বছরঘুরে আবারো চলে এসেছে ভালোবাসা দিবস। নব্বই দশকের আগে বাংলাদেশে ‘ভ্যালেন্টইন্স ডে’ উদযাপনের কথা তেমন একটা শোনাই যায়নি। এ রকম একটি দিন যে পশ্চিমা দুনিয়ায় পালিত হয়, সেই খবরও জানতেন খুব কম মানুষ।
বাংলাদেশে ‘ভালোবাসা দিবস’ উদযাপন যিনি চালু করেন তিনি হচ্ছেন সাংবাদিক শফিক রেহমান।
১৯৯৩ সালে তার সম্পাদিত যায়যায়দিন পত্রিকায় প্রথম এই দিনটিকে উপলক্ষ করে বিশেষ ‘ভালোবাসা সংখ্যা’ বের করেছিলেন তিনি। দিনে দিনে সে ভালোবাসা দিবস বাংলাদেশে রূপ নিয়েছে রীতিমত উৎসবে।
এ প্রসঙ্গে ২০২০ সালে বিবিসি বাংলাকে সাংবাদিক শফিক রেহমান বলেন, ১৯৯৩ সালে আমি ঢাকায় যায়যায় দিন পত্রিকাটি প্রকাশ করি। সে বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন্স ডে সামনে রেখে আমরা একটি বিশেষ সংখ্যা বের করার পরিকল্পনা করি এবং পাঠকদের কাছে লেখা আহ্বান করি। আমি তখন বলেছিলাম, একটি দিনে প্রতিটি মানুষের অন্তত সবার কাছে ভালোবাসাটা প্রকাশ করা উচিত। ভালোবাসা দিবস শুধু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নয়, সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া উচিত। অর্থাৎ বাবা-মার সঙ্গে ছেলে মেয়ের, দাদা-দাদির সঙ্গে নাতি-নাতনির, এমনকি বাড়িওয়ালার সঙ্গে ভাড়াটিয়ার। পুলিশের সঙ্গে পাবলিকের, যদি সম্ভব হয়। আমি মনে করেছি এতে দেশে সহিংসতা কমে আসবে।
তিনি আরো বলেন, আমি তখন পাঠকদের কাছে তাদের অভিজ্ঞতা চেয়ে পাঠালাম এবং আমি বিপুল সাড়া পাই। বলতেই হবে, বাঙালি আসলেই প্রেমিক। নইলে এত লেখা আমরা কেমন করে পেতাম।
ভ্যালেন্টাইন্স ডে কেন বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবস নামে চালু করলেন সে প্রশ্নের উত্তরও দেন শফিক রেহমান। তিনি বলেন, আমি বহুবছর লন্ডনে থাকার সুবাদে জানতাম, সেখানে কীভাবে ভ্যালেন্টাইন্স ডে উদযাপিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এ নামের পরিবর্তে ভালোবাসা দিবস দিয়েছিলাম ইচ্ছে করে। ভ্যালেন্টাইন্স ডে বললে অনেকে বলবে এটা খ্রিস্টানদের ব্যাপার। ধর্মকে জড়িয়ে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হতো তাহলে। যে সপ্তাহে আমাদের ভালোবাসা সংখ্যা বের হয়, ওই একই সপ্তাহে বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন তাদের প্রথম ভালোবাসা সংখ্যা প্রকাশ করে। সেজন্য অনেকে বলেন, আমি টাইম ম্যাগাজিনের চেয়ে একটু এগিয়ে ছিলাম। আমি কিন্তু কখনই ভাবিনি এ ভালোবাসা দিবস এত বড় রূপ নেবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে অন্য যেসব উৎসব হয়, সেগুলো হয় ধর্মীয় নয়তো রাজনৈতিক। অথবা নববর্ষের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু ভালোবাসা দিবস ছিল সেদিক থেকে আলাদা। এখন অনেকেই ১৪ ফেব্রুয়ারিতে বিয়েও করছে। এই দিনটি বাংলাদেশে অনেক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। যশোরে এক দিনেই বিক্রি হয় ১২ কোটি টাকার ফুল। আমার ধারণা এটি আরও বড় হবে। এটাকে আমি পারিবারিক রূপ দেবার চেষ্টা করেছি।