স্বাস্থ্য খাত সংস্কার প্রতিবেদনে বিভ্রান্তিকর তথ্য ও বৈষম্য: ইউনানী-আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক পরিষদের প্রতিবাদ জানালেন নেতারা

নিজস্ব প্রতিনিধি:

সম্প্রতি স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া প্রায় ২০০ সুপারিশভিত্তিক স্বাস্থ্যখাত সংস্কার প্রতিবেদন নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও তীব্র আপত্তি জানিয়েছে ইউনানী-আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক পরিষদ। পরিষদের সভাপতি ডা. আবদুস সহিদ ভূইয়া এবং সাধারণ সম্পাদক ডা. জহিরুল ইসলাম এক যুক্ত বিবৃতিতে এই প্রতিবাদ জানান।

গত ১২ মে (সোমবার ) সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সভাপতি ডা. আবদুস সহিদ ভূইয়ার ও সাধারণ সম্পাদক ডা. জহিরুল এই প্রতিবাদ জানান।

তাঁরা বলেন, দেশের স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত এই প্রতিবেদনে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতি এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের তথ্য ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। এতে একদিকে যেমন বিকৃত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, অন্যদিকে এই খাতের প্রতিনিধিদের মতামত বা অংশগ্রহণ একেবারেই নিশ্চিত করা হয়নি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সংস্কার কমিশন জনমত জরিপের ভিত্তিতে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা সেবাদানের হার মাত্র ০.২% দেখিয়েছে, যা বাস্তবতা ও সরকারি নথিপত্র অনুযায়ী সম্পূর্ণ অসত্য। বর্তমানে দেশে একটি ১০০ শয্যার (প্রস্তাবিত ২৫০ শয্যা) ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিদিন গড়ে ২৫০-৩০০ রোগীকে বহি:বিভাগে সেবা প্রদান করছে। এছাড়া দেশের ৬৪ জেলা ও বহু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োজিত প্রায় ২৮২৫ জন রেজিস্টার্ড স্নাতক চিকিৎসক এবং কয়েক হাজার ডিপ্লোমা চিকিৎসক প্রতিনিয়ত রোগী সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনেও এ খাতের কার্যকারিতা ও অংশগ্রহণের সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে, অথচ সংস্কার প্রতিবেদনে তা বিবেচনায় আনা হয়নি। তারা অভিযোগ করেন, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং স্বাস্থ্যখাতে দীর্ঘদিন ধরে অবদান রাখা একটি স্বীকৃত শাখাকে অবমূল্যায়নের প্রচেষ্টা।

সভাপতি ডা. আবদুস সহিদ ভূইয়ার বলেন “স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের নামে যে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে, তা একপেশে, তথ্যবিকৃত এবং আমাদের ঐতিহ্যবাহী ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতির প্রতি চরম অবজ্ঞার প্রকাশ। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আমরাও নিয়মতান্ত্রিক, সরকার স্বীকৃত এবং বাস্তবভিত্তিক অবদান রাখছি। অথচ প্রতিবেদনটিতে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেন আমাদের অস্তিত্বই নেই। এটি শুধু আমাদের পেশাগত মর্যাদার জন্য নয়, বরং দেশের জনগণের স্বাস্থ্যসেবা অধিকারকেও হুমকির মুখে ফেলবে। সরকার যদি সত্যিকার অর্থে একটি সমন্বিত ও বৈষম্যহীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়, তবে আমাদের মতামত ও প্রতিনিধিত্ব অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যক।”

সাধারণ সম্পাদক ডা. জহিরুল বলেন “কমিশনের প্রতিবেদনটি ঘেঁটে দেখা গেছে, ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক খাত সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে, যা একেবারে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যেমন জনমত জরিপে আমাদের সেবা দেওয়ার হার ০.২% বলা হয়েছে, অথচ দেশের ৬৪ জেলা ও বহু উপজেলা হাসপাতাল এবং সরকার অনুমোদিত মেডিকেল কলেজে আমাদের চিকিৎসকরা নিয়মিত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন এবং সেই তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে রিপোর্ট আকারে জমা হচ্ছে।

