শিক্ষকদের মাধ্যমে শুরু হোক সু-শিক্ষার রূপান্তর

শিক্ষকরা হলেন একটি মোমবাতির মতো যাঁরা নিজে প্রজ্বলিত হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের আলো প্রদান করেন। এনাদের মধ্যে নির্দেশনা, বন্ধুত্ব, শৃঙ্খলা এবং ভালোবাসা এই সবকিছুই পাওয়া যায়। শিক্ষকরাই দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, এনাদের জ্ঞানের আলোতেই একজন আদর্শ নাগরিকের জন্ম হয়। প্রতিবছরই বিশ্বব্যাপী ৫ই অক্টোবর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সন্মান, শ্রদ্ধা ও ধন্যবাদ জানানোর জন্য শিক্ষক দিবস পালন করা হয়। কিন্তু পালন দিবস পালন করে লাভকি যদি না সে খান থেকে নৈতিক সু- শিক্ষা না নিতে পারি।

শিক্ষার্থীরা যেন শুধু ডিগ্রীধারী না হয়ে বরং সমাজের প্রয়োজনে শিক্ষিত হয়ে দেশের কাজে ভূমিকা রাখতে হবে, এই লক্ষ্যে তাদের পাঠদান করা উচিৎ জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, দেশপ্রেম ও সুনাগরিকত্ব, মানবতা ও বিশ্বনাগরিকত্ব, নৈতিক মূল্যবোধ, সামাজিক রূপান্তরের হাতিয়ার রূপে শিক্ষা, প্রয়োগমুখী অর্থনৈতিক অগ্রগতির অনুকূলে শিক্ষা, কায়িক শ্রমের মর্যাদাদান, নেতৃত্ব ও সংগঠনের গুণাবলি, সৃজনশীলতা ও গবেষণা, সামাজিক অগ্রগতি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক প্রগতির ক্ষেত্রে শিক্ষা মুখ্য ভূমিকা পালন করবে।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, বর্তমান শিক্ষানীতি দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া হয়েছে। ফলে দেশের মধ্যে ব্যাঙের ছাতার মতো অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও শিক্ষার মান ক্রমাগত নিম্নমুখে ধাবিত হয়। মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে। বিভিন্ন কারণেই শিক্ষক সমাজ প্রত্যাশিত শিক্ষা ও সামাজিক মূল্যবোধ তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারছেন না।

শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং শিক্ষা এই তিনটির সাথে রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। শিক্ষক মূল্যবোধ বিনির্মাণের আদর্শ কারিগর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মূল্যবোধ চর্চার অনন্য কারখানা। শিক্ষার মধ্য দিয়ে সমাজ ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে মূলবোধের বিকাশ ঘটে থাকে। শিক্ষা ভালো-মন্দ বিচার করতে শিখায়। এই ভালো-মন্দের বিচার মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠে। মূল্যবোধের অনুপস্থিতিতে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবেশ ও রাজনীতিসহ সর্বত্র মানবজীবন ব্যবস্থা হয়ে উঠে অস্থিতিশীল। একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীকে মূল্যবোধে উজ্জীবিত করে সমাজকে করতে পারে আলোকিত ও উদ্ভাসিত। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কাজের মধ্য দিয়ে শিক্ষকের তত্ত্বাধানে শিক্ষার্থীকে মূল্যবোধের পরীক্ষা দিতে হয়।

আমর কাছে মনে হয় শিক্ষকের যদি শিক্ষার্থীর জীবনকে সুখী ও সমৃদ্ধশালী করে গড়ে তুলতে সর্বপ্রকার মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়া। কিন্তু আমাদের দেশে প্রকৃত কোন মূল্যবোধের শিক্ষা হচ্ছে না। নৈতিক চরিত্র গঠনের শিক্ষা আজ উপেক্ষিত। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। দেশের সচেতন তরুন প্রজন্ম আজ শিক্ষক, প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সমাজপতিসহ বয়োজ্যাষ্ঠ্যদের মুল্যবোধ সম্পর্কে জোরালোভাবে আপত্তি ও প্রশ্ন তুলছেন।

আমাদের আগামীদিনের প্রজন্ম যাতে সু-নাগরিক হিসেবে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে সক্ষম হয়, তার জন্যও তাদের মাঝে মূল্যবোধ শিক্ষার প্রসার করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। আর মূল্যবোধ লালন ও বিকাশের জন্য প্রয়োজন আদর্শের পতাকাবাহী মূল্যবোধের মূর্ত প্রতীক শিক্ষক ও শিক্ষক সমাজ। শিক্ষক তাঁর শিক্ষার্থীদের মধ্যে মূল্যবোধে সৃষ্টি করে প্রকারান্তরে সমাজ ও দেশকে মূল্যবোধে উজ্জীবিত করতে পারে।

সমাজে সে সমস্ত শিক্ষক, শিক্ষা ও মূল্যবোধ বিকাশে ভূমিকা রাখবেন তাদেরকেও সেমানের হতে হবে। আদর্শ শিক্ষকই পারেন শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে সমাজে নৈতিকতার বিকাশ ঘটাতে। শিক্ষক শিক্ষার্থীর মানসিক ও শারীরিক দুঃখ, ব্যথা, প্রয়োজন ও অসহায় অবস্থার কথা আন্তরিকভাবে উপলব্ধি করবেন এবং এই গুলোর উৎকর্ষ সাধনে ব্রত হবেন এটাই স্বাভাবিক।

শিক্ষক হলেন মূল্যবোধ সৃষ্টির প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। তাঁকে কেন্দ্র করেই পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে। শিক্ষার্থীর মাঝে মূল্যবোধের প্রসার তাঁকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। শিক্ষককে বাদ দিয়ে সমাজে মূল্য বোধ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তাঁকে বাদ দিয়ে কোন নৈতিক শিক্ষাও পরিপূর্নতা আসতে পারেনা। তিনিই মূল্যবোধ ও নৈতিকতা শিক্ষা দেন। তাই আমি মনে করি আমাদেরকে এই দায়িত্ব নিতে হবে আপনার আমারমতো শিক্ষকদের মাধ্যমে শুরু হোক সু-শিক্ষার রূপান্তর।

লেখক :
মোঃ সিদ্দিকুর রহমান প্রামানিক
প্রভাষক, চাঁদপুর ইউনানী তিব্বীয়া কলেজ
পুরানবাজার, চাঁদপুর।