বাবার রক্ত ঝরানো ঘামে কেনা

কথিকা : ক্ষুদীরাম দাস

কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পাস করে যদি মানুষই না হওয়া যায়, তাহলে বৃথাই কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়া। আমি মনে করি, এটা সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা, কী লাভ বা হলো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে! এখানেই আমাদের সুশিক্ষিত মানুষদের একটা প্রশ্ন! এমন মানুষের কী অভাব আছে।

একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে-

যেদিন বাবা শুনেছে তার ছেলে এমএ পাস করেছে, সেদিনই মানুষের সাথে এমএ পাস করার মানে বুঝতে গিয়েছিলো। মানুষ তাকে যা বোঝালো, তাতে সে মহাখুশি হলো। গর্বে বাবার বুকটা ভরে গিয়েছিলো! আর পরের দিনই বাবা চিন্তা করলো ছেলেকে একবার দেখতে যাবে।

শিক্ষিত এক বাবা মলিন বস্ত্রে এমএ পাস ছেলেকে দেখার জন্যে আবাসিক হলে আসলো। এই অবস্থা দেখে ছেলে খুবই বিরক্ত হলো। কেননা বাবা কৃষি কাজের পোশাক পড়েই তার ছেলেকে দেখতে এসেছিলো। অবশ্য তার সেই পোশাক সাবান দিয়ে ভালো করে পরিস্কার করাই ছিলো। কিন্তু ছেলে এটা মোটেও পছন্দ করছিলো না। তার বন্ধুদের সামনে বাবাকে প্রণাম করতেও ইচ্ছে হলো না। ছেলে তখন দৌঁড় দিয়ে পালিয়ে গেলো অন্যদিকে। আবার চিন্তা করলো এভাবে পালিয়ে গেলে তার বাবা তাকে খোঁজার জন্যে যাকে তাকে জিজ্ঞাসা করবে। এটা ভেবে না পালিয়ে ছুটে এলো বাবার কাছে! ছেলের মনটা কেমন জানি হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো। বন্ধুরা সকলে তার কান্না দেখে ছুটে এলো।

ছেলেটি তখন তার বাবার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। জীবনে তার অর্জিত শিক্ষায় তার বাবাকে অবহেলা করতে পারলো না। কেউ কিছু বলার আগেই বাবাকে সকলের সামনে পরিচয় করিয়ে দিলো। পিছন থেকে একজন শিক্ষক এসে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। বন্ধুরা অবাক হলো এই ভেবে যে, এই লোকটিই তার বাবা!

বাবা তার ছেলেকে একটি শার্ট দিলো। শার্টটি মোটেও দামী ছিলো না, সস্তা ধরনের! একজন বন্ধু বললো, এসব তুই পড়বি? তোর বাবা তোর জন্যে এটা এনেছে?

ছেলেটি বন্ধুকে বললো, বাবাদের দেয়া কোনো কিছুই ছোট হয় না। আমার বাবার কম দামী শার্টটি তোমাদের কাছে কিছুই নয় হতে পারে! আমি ছোট মনে করি না। হতে পারে তোমাদের কাছে এটা খুবই কম দামী নয়! কিন্তু আমার কাছে আমার বাবার রক্ত ঝরানো, ঘাম ঝরানো টাকায় কেনা!

আমরা সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, প্রিয় সময় গুজব প্রচার করে না

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ খ্রি. ১১ আশ্বিন ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ০৮ সফর ১৪৪২ হিজরি, শনিবার