করোনা পরিস্থিতি ও আমাদের দায়িত্ববোধ

অ্যাড. নাজমা আক্তার :

মরণঘাতী করোনা ভাইরাসে কাঁপছে ঘোটা বিশ্ব। বৈশ্বিক এই মহামারীর কাছে পৃথিবীর মানুষ আজ বড় অসহায়। সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা অবধি মানুষের মনে একটাই ভয় কাজ করছে। আর তাহলো মরণঘাতি এই করোনা ভাইরাস।

‘করোনা’-তিন অক্ষরের এই শব্দটি যেমনিভাবে লাখো মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছেন, তেমনি তার অদৃশ্য শক্তির কাছে পরাজিত করেছেন সমস্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানকে। এজন্য এই মরণঘাতি করোনাকে প্রতিহত করার জন্য কোন ভ্যাকসিন বা টিকা আজো আবিস্কার হয়ে উঠেনি।

কিছু কিছু তৈরি হলেও তা পুরোপুরি ভাবে সফলতার মুখ দেখেনি। তাই মানুষ এই তিন অক্ষরের শব্দটির কাছে আজ বড় অসহায়। এখন এই মহামারী করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদের সর্তক, সচেতনতা এবং সৃষ্টিকর্তার কৃপা ব্যধিত কোন পথই খোলা নেই ।

সারাবিশ্বের সাথে বর্তমানে বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা পর্যায়ক্রমে বেড়েই চলেছে। প্রথম যেদিন বাংলাদেশে এই মহামারী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়। তারপর থেকেই দেশের সর্বস্তরের মানুষ আতংকিত হয়ে পড়েন। সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা, দিন, রাত প্রতিটি মুহুর্ত মানুষের মনে একটাই চিন্তা বিরাজ করছে, মরণঘাতী করোনা ভাইরাস। যে ভাইরাসটিতে একবার কেউ আক্রান্ত হলে তার আর কোন নিস্তার নেই। এতে যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কম থাকে, করোনায় আক্রান্ত বেশির ভাগ সেসব রোগীরাই মারা যাচ্ছেন। আর যারা সুস্থ্য হচ্ছেন তারা হয়তো, বিধাতার কৃপায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারনে সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন।


যতই দিন গড়চ্ছে পৃথিবীতে ততোই করোনা,র ভয়াবহতা বাড়ছে। যার প্রতিশেধকের জন্য বিজ্ঞানীরা
আজো পর্যন্ত কোন টিকা বা তেমন কোন ঔষধ আবিস্কার করতে পারেননি। কিংবা এর ব্যাতিক্রম অথবা উন্নত কোন চিকিৎসাও নেই। তাই যা হবার তাই, ই হচ্ছে। এক এক করে মৃত্যুর সিরিয়ালে ঢলে পড়ছে হাজার, হাজার মানুষ।

এমন করুন মৃত্যু, যা পৃথিবীর বুকে আর কখনো ঘটেনি। কারন করোনা ভাইরাস এমন একটি ছোঁয়াছে রোগ, যা খুব দ্রুত গতিতে মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে। তাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া কোন লাশের পাশে মা, বাবা, ভাই বোন, আত্মীয়, স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী কেউই সেই লাশের দাফন করতে কিংবা দাহ করতে এগিয়ে আসতে চাননা। তাই এই মৃত্যুটি খুবই দুর্ভাগ্য জনক মৃত্যু।

দেশের এই সংকটময় মুহুর্তে সচেতনতার জন্য হোমকোয়ারেন্টাইনে থাকতে গিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। যা একাত্তের যুদ্ধের পর থেকে বাংলাদেশে এমন কোন নজরবিহিন মহামারীর ঘটনা ঘটেনি। করোনা ভাইরাস সচেনতায় বেশি অভাবগ্রস্ত হয়েছেন মধ্যবিত্ত ও নিন্ম আয়ের মানুষ। সমস্ত কাজ কর্ম বন্ধ থাকায় এসব নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবার গুলো বড় অসহায় হয়ে পড়ে চাপা কষ্টে দিন পার করছেন।

আমি বলছিলাম করোনা পরিস্থিতি ও আমাদের দায়িত্ববোধের কথা। পাঠক আমাদের দায়িত্ববোধটা হলো এটাই যে, মহামারী করোনা ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধে বর্তমানে দেশর চলমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ খুবই অসহায় হয়ে পড়েছেন। দেশের এই সংকটময় মুহুর্তে এসব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাই হচ্ছে আমাদের দায়িত্ববোধ ও কর্তব্য। বিশেষ করে সমাজে আমরা যারা বিত্তবান রয়েছি, যাদের সামর্থ্য রয়েছে, আমরা যদি এই দুর্যোগ মুর্হুতে সমাজের অসহায় পাশে দাঁড়াই তাহলে হয়তো এই মহা বিপদে নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবার গুলো খাবারের অভাবে চাপা কষ্টে দিনপার করতে হবেনা। যেমন আমি আমরা সামর্থ অনুযায়ী চেষ্টা করছি কর্মহীন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে। মানুষ মানুষের জন্য এমন মানবতাকে বুকে লালন করেই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মানুষকে সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি বা করে যাবো। আমি মনে করি আমার কারনে যদি কম করে হলেও দুই হাজার পরিবারও খাদ্য সহায়তা পায়। তাহলে ৫ জন বিত্তবান লোক হলে দশ হাজার লোক তাদের খাদ্য সহায়তা পেয়ে উপকৃত হবে।

বলেছিলাম আমার মতো যদি এভাবে সমাজের আরো আট দশজন বিত্তবান লোক মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাদের পাশে এসে দাঁড়াই তাহলে হয়তো তাদের দারা আরো দশ হাজার অসহায় পরিবার উপকৃত হবে। পাড়া প্রতিবেশি কিংবা মানুষ হয়ে মানুষের খোঁজখবর রাখা আপনার আমার সকলেরই দায়িত্ব। আপনার নিকটতম কোন লোক খেয়ে আছে কিনা সেটাও কিন্ত একজন প্রকৃত মানুষ হিসেবে আপনার আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আমার আহবান আসুন দেশের এই কঠিন মুর্হুতে আমরা সকলে সত্যিকারের মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াই। অসহায় মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাদের ক্ষুধা নিবারণ করি। একই সাথে সবার প্রতি অনুরোধ এই মহামারী থেকে রক্ষা পেতে হলে আমরা সকলে সচেতনতা অবলম্ভন করি। মাস্ক ব্যবহার সহ সকল স্বাস্থবিধি মেনে চলি। অতি প্রয়োজন ছাড়া বাহিরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকি। তবেই আমরা এই মহা দুর্যোগ থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাবো।

লেখক পরিচিতি : সমাজ সেবক ও সংস্কৃতি ব্যক্তি অ্যাড. নাজমা আক্তার
এম ডি : নাজ মিউজিক সেন্টার। ঢাকা মিরপুর।