চরভদ্রাসন খেলোয়াড়দের বুকফাটা কান্না

ফরিদপুর প্রতিনিধি :

ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার খেলোয়াড়দের বুকফাটা কান্না। যা দেখার মত কেও নেই।

আর্থিক সহযোগিতা না থাকার কারনে উপজেলার খেলাধুলা বন্ধ একপ্রকার। উপজেলার চরভদ্রাসন ইয়ং ক্লাব নামে একটি ক্লাব আছে বলে জানা যায়।

ক্লাবটি প্রায় ১৪/১৫ বছর যাবত খেলোয়াড়দের কোন খোঁজ-খবর রাখে না বলে উপজেলার সদর খেলোয়াড়েরা অভিযোগ করেন। খেলাধুলা চালু রাখার জন্য খেলোয়াড়েরা বিভিন্ন জনের কাছে বল সামগ্রীর জন্য যেতো।এতে অনেকেই খেলোয়াড়দের অপমান ও লাঞ্চিত করেছে।যা অত্যান্ত দুংখজনক ঘটনা। যখন অন্যান্য এলাকা খেলাধুলায় এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে মেধাবী খেলোয়ারা থাকতেও আমরা পিছিয়ে আছি বলে অভিযোগ করেন।

আজকে সরে জমিন ঘুরে দেখলাম,চরভদ্রাসন সরকারি কলেজ মাঠে খেলোয়াড়েরা নিজ হাতে মাঠ ঠিক করছে।২ জন লেবার সাথে নিয়ে খেলোয়াররা নিজেরাই মাঠে কাজ করছে।

চরভদ্রাসন সদরের সিনিয়র খেলোয়ার বিপ্লব শরিফ আমাদের বলেন,করোনার কারনে প্রশাসন কলেজ মাঠে বাজার বসায়। প্রায় ২ মাস পর বাজার উঠিয়ে নেয়।বাজার বসানোর কারনে মাঠের দক্ষিণ পাশে সম্পুর্ণ খেলার অনুপযোগী হয়ে পরে। আমরা খুবিই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পরি। মাঠ সংস্কারের সহযোগিতা করার জন্য বিভিন্ন জনের কাছে গেছি।সহযোগিতা না পেয়ে নিজেরাই কাজ শুরু করেছি।

চরভদ্রাসনের আরেক সিনিয়র খেলোয়াড় শরিফ বলেন, মাদক থেকে তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে খেলাধূলা। খেলাধূলায় যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তরুন সমাজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে।যা দেশ ও আমাদের উপজেলার জন্য ক্ষতিকর। আমরা যারা সিনিয়র আছি আমরা এখনও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী না।খেলা চালু রাখার জন্য এলাকার অনেকের কাছে হাতপাততে হয়।এটা নিজেদের কাছে খুবিই খারাপ লাগে। তাছাড়া আমাদের কাছে অন্যকোনও উপায় নেই। এলাকার তরুন সমাজ খেলাধুলা ছেড়ে খারাপ পথে না যায় এইজন্য আমরা হাতপেতে যা সহযোগিতা পায় তা দিয়েই খেলা চালু রাখার চেষ্টা করি।অনেকের কাছে গেলে আমাদের অপমান করে যা আমাদের খুবিই কষ্ট লাগে।

তাকে চরভদ্রাসন ইয়ং ক্লাবের কথা বললে সে বলে,১২/১৪ বছর আগে কিছু কার্যক্রম আমি দেখেছি তারপর তাদেরকে আর চোখে পরে নাই।অন্যান্য এলাকার ক্লাবগুলো দেখি ফরিদপুরে লিগ খেলে।আমাদের এলাকার ক্লাবের কর্মকর্তাদের ২০ বছর ধরে কোনও ফরিদপুরে কোনও লীগ নেয় নাই। আমাদের অন্য ক্লাবের হয়ে লীগে খেলতে হয়।আমরা খেলাকে ভালবাসি তাই মাঠ ছারতে পারি নাই। চরভদ্রাসনের সন্তান মুরছালিন বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব ১৩ জাতীয় দলে খেলছে।আমাদের চরভদ্রাসন উপজেলায় অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে যা সঠিক পরিচর্যার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক এক খেলোয়াড় বলেন, আমরা মাঠ সংস্কারের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন সুলতানার কাছে যায়।ম্যাডাম মাঠ সংস্কারের জন্য বাজার কমিটির সভাপতি আসলাম মোল্লাকে ফোন দিয়ে বলেন।তারা ১দিন পর মাঠ সংস্কার করে দিবে জানান।আস্বস্ত হয়ে অপেক্ষা করি ৭/৮দিন।কিন্তুু কোন কাজ করতে না দেখায় তারা ইউনও ম্যাঠামের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি।সরকারি বন্ধের দিন থাকায় ইউনও এর সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয় নি।তারপর আমরা বাজার কমিটির সভাপতি আসলাম মোল্যার কাছে যায়।উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার কথাগুলো তাকে বলি তখন সে আমাদেরকে বলে তোমরা তোমাদের মাঠ ঠিক করে নেও।আমরা মাঠে কিছুই করবো না আরো অনেককিছু বলে।একপ্রকার আমাদের অপমান করেন।

কলেজ ছাত্র মিরাজুল ইসলাম জানান আমরা মাঠ সংস্কারের কারো সহযোগিতা না পেয়ে আমরা নিজেরাই স্বীদ্ধান্ত নেয় আমরা নিজেরাই টাকা পয়সা দিয়ে মাঠ ঠিক করবো।আমরা খেলোয়াড়েরা কিছু টাকা সংগ্রহ করে ২ জন লেবার ঠিক করি।মাঠ সংস্কারের জন্য ১০/১৫ হাজার টাকা প্রয়োজন।অতটাকা জোগাড় করা সম্ভবপর নয়।তাই কিছুটা সংস্কার করে ফুটবল খেলতে পারি সে চেষ্টায় করেছি।

কলেজ ছাত্র খেলোয়ার জয় বলেন,খেলাধূলাকে বাচিয়ে রাখতে একটা ক্লাব প্রয়োজন। আমরা সরকার ও প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে আছি তারা যেনও আমাাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।

আমি সরেজমিনে ঘুরেই দেখেছি তরুন ছেলেরা নিজেরাই মাঠে নেমে পরেছে মাঠ সংস্কার করার জন্য।যখন টাকাখেকো মানুষরা নিজেদের পকেট ভারি করায় ব্যস্ত তখন এলাকার তরুন ছেলেরা মাদক থেকে এলাকার ছেলেদের রক্ষা করতে খেলাধুলা চালু রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদেরকে আজ অপমানিত হতে হয় যা খুবিই দুংখজনক। সত্যকার অর্থে চরভদ্রাসন উপজেলার খেলোয়াড়েরা অবহেলিত। তাদের বুকফাটা কান্না কেও শুনে না।