ইসলামে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ

মো.  রফিকুল ইসলাম :

সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ তায়ালার। আর এজন্যই আমরা তার প্রশংসা করি। তার নিকট সহায্য,ক্ষমা,প্রার্থনা এবং সর্বদা তারই উপর ভরসা রাখি। আমরা মহান প্রভুর নিকট আশ্রয় কামনা করছি। আমাদের নফসের অন্যায় আচরণ এবং খারাপ আমলের অনিষ্ট হতে। বস্তুতঃ মহান আল্লাহ যাকে হেদায়েত দান করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারেনা।

আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন পৃথবীতে এমন কেউ নেই যে তাকে হেদায়েত করবে। সুতরাং আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত কোন উপস্য নেই,তিনি একক এবং তার কোন শরিক নেই। আমরা আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-আল্লাহর বান্দা এবং প্রিয় রাসূল।

মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে সুসংবাদদাতা ভীতি প্রদর্শক,আল্লাহ তায়ালার প্রতি আহবানকারী ও আলোদানকারী প্রদীপ রূপে সত্য ইসলামসহ প্রেরণ করেছেন।

হে মুসলিম ভ্রাতাগণ!
আপনারা অবশ্যই মনে রাখবেন আল্লাহ তায়ালা উম্মতে মোহাম্মদীগণকে অন্যান্য সকল উম্মতের উপর মর্যাদা দান করেছেন এ কারনে যে তারা মানুষদেরকে সৎকর্মের আদেশ ও অসৎ কর্ম করতে নিষেধ করবে।

অতঃপর মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমরা উত্তম জাতি তোমাদের কে মানব কল্যাণে সৃষ্টি করা হয়েছে,তোমরা মানুষকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ প্রদান করবে”।
(সূরা আল ইমরান-১১০)

অপর এক আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, “তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা সৎকাজের প্রতি মানুষদেরকে আহবান ও নির্দেশ দিবে,এবং অসৎ কাজ করতে বাধাঁ প্রদান করবে। অতঃপর তারাই হবে সফলকামী।
(সূরা আল ইমরান-১০৪)।

এ সম্পর্কে মহানবী (সাঃ)-অনেক হাদীসে এ ব্যাপারে তার উম্মতদের নসিহত করে গেছেন। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ)-হতে বর্ণীত,তিনি বলেন রাসূল (সাঃ)-ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্য হতে যে কেউ কোন মন্দ কাজ দেখে,সে যেন তাকে অবশ্যই মন্দ কাজকে নিজ হাতে পরিবর্তন করে দেয়, যদি তার এ ক্ষমতা না থাকে,তবে নিজ মূখের দ্বারা পরিবর্তনের চেষ্টা করবে,আর যদি এ ক্ষমতাও না থাকে তাহলে যেন নিজ অন্তর দ্বারা এটা ঘৃণা করে। এটাই হলো ঈমানের সবচেয়ে দূর্বলতম স্তর।
(মুসলিম শরীফ)

শুধুমাত্র ভালোকাজের আদেশ ও খারাপ কাজের নিষেধ করলেই হবে না,সে অনুযায়ী নিজেও আমল করতে হবে।কেননা,এ ব্যাপারে রাসূল (সাঃ)-আমাদের সতর্ক করে গিয়েছেন।

হযরত ইবনে যায়েদ (রাঃ)-হতে বর্ণীত, রাসূল (সাঃ)-ইরশাদ করেন : কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে এনে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে,গাধা যেমন আটা পিষার সময় চাকার চারদিকে ঘুরতে থাকে হুবহু তার অনুরুপ জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়া ব্যক্তির নাড়ি-ভূড়ি আগুনের ভেতর বের হয়ে চারদিক ঘুরতে থাকিবে, এ সময় জাহান্নামের বাসিন্দারা তার কাছে একত্র হয়ে জিজ্ঞেস করবে,হে অমুক! “তুমি না আমাদের সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ করতে” তোমার এই অবস্থা কেন? তখন সে প্রশ্নোত্তরে বলবে আমি তোমাদের ভাল কাজের আদেশ ও খারাপ কাজের নিষেধ করতাম বটেই কিন্তু,আমিই খারাপ কাজে লিপ্ত হতাম,
আমি যা তোমাদের বলতাম তা নিজেই পালন করতাম না।

এ সম্পর্কে অন্য হাদীসে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ)-হতে বর্ণীতঃ-তিনি বলেনঃ-আমি রাসূল (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যদি কোন গোত্রের মাঝে কেউ পাপে লিপ্ত হয়, যদি কোন গোত্রের লোকেরা ক্ষমতা থাকা সত্তেও তাকে পরিবর্তন করেনা,তবে,তাদের মৃত্যুর আগেই আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি অবতীর্ণ হবে। (আবু দাঊদ)

হযরত হুযাইফা (রাঃ)-হতে বর্ণীত, তিনি বলেন,রাসূল (সাঃ)-ইরশাদ করেছেন : সেই সত্তার ক্বসম,যার হাতে আমার প্রাণ!
তোমরা অবশ্যই সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে বাধাঁ প্রদান করবে। অন্যথায় শীঘ্রই আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের উপর শাস্তি নিপতিত হবে অতঃপর তোমরা তার নিকট দোয়া করবে,কিন্তু,সেই দোয়া গ্রহন করা হবে না। (তীরমিযী)

পরিশেষে মহান রবের নিকট আমরা শয়তানের যাবতীয় ষড়যন্ত্র থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে যাবতীয় গুনাহের কাজ থেকে বিরত রাখেন। আল্লাহুম্মা আমিন।

লেখক পরিচিতি : মো.  রফিকুল ইসলাম, শিক্ষার্থী, ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়।

 

আমরা সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, প্রিয় সময় গুজব প্রচার করে না

২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ খ্রি. ০৮ আশ্বিন ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ০৫ সফর ১৪৪২ হিজরি, বুধবার