ত্রাণ নয় পরিত্রাণ চাই

মিজানুর রহমান রানা :

সারা বিশ্ব এখন করোনা আক্রান্ত। চীন থেকে শুরু হয়ে এই অপ্রতিরোধ্য ভাইরাস ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে এখন বাংলাদেশে।

বাংলাদেশে আজ ৮ মে ২০২০ খ্রি. (শুক্রবার) পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১২,৪২৫ জন। এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে ১৯৯ জন এবং ১,৯১০ জন সুস্থ হয়েছেন সরকারি হিসাব মতে।

আজকের বিষয় কোনো পরিসংখ্যান নিয়ে নয়। আজকের বিষয় হচ্ছে আমাদের সচেতনতা নিয়ে। সরকার ঘোষণা দিয়েছে, আগামী ১০ তারিখ হতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলবে, মসজিদে সচেতনতা মেনে জামাত উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও বেশিরভাগ মানুষ ভয়ে, সচেতনতায় মসজিদে যেতেও ভয় পাচ্ছে। ভয় পাচ্ছে হাট-বাজারে, জনসমাগমে যেতে।

তবে দেখা যাচ্ছে, এর বিপরীতেও কিছু মানুষ আছেন, যারা মূলত এই করোনা ভাইরাস সম্পর্কে কিছুই জানে না বা না জানার ভাণ করে তাদের ইচ্ছেমতো চলাফেরা করছে। এখন ভেবে দেখার বিষয় হচ্ছে, একজন মানুষকে কোনো দেশের সরকার বিপদ থেকে ২৪ ঘণ্টা পাহারা দিয়ে রাখতে পারবে না। সরকার দেশের মানুষকে করোনা সম্পর্কে জাগিয়ে তুলতে অনেক ব্যর্থ প্রয়াস হাতে নিয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে সফল হয়েছে, আবার কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের অসচেতনতার জন্যে তা ভেস্তে গেছে।

এখন আসি ত্রাণ প্রসঙ্গে। আমরা বাঙালি জাতি মূলতঃ ত্রাণে ও দান গ্রহণে অভ্যস্ত। আমাদের দেশের মানুষের একটা অভ্যাস আছে, যারা ‘সরকার খাওয়াবে’ এই আশায় বসে থাকেন। কিছু মানুষ আছেন, যারা লাখ লাখ টাকা উৎকোচ দিয়ে সরকারি চাকুরি খুঁজেন, এবং সেটা পিয়নের চাকুরি হলে চিন্তা নেই। তাদের আশা, একটা সরকারি চাকুরি পেয়ে গেলেই হয়, তারপর সারাজীবন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বসে বসে খাও। কোনো চিন্তা নেই।

হ্যাঁ, আমাদের এটা একটা মজ্জাগত অভ্যাস। আমরা কাজ করবো না। আমরা সরকারের ত্রাণের আশায় বসে থাকবো। তারপর পেলেও পাইনি বলবো, আবার না পেলে তো কথাই নাই। সরকারের চৌদ্দগুষ্টি উজাড় করে দেবো। মূলত, আমাদের উচিত, ত্রাণ নয়, আমরা এই ত্রাণ প্রথা থেকে পরিত্রাণ চাই। কোনো আমরা ত্রাণ নেবো? আমরা কোনো অপরের কাছে হাত পাতবো? আমরা কোনো স্বাবলম্বী হবে না? কোনো দুঃসময়-দুর্দিনে আমরা একে অপরের কাছে নত হবো? আমরা প্রতিনিয়ত যা-ই রোজগার করি না কেনো আমরা কেনো তার কিছু অংশ সঞ্চয় করছি না!

হ্যাঁ, দুঃসময়ে তারাই সাহায্য নিতে পারে, যারা মূলত একেবারে সর্বহারা- মানে যাদের একেবারেই বেঁচে থাকার কোনো অবলম্বন নেই। যাদের বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন নেই অসহায় মানুষ। এরা সাহায্য নিতে পারে। এদেরকে আমরা যারা বিত্ত¡বান রয়েছি, তারা অবশ্যই সাহায্য করবো। এটা তাদের হক। আমরা অবশ্যই তাদের জন্য কাজ করবো।

কিন্তু যাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন থেকেও ‘নাই’ ‘নাই’ করে তাদের প্রয়োজন ত্রাণ নয়, আমরা এই কঠিনতম সময়ে করোনা ভাইরাস থেকে পরিত্রাণ চাই- এমন একটি চিন্তা করা। যাতে করোনা নির্মূল হয়, আর আমাদেরকে অসহায়ভাবে ত্রাণের আশায় বসে থাকতে না হয়। কারণ ত্রাণের জন্যে দীর্ঘ লাইনে থেকেও অনেক করোনা আক্রান্ত হবার ঝুঁকি রয়েছে। সুতরাং আমরা ত্রাণ চাই না, আমরা করোনা থেকে পরিত্রাণ চাই।

পরিশষে বলতে চাই, আসুন আমরা সবাই সচেতন হই। আমরা হাটে-বাজারে প্রয়োজন ছাড়া যাবো না। প্রয়োজন ছাড়া নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঘর থেকে অপ্রয়োজনে বের হবো না। আর যদিও বের হই তাহলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মুখে মাস্ক পরে বের হবো। নিজেও ভালো থাকবো সমাজ ও রাষ্ট্রকেও ভালো থাকতে সহায়তা করবো।

লেখক : সাংবাদিক ও সমাজকর্মী।