মা ইলিশ সংরক্ষণ: একটি জাতীয় দায়িত্ব

সম্পাদকীয়

প্রিয় সময়ে ‘নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ইলিশ শিকার করলে চাঁদপুর পুলিশ সুপারের শাস্তির হুঁশিয়ারি’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি পাঠকমাত্রই নজর কেড়েছে। কেননা এ সংবাদটি একটি গুরুত্ববহ; বিশেষ করে আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশ রক্ষার ক্ষেত্রে। চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে মা ইলিশ রক্ষায় ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিনের জন্যে ইলিশসহ সবধরণের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র একটি প্রশাসনিক নির্দেশনা নয়, বরং আমাদের জাতীয় সম্পদ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। চাঁদপুর পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব পিপিএম-এর কঠোর হুঁশিয়ারি এবং জেলেদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার মাধ্যমে এ অভিযানের গুরুত্ব আরও স্পষ্ট হয়েছে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে আইনি শাস্তি এবং জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে। তবে এই নিষেধাজ্ঞার মূল উদ্দেশ্য শাস্তি দেয়া নয়; বরং মা ইলিশের প্রজনন নিশ্চিত করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে এ মূল্যবান সম্পদ রক্ষা করা।

ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ এবং চাঁদপুর এর জন্যে বিশেষভাবে পরিচিত। এ মাছ শুধু আমাদের খাদ্যাভ্যাসের অংশ নয়; এটি আমাদের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিরও একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। মা ইলিশকে নিরাপদে ডিম ছাড়ার সুযোগ না দিলে ইলিশের উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পাবে; যা’ জেলেদের জীবিকা এবং দেশের অর্থনীতির উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। পুলিশ সুপারের বক্তব্যে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে যে, আজকের এ সাময়িক ত্যাগ আগামী দিনে আরো বেশি ইলিশের সুফল বয়ে আনবে।

সরকারের পক্ষ থেকে জেলেদের জন্যে খাদ্য সহায়তা এবং বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে; যা’ এ নিষেধাজ্ঞার সময় তাদের আর্থিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবে। এটি সরকারের দূরদর্শী পদক্ষেপের একটি উদাহরণ, যেখানে পরিবেশ সংরক্ষণের পাশাপাশি জেলেদের কল্যাণের দিকেও নজর দেয়া হয়েছে। তবে এ অভিযানের সফলতা নির্ভর করছে সবার সহযোগিতার উপর। জেলে সম্প্রদায়, স্থানীয় প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া মা ইলিশ রক্ষার এ উদ্যোগ পুরোপুরি সফল হবে না।

এ নিষেধাজ্ঞা আমাদের সবাইকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়- প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা আমাদের সকলের দায়িত্ব। ইলিশ শুধু একটি মাছ নয়, এটি আমাদের জাতীয় গর্ব এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রতীক। তাই এ ২২ দিন আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। জেলেদের উচিত নদীতে জাল না ফেলা, ব্যবসায়ীদের উচিত ইলিশ কেনা-বেচা থেকে বিরত থাকা এবং সাধারণ মানুষের উচিত এ উদ্যোগকে সমর্থন দেয়া।

মা ইলিশ রক্ষার এ অভিযান শুধু চাঁদপুরের জন্যে নয়, সমগ্র দেশের জন্যে একটি উদাহরণ হতে পারে। আমরা যদি এখন সচেতনভাবে এ দায়িত্ব পালন করি, তবে ভবিষ্যতে আমাদের নদীগুলো ইলিশে ভরে উঠবে, জেলেরা উপকৃত হবে এবং আমাদের ঐতিহ্য অক্ষুণœ থাকবে। তাই আসুন, শ্লোগান দিই, ‘মা ইলিশের জন্য এক হও, নিষেধাজ্ঞা মেনে নদী বাঁচাও!’

শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫

ডায়াবেট্সি হলে কি করবেন?

শেয়ার করুন
প্রিয় সময় ও চাঁদপুর রিপোর্ট মিডিয়া লিমিটেড.

You might like

About the Author: priyoshomoy