নূরুল্যাবাদে ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর বিরুদ্ধে একইসাথে সরকারী দুই প্রতিষ্ঠানে চাকুরী ও বেতনভাতা উত্তোলনের অভিযোগ

নওগাঁ প্রতিনিধি :

নওগাঁর মান্দা উপজেলার ১০ নং নূরুল্যাবাদ ইউনিয়নের চকহরিনারায়ন গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের দুই প্রতিষ্ঠানের বেতন ভাতা ভোগ করার অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ও মহাপরিচালক কারীগরী শিক্ষা অধিদপ্ত এর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন স্থানীয় মোঃ সিদ্দিকুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলম ওই গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের ছেলে। তিনি উপজেলার ১০ নং নূরুল্যাবাদ ইউনিয়নের চকহরিনারায়ন দাখিল মাদরাসার (সংযুক্ত ভোকেশনাল) ড্রেসমেকিং ল্যাব এবং ১০ নং নূরুল্যাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ।

তথ্যানুসন্ধানে উঠে আসে, ২০০৩ সালের ১লা মাচ থেকে চকহরিনারায়ন দাখিল মাদরাসার (সংযুক্ত ভোকেশনাল) ড্রেসমেডিকং ল্যাব সহকারী হিসাবে যোগদান করেন জাহাঙ্গীর আলম । প্রতিষ্ঠানের কাগজ কলমে সেখানেই নিয়মিত অফিস ও করছেন তিনি।২০১৬ সালে নির্বাচনে অংশ গ্রহনের জন্য প্রতিষ্ঠান থেকে অনুমতি পত্র নেওয়ার নিয়ম থাকলেও সেটি তিনি করেননি।

২০১৬ সালের স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ইউপি মেম্বার পদে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে ভোটে জয়লাভ করেন জাহাঙ্গীর আলম । পরবর্তীতে যথারীতি জাহাঙ্গীর উভয় প্রতিষ্ঠানের হাজিরা খাতা উপস্থিত দেখিয়ে সরকারী বেতনভাতা উত্তোলন করে আসছেন। তার স্থানীয় প্রভাবের কারণে কেই মুখ খুলেনা তার সুযোগ নিয়ে এসব অপকর্মে অনৈতিক কাজ করে যাচ্ছেন চোখের আড়ালে। অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলমের সরকারী ইনডেক্স নং ১৩১৫১০৬৬ থেকে প্রতিমাসেই নিয়মতি ভাবে সরকারী কোষাগার থেকে বেতন তুলে নিয়েছেন তিনি।

প্রতিষ্ঠানের প্রধান মাদ্রাসার সুপার স্বাক্ষরিত বেতন তালিকায় তিনি উল্লেখ করেছেন ড্রেসমেকিং ল্যাব সহকারী জাহাঙ্গীর আলম নিয়মিতই প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত রয়েছেন । আবার একই ব্যক্তি ১০ নং নূরুল্যাবাদ ইউনিয়ন পরিষদে শতভাগ উপস্থিত থেকে বেতন ভাতা ভোগ করেছেন মর্মে সেখানের রেজিস্ট্রার নথিতে স্ট্যাম্প রেভিনিউ সম্বলিত তার স্বাক্ষর রয়েছে।

তবে বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ তৈরী হয়েছে। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা ও করে সংবাদ প্রকাশ না করতে অনুরোধ ও করেন তিনি।

তবে, নাম প্রকাশে স্থানীয়রা ও অনিচ্ছুক ওই বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক এবং এলাকাবাসী দাবি করেছেন, স্থানীয়ভাবে প্রভাব বিস্তার করে জাহাঙ্গীর হোসেন তার ইচ্ছেমতো প্রতিষ্ঠানে আসা যাওয়া করে। সারাবছরই তিনি তারিখবিহীন ছুটির আবেদন সুপারের কাছে জমা দিয়ে রাখেন। সরকারী কোন কর্মকর্তা পরিদর্শনে গেলে জাহাঙ্গীরকে মাদ্রাসায় পাওয়া যায় না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তবে সুপার আব্দুল মান্নান অদৃশ্য কারণে জাহাঙ্গীরের অভিযোগের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এবিষয়ে ইউ’পি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগের কথা স্বীকার করে বলেন, আমিই শুধু না; আমার মত অনেক ইউ’পি সদস্য এবং ইউ’পি চেয়ারম্যান আছে যারা একইসাথে একাধিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তারা তো উভয় প্রতিষ্ঠান থেকেই বেতন-ভাতা গ্রহণ করছেন। আর আমি একটা প্রতিষ্ঠানের ল্যাব সহকারী হিসেবে কর্মরত আছি। এরপাশাশি ইউ’পি সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমি তো দুই প্রতিষ্ঠানের বেতন গ্রহণ করি না। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যে সম্মানীর টাকা পাই সেটা একে বারেই নগণ্য। এর পরেও একটা পক্ষ আমার প্রতি মনক্ষুন্ন হয়ে এ অভিযোগটি করেছেন।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রধান আব্দুল মান্নান বলেন, ২০০৩ সাল থেকে অধ্যবধি সে আমার প্রতিষ্ঠানের ল্যাব সহকারী হিসেবে কর্মরত আছেন। এর পাশাপাশি তিনি ১০নং নূরুল্যাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। তিনি নিয়মিত অফিস করেন এবং বেতনও উত্তোলন করেন। তবে একই সাথে প্রতিষ্ঠানের বেতন ভাতা উত্তোলন করার বিষয়টি জানা নেই।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলম সেখ বলেন, একই ব্যক্তি দুই পদে পৃথক বেতন ভাতা গ্রহণের সুযোগ নেই এবং তা বিধি বহির্ভূত। একটি অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে বিধি মোতাবেক যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মান্দা উপজেলা নিবাহী অফিসার (ইউএনও) লায়লা আঞ্জুমান বানু বলেন, সরকারী আইন অমান্য করে একই ব্যক্তি দুই প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ উত্তোলন করা ধর্তব্য অপরাধের শামিল এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ও চাকুরীর প্রবিধি লংঘন। অভিযোগ এর বিষয়টি তদন্ত করে বিধি মোতাবেক যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।