কুমিল্লা সিটির চার কেন্দ্রে পুনঃভোট চেয়ে আবেদন

জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, কুমিল্লা: ২৯ জুন ২০২২

অবশেষে পুনঃভোটের দাবি জানালেন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদের পরাজিত প্রার্থী সদ্য সাবেক মেয় মনিরুল হক সাক্কু। নাহয় নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তিনি মামলায় যাবেন তিনি।

টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী সাক্কু প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর গত ২২ জুন শুক্রবার লিখিত আবেদন করেন। আর এ বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ২৮ জুন মঙ্গলবার সন্ধ্যায়।

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৪টি ভোট কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন এবং প্রকাশিত গেজেট স্থগিত দাবি করে মামলা করতে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে যাচ্ছেন পরাজিত মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু।

এরই মাঝে সাক্কু এ সংক্রান্ত কাগজপত্র এবং তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে তিনি আইনি লড়াই শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন।

তিনি ১০৫টি কেন্দ্রের মধ্যে নগরীর ৪২, ৭৮, ৭৯ ও ৯৭ নম্বর কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল ও গেজেট স্থগিত করে পুনরায় ভোট গ্রহণ করার আবেদন করেন।

মঙ্গলবার রাতে কুসিকের সাবেক মেয়র মনিরুল হক বলেন, পরিকল্পিতভাবে আমার ফলাফল ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা জালিয়াতি করেছে, যার তথ্য প্রমাণ আমার কাছে আছে।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন কথা দিয়ে কথা রাখতে পারেনি, এটা একটা মেরুদণ্ডহীন দুর্বল নির্বাচন কমিশন। এ কমিশনের কোনো সক্ষমতা নেই।

সাক্কু বলেন, নগরীর ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আমার এজেন্টদের ফলাফল বিবরণী না দিয়ে দ্রুত চলে যান। দিশাবন্দের নতুন ও পুরনো ভবন ভোটকেন্দ্রে ফলাফলের তালিকায় যে স্বাক্ষর ও পিন নম্বর আছে, সেটি আমার এজেন্টদের নয়। শালবন বিহার কেন্দ্রে ভোটের ফলাফলে আমার এজেন্টের কোনো স্বাক্ষর নেই। এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর এজেন্টেরও নেই। ফলাফল ঘোষণার সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার অবৈধ হস্তক্ষেপ ও অদৃশ্য রাজনৈতিক শক্তির প্রভাবে কালক্ষেপণ করা হয়েছে। যার ফলে শিল্পকলা একাডেমীতে অরাজকতা সৃষ্টি হয়।

তিনি বলেন, আমি চার কেন্দ্রের ফলাফলে কারচুপি এবং জালিয়াতি দেখে সঙ্গে সঙ্গে ওইসব কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি করেছিলাম। একই সঙ্গে গেজেট স্থগিত করারও আবেদন করেছিলাম। কিন্তু কমিশন তা আমলে নেয়নি। এখন আমি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে যাব।

এর আগে গত ২২ জুন মনিরুল হক সাক্কু প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর আবেদনে দাবি করেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা মেয়র পদে ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১০১টি ভোটকেন্দ্রের ফলাফল একটি একটি করে ঘোষণা করেন। এতে মনিরুল হক টেবিলঘড়ি প্রতীকে ৪৮ হাজার ৪৯২ ভোট পান। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত ৪৭ হাজার ৮৬৩ ভোট পান। ১০১টি ভোটকেন্দ্রে সাক্কু প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে ৬২৯ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন।

১০১টি ভোটকেন্দ্রের ফল ঘোষণার পর প্রকাশ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তা অজ্ঞাত টেলিফোন পেয়ে পাঁচ মিনিটের জন্য সময় চান। এরপর তিনি তার চেয়ার থেকে উঠে যান এবং ফলাফল স্থগিত করেন। আইন ও নিয়মবহির্ভূতভাবে বাকি চারটি ভোটকেন্দ্রের মেয়র প্রার্থীর ফলাফল স্থগিত ঘোষণা করে রিটার্নিং কর্মকর্তা কাউন্সিলর পদে ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলে পদক্ষেপ নেন। তখন সাক্কু ও তার নির্বাচনী এজেন্টরা প্রতিবাদ করেন।

এরপর রিটার্নিং কর্মকর্তা ৪৫ মিনিট ফল স্থগিত রাখেন। তারপর ফলাফল একটি একটি করে ঘোষণা না করে অঘোষিত চারটি কেন্দ্রের ফলাফল ১০১টি ভোটকেন্দ্রের প্রাপ্ত ভোটের সঙ্গে যোগ করা হয়। এতে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আরফানুল হককে ৫০ হাজার ৩১০ ভোট দেখিয়ে ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

আবেদনে তিনি বলেন, ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিন ৪টা পর্যন্ত ১০৫টি কেন্দ্র ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। ৪২, ৭৮, ৭৯ ও ৯৭ এই চারটি কেন্দ্র ব্যতিত সকল কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এরপর রিটার্নিং কর্মকর্তা অজ্ঞাত টেলিফোন পেয়ে পাঁচ মিনিটের জন্য সময় চান এবং ফলাফল ঘোষণা স্থগিত করে তিনি তার চেয়ার থেকে উঠে যান। আইন ও নিয়ম বহির্ভূতভাবে বাকি চার কেন্দ্রের মেয়র প্রার্থীর ফলাফল ঘোষণা স্থগিত করে কাউন্সিলর পদের ফলাফল ঘোষণা করা হবে বললে তিনি ও আমার নির্বাচনী এজেন্টরা প্রতিবাদ করেন।

তিনি সর্বশেষ ঘোষিত উক্ত ৪টি কেন্দ্রের ফলাফল ‘ভুয়া’ ও ‘কাল্পনিক’ দাবি করে করে তিনি আবেদনে বলেন, “আমাকে পরাজিত করার জন্য আলাদাভাবে কেন্দ্রভিত্তিক চারটি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা না করে রিটার্নিং কর্মকর্তা একসাথে ফলাফল ঘোষণা করেন। তারপর আমার টেবিলঘড়িতে ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট এবং আরফানুল হক রিফাতের নৌকায় ৫০ হাজার ৩১০ ভোট প্রাপ্ত দেখিয়ে তাকে ৩৪৩ ভোটে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করে; যা সম্পূর্ণ অবৈধ ও বেআইনি।”

এসময় রিটার্নিং অফিসার ভোট গণনার ফলাফল প্রায় ৪৫ মিনিট স্থগিত করে রাখেন বলে তিনি আবেদনে উল্লেখ করেন।

গত ২৩ জুন প্রকাশিত হয় নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট। এতে বিজয়ী হিসেবে মেয়র আরফানুল হক রিফাত, ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর এর ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।

বিধি অনুসারে নির্বাচনের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করতে হয়। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তিনি মামলা দায়েরের সব প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার রাতে এই বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, পরাজিত প্রার্থীদের অভিযোগ এটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে, কুমিল্লা সিটি নির্বাচন অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে আমরা সম্পন্ন করতে পেরেছি, নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। মনিরুল হক সাক্কুর অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ভোটের চার দিন পর ব্যাখ্যা দিয়েছে।
তিনি বলেন, “এটা নির্বাচন কমিশন দেখবে। এই বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।”