

মোঃ আবদুল্লাহ্ শাকুর
ভোরের আকাশে হালকা আলো জেগে উঠেছে। অন্ধকারের চাদর সরিয়ে দিগন্তে ফুটে উঠছে এক নতুন দিনের সূর্য। চারপাশে তখনো মানুষের ভিড় জমেনি, গাছে-গাছে শিশিরভেজা পাতার কাঁপন, ঘাসের ডগায় জমে থাকা মুক্তোর মতো শিশির আর প্রকৃতির নীরবতার ভেতরে হঠাৎই শোনা যায় কাকের ডাক।

বাংলাদেশের গ্রামীণ প্রকৃতির এই কাক ডাকা ভোর আমাদের জীবনের এক চিরচেনা দৃশ্য। কোথাও ধানক্ষেতের ওপরে ঝাঁকে ঝাঁকে কাক উড়ছে, কোথাও আবার আধুনিক শহরের উঁচু দালানের রডের মাথায় বসে আছে একাকী কাক। দুই দৃশ্যই একই কথা বলে- “ভোর এসেছে, ওঠো, নতুন দিনকে বরণ করো।”
বাংলার গ্রামে ভোর মানেই- মসজিদের আজানের ধ্বনি, মোরগের ডাক, মুরগির কক্ কক্ শব্দ আর কাকের অমলিন ডাক। এই ডাক শুনে মনে হয় প্রকৃতি যেন আমাদের জাগিয়ে তুলছে, নতুন দিনের জন্য তৈরি হতে বলছে। কৃষক তখন মাঠের দিকে হাঁটা শুরু করে, শিশুরা বই হাতে স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়।
শহরের আকাশেও ভোরের ছবি কম সুন্দর নয়। উঁচু দালানের ফাঁক দিয়ে উঁকি মারে সকালের সূর্য। সড়ক তখনও নিস্তব্ধ, কেবল আকাশে কাকের ডাক শোনা যায়। শহরের সেই নিঃসঙ্গ কাক যেন এক অদ্ভুত আবেগের প্রতিচ্ছবি- হাজারো ভিড়ের মাঝেও জীবনের প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনো সময়ে একাকীত্ব অনুভব করে।
কাকের ডাক সাধারণ হলেও এর ভেতরে লুকিয়ে আছে গভীর ইঙ্গিত। এটি যেন মনে করিয়ে দেয়। প্রতিটি অন্ধকারের শেষে আলো আসে। প্রতিটি দুঃখের পর নতুন সম্ভাবনা অপেক্ষা করে। প্রতিটি ভোরই জীবনের নতুন সূচনা।
বাংলাদেশের প্রকৃতিতে ভোর মানেই শুধু সময়ের পরিবর্তন নয়, বরং নতুন আশার আলো। সকালের আবাহন আমাদের মনে করিয়ে দেয়- জীবন যতই ব্যস্ত হোক না কেন, প্রতিটি ভোরই নতুন করে বাঁচার আহ্বান জানায়।
একাকী কাক আর সকালের আকাশ আমাদের জন্য রেখে গেল এক বিশেষ শিক্ষা- নিঃসঙ্গতা কোনো শেষ নয়, বরং নতুন দিনের শুরু। কাক ডাকা ভোর মানেই নতুন করে জেগে ওঠা, নতুন স্বপ্ন দেখা আর নতুন জীবনের পথে হাঁটা।
লেখক পরিচিত :
সিনিয়র মেডিকেল অফিসার
তানজিম হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।
বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫








