ছাত্রীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রারের অশ্লীল ফোনালাপ ফাঁস

সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে একই প্রতিষ্ঠানের এক ছাত্রীর অশ্লীল ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। এ সংক্রান্ত ২৬ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের একটি ফোনালাপ জাগো নিউজের হাতে এসেছে।

মঙ্গলবার (০৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এ ফোনালাপ পাওয়া যায়। ফোনালাপে শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল কথাবার্তা বলেন এবং অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেন রেজিস্ট্রার। ফোনালাপ ফাঁসের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।


ফোনালাপে ছাত্রীকে রেজিস্ট্রার বলেন, ‘হালকা কিস দেয়া, বুকে নেয়া, তেমন কিছু না। তেমন কিছু কী? আমি কত আগ্রহ নিয়ে আসছি। একাডেমিক ভবনে মিটিং রেখে তাড়াতাড়ি চলে আসছি। তোমার বোঝা উচিত ছিল লোকটা তাড়াহুড়ো করে আসছে। একটু আদর দিয়ে দেই। নদীর পাড়ে বসব, শেখাব। এরপর রুমে রেস্ট নেব। কিছু ঘটবে। দুটো মানুষ একসঙ্গে রেস্ট নিলে তো কিছু ঘটবার সম্ভাবনা থাকে; তাই না।’

ছাত্রীকে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দিয়ে ফোনালাপে রেজিস্ট্রার বলেন, ‘যুবক-যুবতী যখন একসঙ্গে থাকে, তখন কি হয় তুমি বোঝো না? ভালোবাসা গভীর হয়। একটা আত্মা আরেকটা আত্মার সঙ্গে মিশে যায়। সে সুখ স্বর্গীয় সুখ, যেটা কিনতে বা খেতে পাওয়া যায় না।’

ফোনালাপে রেজিস্ট্রার আরও বলেন, ‘আমার সঙ্গে কবে যাবা? আগামী অক্টোবর মাসের ৬-৭ তারিখে। আমরা সকালে যাব, বিকেলে ফিরে আসব। আমার গাড়ি আছে, সমস্যা হবে না।’

এছাড়া ফোনালাপে রেজিস্ট্রার ওই ছাত্রীকে যৌন সম্পর্কের প্রস্তাব দিয়ে এমন কিছু কথা বলেছেন, যা প্রকাশযোগ্য নয়। এজন্য পুরো কথোপকথন প্রকাশ করেনি জাগো নিউজ।


এমন ফোনালাপের বিষয়ে নিন্দা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) মো. নজরুল ইসলাম রলিফ বলেন, ফাঁস হওয়া ফোনালাপের বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিদের সঙ্গে আলোচনায় বসব আমরা। আমরা তাদের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানব। যদি সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীবান্ধব না হয় তাহলে আমাদের পক্ষ থেকে বড় ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরবর্তীতে ফাঁসকৃত ফোনালাপের বিষয়ে জানতে চেয়ে ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও কোনো উত্তর দেননি।

একই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) লায়লা পারভীন বানুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর এ নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

এ ব্যাপারে কি পদক্ষেপ নেয়া হবে জানতে চাইলে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমরা কি করব, সেটি আপনারা বলে দেবেন নাকি? যা প্রয়োজনীয় তাই করব। আপনার যা ভালো মনে হয়, করেন। এটা নিয়ে বেশি নাক গলানো ঠিক নয়। আমাদের প্রশাসন চালাতে দেন। এসব কাহিনি প্রকাশ করে নিজেদের ঝামেলা বাড়াবেন না। আগে দেখেন আমরা কি ব্যবস্থা নিই।’

গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এ ফোনালাপসহ ওই রেজিস্ট্রারের কীর্তিকলাপ আমাদের জানা আছে। তিনি থাকবেন না, এটা করোনার আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। করোনা আসায় আর ভিসি বাইরে থাকায় কার্যকর হয়নি। এখন শুধু আদেশ কার্যকরের অপেক্ষা। ওই রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে অনেক ডকুমেন্ট আছে। তিনি পদে থাকছেন না, এটা নিশ্চিত। আইনি পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়েও সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি আমরা।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে এই রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ইউজিসিতে দিয়েছিল একই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। এর পরিপ্রেক্ষিতে তখন তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযোগের বিষয়ে রেজিস্ট্রারের কাছে জবাব চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি বলে জানায় ইউজিসি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক নারী শিক্ষক রেজিস্ট্রার কর্তৃক নানাভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। (জাগোনিউজ)

০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ খ্রি. ২৫ ভাদ্র ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ২০ মুহররম ১৪৪২ হিজরি, বুধবার

আমরা সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, প্রিয় সময় গুজব প্রচার করে না