছাদী কাজীর দীঘিরপাড় আলিম মাদরাসায় ছয় ছাত্রের চুল কেটে দেয়ার ঘটনাটি দেশবাসীর কাছে আবারো দুঃখজনক বলে মনে করছি। সুতরাং বিলম্ব না করে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়াই হবে সবচেয়ে সমাধান।