নাকে খত দেওয়ায় অপমানবোধ, খুন হন সিদ্দিকুর

সাইদ হােসেন অপু চৌধুরী, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট :

চাঁদপু‌রের শাহরাস্তিতে ড্রামে লাশ পাওয়া যুবকের হত‌্যাকারী অাট‌কের বিষ‌য়ে সংবা‌দ স‌ম্মেলন ক‌রে‌ছে পিবিআই।

১৮ অ‌ক্টোবর সকাল সা‌ড়ে ১১টায় শহ‌রের পি‌পিঅাই কার্যাল‌য়ে অনু‌ষ্ঠিত সংবা‌দ স‌স্মেলনে লি‌খিত বক্তব‌্য পাঠ ক‌রেন অ‌তি‌রিক্ত পু‌লিশ সুপার শংকর কুমার দাস।

লি‌খিত বক্ত‌ব্যে উ‌ল্লেখ‌্য পিবিআই চাঁদপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শংকর কুমার এর নেতৃত্বে পিবিআই হেডকোয়াটার্র্সের সহযোগিতায় ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মৃত সিদ্দিকুর রহমানের কললিস্ট পযার্লোচনা করে একটি মোবাইল নাম্বারকে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হয়। উক্ত মোবাইল নাম্বারের সূত্র ধরে তদন্ত কার্যক্রম অগ্রসর হতে থাকে। একপযার্য়ে উক্ত নাম্বারের রেজিস্ট্রেশনকারীকে সনাক্ত করা যায়। পরবতর্ীতে দেখা যায় যে, উক্ত সিমটি কয়েকজনের হাত বদল হয়। আসামী নূরে আলম উক্ত সিমটি তার এক বন্ধুর নিকট হতে সুকৌশলে সংগ্রহ করে অপর আসামী তার বড় ভাই সারওয়ার আলমকে দেয়।

গত ১৬/১১/২০২০খ্রিঃ তারিখ নুরে আলমকে গ্রেফতারের পর সে জানায় যে, ৫/৬ মাস আগে তার বড় ভাই সারওয়ার আলম তাকে একটি ফেইক (বেনামী) সিম সংগ্রহ করে দিতে বলে এবং এই জন্য তাকে ৫০০/- টাকা দেয়।

নুরে আলম আরো জানায় যে, গত ০৯/১১/২০২০খ্রিঃ তারিখ রাত অনুমান ০৮ঃ০০ ঘটিকার সময় তার বড়ভাই সারওয়ার আলম তাকে মোবাইলে পদুয়ার বাজার পেট্রোল পাম্পে যেতে বলে এবং সেখানে বড় ভাইয়ের একজন বন্ধু একটি মোটর সাইকেল নিয়ে আসবে, মোটর সাইকেলটি মামার বাড়িতে রেখে আসার জন্য বলে।

বড়ভাই সারওয়ারের কথা মত সে মোটর সাইকেলটি বড় ভাইয়ের বন্ধুসহ মামার বাড়িতে রেখে আসে। নুরে আলমের দেখানো মতে মোটর সাইকেলটি উদ্ধার করে দেখা যায় যে, উক্ত মোটর সাইকেলটিই মৃত সিদ্দিকুর রহমানের।

পরবতর্ীতে সারওয়ার আলমকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবদে সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানায় যে, মৃত সিদ্দিকুর রহমানের বাড়ির পিছনের দিকে আসামী সারওয়ার আলমদের বাড়ি। মৃত সিদ্দিকুর রহমানের বাড়ির উপর দিয়ে কোনরকমে আসামী সারওয়ার আলমদের আসা-যাওয়া করতে হয়। আসামী সারওয়ার আলম সিদ্দিকুর রহমানের নিকট আসা-যাওয়ার পথের জন্য ১০ফুট রাস্তা দাবী করে। এজন্য কয়েকবার সালিশ বৈঠকও হয়। কিন্ত মৃত সিদ্দিকুর রহমান রাস্তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়।

অনুমান ০৪ বছর আগে স্থানীয় এক সালিশ বৈঠকে আসামী নুরে আলম, সারওয়ার আলম এবং তার আপন চাচাকে মৃত সিদ্দিকুর রহমানের প্ররোচনায় সালিশদারগণ তাদের নাকে খত দেওয়ায়। এতে তারা চরম অপমান বোধ করে। সেই থেকে আসামী সারওয়ার আলম মৃত সিদ্দিকুর রহমানের উপর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে।

পরিকল্পনা মতে সে, সিম সংগ্রহ করে এবং বাসা ভাড়া নেয় এবং গত ০৯/১১/২০২০খ্রিঃ তারিখ পূর্বপরিকল্পিতভাবে উক্ত সিম হতে সন্ধ্যার সময় মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বাসায় ইলেকট্টিকের কাজ করাবে বলে সিদ্দিকুর রহমানকে ফোন করে বলে আমানিয়া হোটেলের সামনে থাকতে। সেখান হতে তার লোক গিয়ে বাসায় নিয়ে আসবে। সিদ্দিকুর রহমানকে আসামী সারওয়ার আলমের সহযোগি পরিকল্পনা মত তার বাসায় নিয়ে আসে।

বাসায় আসার সাথে সাথে দরজা বন্ধ করে তার হাত পা বেধে ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে পেটানো হয় এবং রাতের এপর্যায়ে ছোরা দিয়ে হত্যা করা হয়। পরের দিন ১০/১১/২০২০খ্রিঃ তারিখ সিদ্দিকুর রহমানের লাশ ড্রামের ভিতরে ঢুকিয়ে একটি পিকআপ ভেনে করে উল্লেখিত স্থানে ফেলে পালিয়ে যায়।

আসামী সারওয়ার আলমের দেখানো মতে তার ভাড়া বাসায় গিয়ে বাসার তালা খুলে বাসার ভিতরে প্রবেশ করে হত্যা কাজে ব্যবহৃত ০২(দুই)টি ছোরা, ০২(দুই)টি ক্ষুর, ০২(দুই)টি ক্রিকেট স্ট্যাম্প, আসামী সারওয়ার আলমের রক্ত মাখা ০১টি জিন্সের প্যান্ট, ০১টি গেঞ্জিসহ কাপড়-চোপর, মৃত সিদ্দিকুর রহমানের জুতা(সু) এবং রক্ত মাখা কাপড়-চোপর ও মোটর সাইকেলের চাবিসহ বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়।

আমরা সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, পাঠকের আস্থাই আমাদের মূলধন

আপডেট সময় : ০৬:৪৪ পিএম

১৮ নভেম্বর ২০২০ খ্রি. ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ০২ রবিউস সানি ১৪৪২ হিজরি, বুধবার