শেরপুর সদর আসনের নব-নির্বাচিত এমপি ছানুয়ার হোসেনের অভিযোগ

শেরপুর প্রতিনিধি  :

শেরপুরের নব-নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ছানুয়ার হোসেন ছানু অভিযোগ করেছেন, পড়াজিত এমপি আতিউর রহমান আতিক ব্যক্তিস্বার্থে অবাধ নিরপেক্ষ ও কারচুপিমুক্ত নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। তিনি বিএনপি-জামাতের ভাষায় কথা বলছেন। একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনকে বিতর্কিত করে সরকার ও আওয়ামীলীগকে বেকায়দায় ফেলতে চান। আজ ২২ জানুয়ারী সোমবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এমন অভিযোগ করেন।

জেলা শহরের নিউমার্কেট দোতালায় জেলা আওয়ামীলীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এমপি ছানুয়ার হোসেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।

লিখিত বক্তব্যে এমপি ছানুয়ার বলেন, বিগত ২৫ বছর ধরে সাবেক এমপি হুইপ আতিউর শেরপুরে জমিদারী কায়েম করেছিলেন। আওয়ামীলীগকে তিনি পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করতেন। সরকারী টাকায় নিজের নামে ১৫-২০টি প্রতিষ্ঠান করেছেন। অথচ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কোন সদস্যের নামে তিনি কোন প্রতিষ্ঠান করেননি।

শহরের মাধবপুর এলাকায় ৭ তলা বিশিষ্ট রাজপ্রাসাদ তৈরি করে প্রভাব খাটিয়ে সেখানে ব্যাংক, আয়কর অফিসসহ নানা সরকারী অফিস ভাড়া নিতে বাধ্য করেছেন। নামে-বেনামে তাঁর শত কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। তাঁর সন্তান ও পরিবার চরম দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছিল। স্বাস্থ্য, শিক্ষাখাতসহ প্রতিটি বিভাগে তার কথাই ছিল শেষ কথা। সরকারের টিআর কাবিখা প্রকল্প তিনি নিজের স্বার্থে যথেচ্ছা ব্যবহার করেছেন । তিনি কাউকে মানুষ মনে করতেন না। দুর্নীতির কারণে তাঁর বিরুদ্ধে কয়েকবার দুদক মামলা করেছে। সেখানেও তিনি অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে রেহাই পেয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে নব-নির্বাচিত এমপি আরও বলেন, সদরের ১৪ ইউনিয়নের মধ্যে আতিউর রহমান চরশেরপুর, কামারেরচর, চরমোচারিয়া, চরপক্ষীমারী, লছমনপুর,বলায়েরচর, বাজিতখিলা, গাজীর খামার ও পৌর এলাকায় কাঙ্খিত উন্নয়ন করেননি। তিনি প্রকাশ্যে বলতেন- এসব এলাকার ভোট তার প্রয়োজন নেই। এছাড়া নির্বাচনের মাস দেড়েক আগে আতিউরের একটি অডিও ভাইরাল হয়। সেখানে একজন নারীর সাথে তাঁর অনৈতিক সম্পর্কের নোংরা কথাবার্তা অনেকেই শুনেছেন। এসব শুনে তাঁর প্রতি কোন মানুষের শ্রদ্ধা ছিল না। দুর্নীতি, অহংকার, অপশাসন, চরম অনিয়ম ও নৈতিকস্খলনজনিত কারণে ভোটাররা তাঁকে ভোট দেননি।

সংবাদ সম্মেলনে গত শনিবার পড়াজিত এমপি আতিউর রহমান কর্মী সভায় নির্বাচনে প্রশাসনের পক্ষ-পাতিত্ব ও ফ্রিস্টাইল অনিয়মের যে অভিযোগ করেছেন তা প্রত্যাখান করে বলা হয়, প্রশাসন শতভাগ নিরপেক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করে একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দিয়েছেন। সাংবাদিক ও প্রতিদ্ব›দ্বী আরও ৫ জন প্রার্থী তা স্বীকার করেছেন। জেলায় ৪২৪টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র একটি কেন্দ্রে গোলযোগ হয়েছে এবং তা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। জনমতের প্রতিফলনকে বিতর্কিত করে নিজের ব্যর্থতার দায় ঢাকতে চান আতিউর। এমপি ছানুয়ারসহ বক্তারা বলেন, আতিউর এতটাই জনসমর্থনহীন ছিলেন যে তার নিজ ইউনিয়ন কামারিয়ার রঘুনাথপুর তাজুল ইসলাম দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে তিনি (আতিক) হেরে গেছেন। এটাই প্রমাণ করে তিনি একটি সুষ্ঠু নির্বাচনকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর রুমান, শেরপুর পৌরসভার মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম, মহিলা আওয়ামীলীগ সভাপতি শামসুন্নাহার কামাল, জেলা যুবলীগ সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

এ ব্যাপারে সাবেক এমপি আতিউর রহমানের সাথে সাংবাদিকরা প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা, বানোয়াট , ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত। তিনি আরও বলেন, আমার মুখের কথা নয়, জনগনের দাবী অবিলম্বে নির্বাচন কমিশন ও তাদের যারা সহযোগী আছেন তাদের প্রত্যাহার করা হউক। ১১৫টি ভোটকেন্দ্র সর্ম্পকে তার কোন অভিযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২৮টি কেন্দ্র সম্পর্কে তিনি অভিযোগ করেছেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের নামে কোন প্রতিষ্ঠান না হওয়ার কারণ ব্যাখা করে তিনি বলেন, নিজের টাকায় প্রতিষ্ঠান করেছি। কল্যাণ ট্রাস্টের অনুমতি ছাড়া ওই পরিবারের নামে কিছু করা যায় না। এটা আইন। জানা উচিৎ। করার জন্য চেষ্টা করেছি। পারিনি। তাদের নামে বড় বড় প্রতিষ্ঠান করবো।

উল্লেখ্য, নির্বাচনের দু’সপ্তাহের মাথায় গত শনিবার শহরের উৎসব কমিউনিটি সেন্টারে নেতাকর্মীদের সাথে নির্বাচন পরবর্তী মূল্যায়ন সভায় পরাজিত প্রার্থী জেলা আ’লীগের সভাপতি হুইপ আতিউর রহমান আতিক তার পরাজয়ের জন্য প্রশাসন ও পুলিশকে দোষারোপ করে পক্ষপাতিমুলক ও অনিয়মের অভিযোগ তুলেন।