চাঁদপুরে মা ইলিশ নিধনে বেপরোয়া জেলেরা

সাইদ হোসেন অপু চৌধুরী, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট :
ইলিশের বংশবিস্তারে প্রজনন মৌসুম ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ করেছে সরকার। নিষেধাজ্ঞার আওতায় চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত প্রায় ৯০ কিলোমিটার এলাকা রয়েছে। জেলা টাস্কফোর্সের ১০টিম কাজ করলেও চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় নিষেধাজ্ঞার মধ্যে প্রশাসনের অভিযানের পরও বন্ধ নেই মা ইলিশ নিধনে। জেলেরা আইন অমান্য করার প্রবণতার পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার প্রভাবশালী মহলের তৎপরতায় মা ইলিশ নিধনযজ্ঞ চলছেই। প্রজনন মৌসুমে আইন অমান্য করায় এ বছর পর্যাপ্ত ইলিশ প্রাপ্তিতে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পদ্মা-মেঘনার আশপাশের চরাঞ্চলের দিকে তাকালে মনে হয় যেন মাছ ধরার উৎসব শুরু হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ইলিশ শিকারিরা। জেল-জরিমানা এমনকি সরকারি নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করেই অবাধে চলছে ইলিশ নিধন। জেলেরা পাল্লা দিয়ে ইলিশ শিকার করছে দিনে ও রাতে।

এদিকে অসাধু মাছ ব্যবসায়ীরা কৌশলে গ্রামের বিভিন্ন বনজঙ্গলে এবং হাট-বাজারে অবাধে বিক্রি করছে জাটকা। অনেকটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ব্যবসায়ীরাও। আইনি ঝামেলা এড়াতে মা ইলিশ বিক্রি ও ধরার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে শিশুদের। সোমবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আনন্দবাজার, সফরমালি, খেরুদিয়া, বাংলাবাজার, বিষ্ণুপুর, রাজরাজেস্বরসহ বিভিন্ন স্থানে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রকাশ্যে বিক্রি করছে জাটকা ও মা ইলিশ।

এদিকে শনিবার দুপুরে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামানের নেতৃত্বে পদ্মা-মেঘনায় মা ইলিশ রক্ষায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান চলাকালে পুরান বাজার রনাগোয়াল এলাকার কাছে এলে জেলা প্রশাসনের স্পিডবোট লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছোড়া শুরু হয়। এ ছাড়াও তারা নৌকায় করে দেশি অস্ত্র নিয়ে হামলার প্রস্তুতি নেয়। একপর্যায়ে নিরাপত্তার কথা ভেবে সেখান থেকে চলে আসে অভিযানকারী দল। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন এলাকার মানুষ জানায়, রাতভর ইলিশ শিকার হচ্ছে প্রজনন এলাকাজুড়ে। অনেক এলাকায় নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইলিশ শিকারে নতুন পন্থা নিয়েছে অসাধু জেলেরা। জেল-জরিমানা থেকে বাঁচতে ইলিশ শিকারে এখন তারা শিশুদের ব্যবহার করছে। কারণ বয়সের বিবেচনায় শিশুদের দণ্ড দিতে পারছে না প্রশাসন।


জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী জানান, বিচ্ছিন্ন কয়েকটি স্থানে কিছু অসাধু জেলে মাছ শিকার করছে। নদীতে সর্বদাই কাজ করছে জেলা প্রশাসন, পুলিশ। এ ছাড়া কোস্ট গার্ডের সমন্বয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, নদীতে পানি বেশি থাকায় খুব সহজেই চরের ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে পড়ছে। এ ছাড়া তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে শুরু করেছে। বেপরোয়া জেলেরা এখন হামলা করতেও দ্বিধা করছে না। তাদের রূপ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। আমরা সবাই যার যার অবস্থান থেকে একটু বাড়তি দায়িত্ব পালন করলে মা ইলিশ নিধন বন্ধ করা সম্ভব হবে।

আমরা সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, পাঠকের আস্থাই আমাদের মূলধন

১৯ অক্টোবর ২০২০ খ্রি. ০৩ কার্তিক ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ০১ রবিউল আউয়াল ১৪৪২ হিজরি, সোমবার