আমরা চাই, অবিলম্বে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন যুগোপযোগী করা হোক, আলাদা কাউন্সিল গঠনের ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং গবেষণার জন্য একটি পৃথক ইউনানী-আয়ুর্বেদিক গবেষণা কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা হোক। স্বাস্থ্য খাতে শুধু এক শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব দিয়ে প্রকৃত সংস্কার সম্ভব নয়।”

পরিষদের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, হোমিও, ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতি হাজার বছরের প্রমাণিত চিকিৎসাবিজ্ঞান, যার আধুনিকায়নের জন্য প্রয়োজন গবেষণা। অথচ কমিশনের সুপারিশে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক কাউন্সিল গঠনের কথা উল্লেখ নেই, বরং এমবিবিএস ও বিডিএস চিকিৎসক ছাড়া কাউকে ‘চিকিৎসক’ হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা পরিষদের মতে চরম অবমাননাকর এবং বৈষম্যমূলক।

বিশেষভাবে আপত্তিকর এক সুপারিশে বলা হয়েছে যে, বিএমডিসি রেজিস্টার্ড চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোনো ওষুধ বিতরণ করা যাবে না। অথচ দেশের বহু সরকারি ও স্বীকৃত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ বিতরণ চলছে। এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে স্বাস্থ্যসেবার একটি বড় অংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

পরিষদের নেতৃবৃন্দ দাবি জানান, দেশের প্রাচীন, কার্যকর ও জনগণের আস্থাভাজন ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের জন্য একটি স্বতন্ত্র গবেষণা কাউন্সিল (BMRC-এর আদলে) গঠন, পৃথক মেডিকেল কাউন্সিল, বিদ্যমান অর্ডিন্যান্সের যুগোপযোগীকরণ, এবং স্বাস্থ্যনীতিতে সমঅধিকার ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ইউনানী-আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক পরিষদ নিচের দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানায়:

সংস্কার প্রতিবেদন থেকে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য অপসারণ ও সংশোধন।

ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ও হোমিও চিকিৎসকদের নিজস্ব কাউন্সিল ও নিয়ন্ত্রক কাঠামোর পূর্ণ স্বীকৃতি।

ব্যাচেলর ও ডিপ্লোমা ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ও হোমিও চিকিৎসকদের জন্য দ্রুত সরকারি পদ সৃজন ও নিয়মিত নিয়োগ কার্যক্রম চালু করতে হবে।পৃথক ইউনানী-আয়ুর্বেদিক গবেষণা পরিষদ গঠন।

স্বাস্থ্যনীতিতে প্রথাগত চিকিৎসা পদ্ধতির প্রতিনিধিত্ব ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা।

স্বাস্থ্যখাত সংস্কার সফল করতে হলে বৈষম্য নয়, অন্তর্ভুক্তি ও তথ্যভিত্তিক বাস্তবতাই হতে হবে নীতিনির্ধারণের মূল ভিত্তি – পরিষদ এমনটাই মনে করে।

তাঁরা স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের নামে যেসব পক্ষপাতদুষ্ট, বৈষম্যমূলক ও প্রেক্ষাপট বিবর্জিত প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা অবিলম্বে সংশোধনের দাবি জানান এবং দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের স্বার্থে সকল চিকিৎসা পদ্ধতির সম্মান ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

সোরিয়াসিস হলে কী করবেন?

স্ক্যাবিস বা চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কী করবেন?

ডায়াবেটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে শক্তিশালী ঔষধ

শ্বেতী রোগের কারণ, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা

যৌন রোগের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

চর্মরোগ দাউদ একজিমা বিখাউজের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

চর্মরোগ দাউদ একজিমা বিখাউজের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

শেয়ার করুন

You might like