ছিনতাইকারীদের সংশোধনাগারে রেখে সঠিক পথের দিশা দিয়ে কাজে বাধ্য করা উচিত

সম্পাদকীয় ….

আমাদের দেশে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটা খুব বেশি আশ্চর্য হওয়ার বিষয় নয়। ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেই চলেছে। হয়তো এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে যে, যে কিনা কোনো না কোনোবার ছিনতাইয়ের কবলে পড়েনি। কম বেশি সকলেই ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, যদি কেউ ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছে, অথবা দামী কোনো কিছু হারিয়েছে।

প্রিয় সময়ে ‘শেরপুরে ছিনতাইয়ের সময়ে যুবক আটক’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটির মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম যে, ছিনতাই করে পালানোর সময় এক যুবককে আটক করা সম্ভব হয়েছে। ঐ যুবকের জন্যে এটা খুবই দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, সে পালিয়ে যেতে পারলো না। হাতেনাতে ধরা পড়ে গেলো।

আমাদের দেশে যারা ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত তারা সকলেই প্রায় যুবক। এই বয়সে তারা নষ্ট হয়ে যায়। হয়তো তারা চিনতা করে, ছিনতাই করার জন্যে কয়েকজনের দল তৈরি করে খুব কম পরিশ্রম কম সময়ে অনেক টাকা উপার্জন করতে পারবে। শুধু একটু সাহস, বুদ্ধি আর কৌশল খাটাতে হবে। ওরা সম্মিলিতভাবেই তাই করে থাকে।

যখন ছিনতাইকারীরা ছিনতাই করে তখন কীভাবে তারা বুঝতে পারে যে ঐ লোকের কাছ থেকে সহজে ছিনতাই করে পালিয়ে যাওয়া যাবে! আবার বেশ কিছু জিনিসও আত্মসাৎ করা যাবে! হয়তো মানুষের হাবভাব দেখে তারা অনুমান করে নেয়। তারপর সুযোগ বুঝে জিনিস কেড়ে নিয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়।

আমরা অতীতেও অনেক সংবাদে শুনেছি যে, ছিনতাইকারীকে গণধোলাই দিয়েছে। কেউ কেউ পুলিশের কাছে সোপর্দ করে না। তারা নিজেরাই ছিনতাইকারীকে মারধর করে পঙ্গু করে ছেড়ে দেয়। অথবা কোনো কোনো পরিস্থিতিতে ছিনতাইকারীকে প্রাণেও মেরে ফেলে। যদিও এটা অমানবিক, তবুও কারো কারো মতে এটা প্রকাশ যে, ছিনতাইকারীদের পুলিশের কাছে দিলেও তারা কোনো না কোনোভাবে ছাড়া পেয়ে আবার সেই একই রকম ছিনতাইয়ের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। সুতরাং সেসব চিন্তা করে পুলিশের কাছে দিতে চায় না। জনগণই তখন উত্তম মধ্যম দিয়ে ছেড়ে দেয়। কিন্তু আমরা মনে করি, তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ। তাহলেই আইনই তাদের বিচার করতে পারে।

আমাদের দেশের যুব সমাজ বিভিন্ন অন্যায়ের দিকে পা বাড়িয়ে জীবনকে নষ্ট করে দেয়। তার মধ্যে ছিনতাইয়ের কাজও একটি অন্যায়। এই কাজের সাথে অনেক যুবক জড়িত। আমাদের কথা হলো, তারা কোনো না কোনো পরিবারের সদস্য। একটু চেষ্টা করলে সেই পরিবারও তাদেরকে সঠিক পথে নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে হতে পারে তাদের পরিবারও ছিনতাইয়ের বিষয় জেনেও তারা ছিনতাইয়ের মতো জঘন্য কাজকে সায় দেয় পরিস্থিতির শিকার হয়ে, অথবা স্বভাববশত!

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে, শেরপুর পৌর শহরের নাগপাড়া দুর্গা নারায়ণপুর (বলের বাড়ির সামনে) ছিনতাইয়ের সময়ে যে যুবককে স্থানীয়রা আটক করেছে তারা পরে তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। শহরের নাগপাড়া দুর্গা নারায়ণপুরের বাসিন্দা সাবেক সেনা সদস্য বেলায়েত হোসেন নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলো। ঠিক সে সময় চার সদস্যের ছিনতাইকারী দল তার গতিরোধ করে এবং তার সঙ্গে থাকা নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলো। পালানোর সময়ে এক ছিনতাইকারী পানিতে পড়ে গেলে বেলায়েত হোসেন তাকে ধরে চিৎকার করলে স্থানীয়রা এসে ছিনতাইকারী সাব্বিরকে (২৩) আটক করে। পরে তাকে পুলিশে দেয়া হয়। এটা অত্যন্ত একটি ভালো কাজ হয়েছে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া!

আমরা মনে করি, এ ধরনের ছিনতাইকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা উচিত। সেই সাথে তাদের নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে সঠিক পথে ফিরিয়ে ভালো কাজে যুক্ত করার চেষ্টা উচিত। তাহলে তারাই একদিন দেশের সম্পদে পরিণত হবে। আমাদের মনে রাখা উচিত যে, এ ধরনের র্ছিনতাইকারীদের নৈতিক চরিত্রের স্খলন ঘটেছে বলেই তারা এ ধরনের জঘন্য কাজ করতে বাধ্য হয়। অতএব, তাদের প্রতি নির্মমতা প্রদর্শনের পরিবর্তে শাস্তি প্রদান করে ছিনতাইকারীদের সংশোধনাগারে রেখে সঠিক পথের দিশা দিয়ে কাজে বাধ্য করা উচিত। তাহলে দেশ থেকে ছিনতাইকারী কমে যাবে।

আমরা সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, প্রিয় সময় গুজব প্রচার করে না

০১ অক্টোবর ২০২০ খ্রি. ১৬ আশ্বিন ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ১৩ সফর ১৪৪২ হিজরি, বৃহস্পতিবার