![](https://www.priyoshomoy.com/wp-content/uploads/2024/02/1.gif)
ককটেল পার্টির আয়োজন করে ডাকা হতো সমাজের নামি-দামি ব্যবসায়ী, আমলা, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি ও রাজনীতিবিদের। গোপনে তা রেকর্ড করে রাখতেন যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ। সুযোগ বুঝে সেই ভিডিও ক্লিপ দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতেন প্রভাবশালীদের। পরে তাদের কাছ থেকে বাগিয়ে নিতেন বড় বড় কাজ।
![](https://www.priyoshomoy.com/wp-content/uploads/2024/02/3.gif)
পাপিয়াকে গ্রেফতারের পর তার ব্যবহৃত মোবাইল ঘেটে বেশ কিছু ভিডিও পেয়েছে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। ওইসব ভিডিওর কোনো কোনোটি এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। যা দেখে সবাই ধিক দিচ্ছেন মুখোশপড়া মানুষগুলোকে। এ নিয়ে দু’দিন ধরে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
র্যাবের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভিআইপিদের অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে ব্লাকমেইল করে পাপিয়া অল্প সময়েই তিনি নরসিংদী ও ঢাকায় একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থের মালিক বনে গেছেন। পাপিয়ার স্বামী সুমন স্ত্রীর ব্যবসায় সহযোগিতার পাশাপাশি থাইল্যান্ডে বারের ব্যবসা করেন।
তাদের মূল ব্যবসা ছিল উঠতি শিল্পপতি-ব্যবসায়ীসহ সমাজের উঁচুস্তরের লোকদের ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়।
আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের সাথে যুক্ত এক কর্মকর্তা বলেছেন, নরসিংদী ও ঢাকার অনেক তরুণীকে চাকরির নামে তারকা হোটেলে ডেকে ‘পার্টি গার্ল’ হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
ফেসবুকে প্রকাশ্যে যৌন ব্যবসার গ্রুপ ‘এসকর্ট’ থেকেও সুন্দরীদের সংগ্রহ করতেন পাপিয়া। পরে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে অনেককে শয্যাসঙ্গী করতে বাধ্য করতেন। এসব কুকর্মের বেশকিছু ভিডিও এখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।
কী আছে এসব ভিডিও ক্লিপে? এমন প্রশ্নে র্যাব কর্মকর্তা বলেছেন, পাপিয়ার মোবাইল ফোন অশ্লীল ভিডিওতে ঠাসা। অশ্লীল ভিডিও তুলে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতেন পাপিয়া। লজ্জায় কেউ মুখ খুলত না। এসব ভিডিওতে থাকা ৭ জন উঠতি বয়সী তরুণীর সাথে র্যাবের কথা হয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, টিপসের বাইরে এসব তরুণীকে মাসে ৩০ হাজার টাকা করে দিতেন পাপিয়া। এসব তরুণীকে আইনের আওতায় আনা হবে কি না; এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, তাদের অপরাধের বিষয়টিও অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এসব তরুণী যদি ব্ল্যাকমেইলের সাথে যুক্ত থাকেন তবে তাদেরও আইনের মুখোমুখি হতে হবে।
র্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, রাজনীতির আড়ালে মাদক ও নারীদের নিয়ে ‘বাণিজ্য’ করতেন পাপিয়া। রাজধানীর তারকা হোটেলগুলোয় মাঝে-মধ্যেই ‘ককটেল পার্টি’র আয়োজন করতেন। এসব পার্টিতে উপস্থিত হতেন সমাজের উচ্চস্তরের লোকজন। পার্টিতে নাচাগানার তালে তালে ভিআইপিদের মদ সরবরাহ করতো উঠতি বয়সী সুন্দরী তরুণীরা।
মদের নেশায় টালমাটাল আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে কৌশলে ধারণ করা হতো ওই তরুণীদের অশ্লীল ভিডিও। পরে ওইসব ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করতেন পাপিয়া। বনিবনা না হলেই ফেসবুকে ছড়িয়েও দেয়া হতো।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই পাপিয়ার কাছ থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক মাথা ঘুরিয়ে দেয়া খবর। পাপিয়ার অপকর্মের সঙ্গীদের ধরতে এরই মধ্যে একাধিক অভিযান চালানো হয়েছে।
পাপিয়ার বিপুল পরিমাণ অর্থের উৎস জানার চেষ্টা করছে র্যাব। র্যাব জানতে পেরেছে, পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরী অনলাইন ক্যাসিনোর গডফাদার সেলিম প্রধানের গুলশানের বাসায় ক্যাসিনো খেলতেন। সেলিম প্রধান কারাগারে গেলেও অনেকেই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান। এদের মধ্যে পাপিয়া ও সুমন চৌধুরী অন্যতম।
জানা যায়, ২০০০ সালের দিকে নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমনের উত্থান শুরু। শৈশব থেকেই চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ব্ল্যাকমেইল ছিল সুমনের প্রধান পেশা। চতুর সুমন রাজনীতিবিদদের সাথে সখ্য গড়ে তোলেন। ২০০১ সালে পৌরসভার কমিশনার মানিক মিয়াকে যাত্রা প্যান্ডেলে গিয়ে হত্যার পর তিনি আলোচনায় আসেন। এরই মধ্যে পাপিয়া চৌধুরীকে বিয়ে করেন তিনি। এর পর তিনি স্ত্রী পাপিয়াকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করান।
![](https://www.priyoshomoy.com/wp-content/uploads/2021/02/hakim-dr-mizanur-rahman-add.gif)