এক ঘণ্টার অতিথি নেমেই দিল দৌড়

শিশুতোষ গল্প

জিএম মুছা :
আমরা সকলেই বলে থাকি অতিথি ভগবান তুল্য, কথাটা কতটা সত্য আমি সেটা বলতে পারবো না,কথাটা আমাদের এদেশে বহু প্রচলন আছে, কেহ কেহ বিশ্বাস না করলেও অনেকেই বিশ্বাস করে থাকে, বাড়িতে অতিথি মানেই ভালো কিছু একটা, হঠাৎ সেদিন এক ঘণ্টার অতিথি হয়ে এসেছিল আমার বাড়িতে একটা হনুমান,৭ মার্চ ‘২৩ ইং তারিখ দিবাগত রাতে রাতটা ছিল শবে বরাতের রাত, সারাদিন কাজকর্ম সেরে সবাই রাতে নফল ইবাদত করে ফজরের নামাজ আদায় করে অনেকেই ঘুমিয়ে থাকেন, আমিও ঠিক তার ব্যতিক্রম নই, একটু ঘুমাচ্ছিলাম।

সেই সময় এলাকার কিছু ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের সোরগোল চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পেলাম, হনুমান এসেছে হনুমান এসেছে, ওদের ডাক চিৎকারে আমার ঘুম ভেঙে গেল ,ওঠে বারান্দায় এসে দাঁড়াতে দেখলাম গেটের উপরে বসে আছে বড় একটা হনুমান, চারিদিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকাচ্ছে, বাচ্চারা কেউ কেউ যত্ন করে অথিতি কে পেয়ারা,কলা🍌আতা, বিস্কিট রুটি 🍞 ছুড়ে দিচ্ছে, অথিতি হনুমানটি খাবারগুলা না খেয়ে ধরে ধরে হাতের কাছে কোলের মধ্যে পিছনে রাখছে, আমি বুঝতে চেষ্টা করলাম হনুমানটি এমন কেন করছে, বারবার পিছনের দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে, তার দুচোখ গড়িয়ে জল পড়ছে, দু হাত দিয়ে নিজের চোখের জল মুচছে এবং ঘন ঘন লেজ নাড়াচ্ছে, বুঝতে পারলাম সে কিছু একটা বলতে চাচ্ছে,খ্যাক খ্যাক চিৎকার করে কাকে যেন ডাকছে।

একটু হেয়ালী করে বললাম কি খবর গো বহুদিন পরে বেড়াতে এলে বুঝি, কি দেখছো চারিদিকে অমন করে ফ্যাল ফ্যাল করে ,আমার কথা শুনে সে কি বুঝলো জানিনা,সঙ্গে সঙ্গে আমার দিকে খুব করুন চোখে তাকালো, আমিও কিছুটা অনুভব করার চেষ্টা করলাম, মনে মনে ভাবলাম সে বোধ হয় তার সঙ্গীকে হারিয়ে ফেলেছে,তাকে খুঁজে পাচ্ছে না, সেই দুঃখ ব্যথা বেদনা আর মনের কষ্টে তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে, সে তো কথা বলতে পারে না, তাই তার মনের ভাবটা ইশারা ইঙ্গিতে বুঝাতে চাচ্ছে, এভাবেই ঘন্টাখানেক চলল তার সেই বোবা দৃষ্টি ভঙ্গি দিয়ে কথাবার্তা, তারপর হঠাৎ করে কোথা থেকে কাক,শালিক, পেঁচা ফিঙে, দাড়কাক উড়ে এসে তার উপর এক প্রকার হামলা করে বসলো, অনাকষ্যৎ পাখিদের হামলায় টিকতে না পেরে,এক লাফে বড় একটি বড় গাছের মগডালে উঠে গেল , সেখানে একই অবস্থা, অবশেষে কোন উপায়ান্ত না পেয়ে ,পাখিদের হামলা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে, এক ঘন্টার অতিথি নেমেই দিল দৌড়।।