মনপুরা এলপিজি গ্যাস বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে

রাকিবুল হাসান,মনপুরা প্রতিনিধি :

ভোলার মনপুরা উপজেলা তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশিতে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা বিরুদ্ধে।

১২ কেজির সিলিন্ডার সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ২১২ টাকা বেশিতে বিক্রি করছেন স্থানীয় ডিলারগন।খুচরা বিক্রেতারা বিক্রয় করছেন ২৫০-৩০০ টাকা বাড়তি দামে।

নিয়মিত বাজার মনিটরিং ও উপজেলা প্রশাসন হাট-বাজার তদারকি না করায় বাড়তি দামে গ্যাস সিলিন্ডার ক্রয় করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ভোক্তারা।

তবে দামের এই আকাশ পাতাল পার্থক্যের জন্য বিভিন্ন হাট-বাজারের খুচরা বিক্রেতারা দেখাচ্ছে ডিলারদের। আর ডিলারা দেখাচ্ছে কোম্পানিকে।

জানা যায়, দেশে ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম ১২ কেজিতে ২৪৪ টাকা কমিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এপ্রিলে প্রতি ১২ কেজির সিলিন্ডারের দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৭৮ টাকা, যা মার্চে ছিল ১ হাজার ৪২২ টাকা।

এদিকে ঘোষিত নতুন দর ২ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে কার্যকর করা হলেও এখন পযন্ত ভোলার মনপুরা কোথাও নির্ধারিত ওই দামে মিলছে না ১২ কেজির সিলিন্ডার।উপজেলার সর্বত্রই গলাকাটা দামে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার।

উপজেলার হাজিরহাট বাজারের খুচরা বিক্রিতা বিপ্লব, লোকমান ও মনির জানান, বসুন্ধরা,সেনা ও ওমরা ডিলারদের কাছ থেকে ১২ কেজি গ্যাস সিলিন্ডার ক্রয় করেছেন ১৩৯০ টাকায়। তাই তারা ১৪৫০ টাকায় খুচরা বিক্রি করছেন।

উপজেলার দক্ষিন সাকুচিয়ার চায়ের দোকানদার রাসেল,সোহাগ,কোড়ালিয়া বাজার ব্যবসায়ী জাকির হোসেন জানান,শনিবার ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডার গ্যাস ক্রয় করেছেন ১৪৫০ টাকায়।

উপজেলা বাংলাবাজার একটি দোকান থেকে গ্যাসের সিলিন্ডার নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন মোঃরায়হান। তিনি জানান, ১ হাজার ৪৫০ টাকায় কিনেছেন সিলিন্ডারটি। সরকারি নির্ধারিত দামটি জানা থাকার পরও বেশি দামে সিলিন্ডার কেনার কারণ প্রসঙ্গে এই ক্রেতা বললেন, ‘আমার তো উপায় নেই। এর চেয়ে কম দামে কেউ বিক্রি করছেন না। আমরা জিম্মি অবস্থায় আছি।’

এছাড়াও উপজেলার ডিলার পয়েন্ট এর কাছাকাছি চায়ের দোকানদার ফরিদ জানান,১২ কেজি গ্যাস সিলিন্ডার কিনেছেন ১৪৫০ টাকায় বাংলাবাজার এলাকার গ্রাহকরা ক্রয় করছেন ১৪৬০ টাকায়। এদিকে উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের হোটেল ব্যবসায়ীরা ১৫০০ টাকায় গ্যাস সিলিন্ডার কিনছেন,অপরদিকে মনপুরার রামনেওয়াজ বাজার হোটেল ব্যবসায়ী, গ্রাহকরা কিনছেন ১৪৫০ টাকায়। আবার স্থান বেঁধে কোথাও এর দাম আরও বেশি বলে ভোক্তারা জানিয়েছেন।

উপজেলা দক্ষিন সাকুচিয়ার গ্যাস বিক্রেতা মের্সাস লিজা ষ্টোর স্বত্বাধিকারী নাছির উদ্দিন জামাদার বলেন, ১২ কেজির একটি সিলিন্ডারের জন্য তিনি দাম নিচ্ছেন ১ হাজার ৪৫০ টাকা। সরকারে নির্ধারিত দামের কথা উল্লেখ করলে তিনি বলেন, সরকার দাম নির্ধারণ করেছে ঠিকই, কিন্তু সরকার তো গ্যাস দেয় না, ডিলারদের কাছ থেকে ১ হাজার ৩৯০ টাকায় গ্যাস নিতে হয়। এমন অবস্থায় সরকার নির্ধারিত দামে গ্যাস বিক্রি করলে সিলিন্ডারপ্রতি ২১২ টাকা করে লোকসান গুনতে হবে।

উপজেলার বিভিন্ন বাজারের ভোক্তারা জানান, মার্চ মাস থেকে ১২ কেজি এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম কমেছে কিন্তু মনপুরায় দাম কমেনি বরং বেড়েছে। তারা মনে করেন বাজার মনিটরিং ও উপজেলা প্রশাসনের তদারকির অভাবে বসুন্ধরা,সেনা ও ওমরা গ্যাস ডিলাররা জোট বেঁধে ক্রেতাদের কাছ থেকে বাড়তি দামে গ্যাস বিক্রি করছে। ভোক্তারা দ্রুত অভিযান পরিচালনা করে সরকারি দামে গ্যাস বিক্রির দাবী তুলেন।

এই ব্যাপারে ওমরা কোম্পানীর ডিলার কিংকর চন্দ্র দে,বসুন্ধরা কোম্পানীর ডিলার মোঃ কুদ্দুছ ও সেনা কোম্পানির ডিলার মনির উদ্দিন জানান, কোম্পানীর দামে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছেন তারা। তবে গত দুইদিন ধরে তারা গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছেন না।

এদিকে ভোক্তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুক্রবার ও শনিবার দিনভর মনপুরা থানার ওসি সাইদ আহমেদ এর নের্তৃত্বে পুলিশের একটি টিম উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে গ্যাস সিলিন্ডার খুচরা বিক্রেতা ও ডিলারদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করেন। সবাইকে সরকারি দামে গ্যাস বিক্রি করার জন্য নির্দেশ দেন।
এই ব্যাপারে মনপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইদ আহমেদ জানান, ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সরকারি মূল্যে গ্যাস বিক্রির জন্য বলা হয়েছে। এরপরও তারা যদি বাড়তি দামে বিক্রি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই ব্যাপারে মনপুরা উপজেলার দায়িত্বে থাকা চরফ্যাসন উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আল নোমান জানান, দ্রুত অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।