কলেজ ছাত্রকে খুঁটির সাথে বেঁধে নির্যাতন : মধ্যযুগীয় বর্বরতা

ঘটনাপ্রবাহ

বিশেষ প্রতিবেদন

বার্তাকক্ষ : এ এক মধ্যযুগীয় বর্বরতা। কোনোপ্রকার বাছ-বিচার নেই। ঘটনার পর্যালোচনা নেই। চিলে কান নিয়ে গেছে, আর সবাই মিলে সেই চিলের পেছনে ছুটছে, আর ছুটছে। এমনই এক বর্বরোচিত ঘটনা ঘটেছে হবিগঞ্জের বাহুবলে। সেখানে এক কলেজছাত্রকে ‘চোর’ দাবি করে অনেকে মিলে কোনো প্রকার যাচাই বাছাই না করেই খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ফয়সাল মিয়া নামে এক ছাত্রকে নির্যাতন চালিয়েছে কিছু বর্বর মানুষ।

জানা গেছে, অভিযুক্ত ওই তরুণ বৃন্দাবন সরকারি কলেজের স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের শির্ক্ষার্থী। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ফয়সালকে মারধর করা হচ্ছে। এ সময় তিনি বাঁচার জন্য আকুতি করছেন। ফয়সালের পরিবারের দাবি, পরিকল্পিতভাবে ফয়সালকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।

তবে এ ব্যাপারে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন বলছে, একটি প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে প্রেমিকার স্বজনরা এমনটা করেছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশ ওই কলেজছাত্রকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে।

যে বাড়িতে ফয়সালকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে সেই বাড়ির লোকজনের দাবি, ছেলেটি অস্ত্র হাতে তাদের বাড়িতে গিয়ে বাড়ির এক মেয়ের নাম ধরে ডাকাডাকি করছিলেন। তিনি তাদের ঘরে ঢোকার চেষ্টা করলে তারা তাকে আটক করে পুলিশে দেন।

ফয়সালকে গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তাকে নির্যাতনের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

পুলিশ জানায়, ওই তরুণীর পরিবারের পক্ষ থেকে বাহুবল থানায় খবর দিয়ে জানানো হয় যে তারা চোর ধরেছেন। বাহুবল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফুয়াদ ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারেন এটা চুরি নয়, প্রেম সংক্রান্ত ঘটনা। পরে পুলিশ ফয়সালের পরিবারকে খবর দিয়ে তাকে তাদের কাছে হস্তান্তর করে।

ফয়সালের বাবা আহসান উল্ল্যা জানান, তার ছেলেকে মুঠোফোনে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ছেলের শরীরে নির্যাতনের অসংখ্য চিহ্ন আছে। ছেলে এখন পরিবারের কাউকে চিনতে পারছে না বলেও তিনি দাবি করেন।

হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বলেন, মেয়েটির পরিবার দাবি করছে- ছেলেটি তাদের ঘরে ঢোকার চেষ্টা করেন। এ কারণে তারা তাকে আটক করেন। অপরদিকে ছেলেটির দাবি- তাকে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। কোনটি সত্য তা পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, ফয়সালের বাড়ি চুনারুঘাট উপজেলায়। বাহুবল উপজেলার এক তরুণীর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ৩১ অক্টোবর রাতে ওই তরুণী মুঠোফোনে ফয়সালকে ডেকে তাদের বাড়িতে নেন। এরপর তার আত্মীয়-স্বজন ‘চোর’ আখ্যা দিয়ে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ফয়সালকে নির্যাতন করেন।

অথচ দেশে আইন আছে, আছে বিচার প্রশাসন। একজন চোর ধরা পড়লেও তাকে আইনের কাছে সোপর্দ করা উচিত, এটা যেনো আমরা ভুলেই যাই। আমরা নীলফামারীতে দেখেছি এমনই আরেকটি অমানুষিক বর্বর কান্ড, যেখানে কোনো প্রকার যাচাই বাচাই না করেই শহীদুন্নবী জুয়েল নামে এক যুবককে ‘কোরআন অবমাননা’র অপবাদে মেরে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এটাও এক ধরনের বর্বরতা।

প্রাথমিক তদন্তে এ পর্যন্ত শহীদুন্নবী জুয়েল-এর নামে অপবাদের কোনো প্রমাণ পায়নি পুলিশ। বরং এলাকার মানুষ জানায়, শহীদুন্নবী জুয়েল নামাজি ছিলেন। কিন্তু তাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মুহূর্তেই হাজার হাজার জনতা মিলে মারধর করে মেরে নির্মমভাবে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে।

আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। আমরা অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করবো না। কাউকে নির্যাতন করবো না। কারণ, আজ কাউকে নির্যাতন করলে একদিন অবশ্যই নিজেও সেই নির্যাতনের শিকার হতে হবে, কেউ আপনাকে সাহায্য করবে না। সুতরাং সময় থাকতে সচেতন হওয়া আবশ্যক।

আমরা সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, পাঠকের আস্থাই আমাদের মূলধন

০২ নভেম্বর ২০২০ খ্রি. ১৭ কার্তিক ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪২ হিজরি, সোমবার