এপ্রিলের মধ্যে সিলেট লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট চালু হবে : সিলেটে বিমান প্রতিমন্ত্রী

সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধি :

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এমপি জানান, আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে সিলেট থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ও ম্যানচেস্টারে সরাসরি ফ্লাইট চালু হবে। সে লক্ষ্যে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের শক্তিবৃদ্ধির কাজ চলছে।

আগামী এপ্রিলের মধ্যে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে, যাতে এখান থেকে বোয়িং ৭৮৭, ৭৭৭, ড্রিমলাইনারের মত বড় বিমান লন্ডন, ম্যানচেস্টারে সরাসরি উড়তে পারে। সে লক্ষ্যেই কাজ চলছে। বাংলাদেশিরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আছেন। প্রবাসীদের সাথে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে বেসামরিক বিমান মন্ত্রণালয়।

http://picasion.com/

সিলেট নগরীর একটি হোটেলে দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র উদ্যোগে ১৯ ফেব্রুয়ারি, বুধবার, সিলেট থেকে বিমানযোগে পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহবুব আলী’র সাথে সিলেট চেম্বার ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

সিলেট চেম্বারের সভাপতি আবু তাহের মোঃ শোয়েব এর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। বিমানের অত্যন্ত নাজুক অবস্থার মধ্যে আমাকে এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়েছে।

তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে অত্যন্ত ভালোবাসেন।বর্তমানে বিমানের দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে আমরা কিছু সমস্যাবলী চিহ্নিত করেছি এবং সেগুলো সমাধানের মাধ্যমে চলতি বছর আমরা বিমানের সমস্ত দেনা-পাওনা মিটিয়ে প্রায় ২০০ কোটি টাকা মুনাফা করতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি জানান, অতি সম্প্রতি আমরা ২৯২ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ২টি সুপরিসর বিমান ক্রয় করেছি এবং অচিরেই বিমানের বহরে আরো নতুন কয়েকটি বিমান যুক্ত হবে বলে আমরা আশাবাদী। এছাড়াও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছায় সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরের কাজ চলছে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সংখ্যা চারে উন্নীত হবে। বিমানের সিট খালি থাকা প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী জানান, আমরা তদন্ত করে দেখেছি একটি অসাধু চক্র বিমানের যাত্রীসংখ্যা কমানোর জন্য সিটগুলো অনলাইনে বুকিং দিয়ে রাখে।

আমরা সম্প্রতি কিছু অসাধু ব্যক্তিকে সনাক্ত করেছি এবং তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। বিমান প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশ বিমান বর্তমানে রাইট ট্র্যাকে রয়েছে। বিমানের কর্মকর্তাগণ সেবার মান উন্নয়নে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন। আগামী জুন মাস থেকে সিলেট-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা বিমানের রয়েছে বলে তিনি জানান। এছাড়াও সিলেটের পর্যটন খাতের উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে সিলেটে নতুন ২টি মার্সিডিজ বাস প্রদান করা হবে বলে প্রতিমন্ত্রী অবহিত করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোঃ মোকাব্বির হোসেন।

তিনি বলেন, বিমানে অনিয়ম রয়েছে সেটা অস্বীকার করা যাবে না, তবে বর্তমানে তা অনেক কমে এসেছে। আমরা একঝাঁক নতুন মুখ বিমানে নিয়োগ দিয়েছি, আশা করি অচিরেই বিমানের চেহারা পাল্টে যাবে। তিনি বিমানযোগে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম-কানুন মেনে পণ্য রপ্তানির আহবান জানান এছাড়াও যাত্রী সাধারণকে বিমানের স্বার্থে এয়ারপোর্টের নিয়মকানুন মেনে চলার অনুরোধ জানান।
তিনি রপ্তানিকারকদের সুবিধার্থে বিমানের স্পেস ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে রাখার আশ্বাস প্রদান করেন।তিনি জানান, রানওয়ের কাজ শেষ হওয়ার পর বিমানের সার্ভে টিম ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিদর্শন করে রিপোর্ট প্রদানের পর সিলেট-লন্ডন-ম্যানচেস্টার সরাসরি ফ্লাইট চালু হবে।

সভায় বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, এডিশনাল ডিআইজি অব পুলিশ জয়দেব কুমার ভদ্র, সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ। সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, কাস্টম্স ও ভ্যাট কমিশনারেট সিলেট এর কমিশনার গোলাম মোঃ মুনীর, কর কমিশনার রনজীত সাহা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মাহবুবুল আলম, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোঃ নাসির উদ্দিন খান, মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন।

সভায় বক্তাগণ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সেবার মান উন্নয়নে বিভিন্ন পরামর্শ ও বিদ্যমান সমস্যাবলী তুলে ধরেন। যার মধ্যে নিউইয়র্ক-ঢাকা ফ্লাইট চালু, অনলাইনে বিমানের টিকেট সর্বদা অবমুক্ত রাখা, আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সাথে সিলেটের ভাড়ার বৈষম্য দূর করা, বিমানের নীতিমালা যাত্রীবান্ধব করা, মধ্যপ্রাচ্যের যাত্রীদের সাথে বিমানের ক্রুদের সম্মানজনক আচরণ করা, পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন রাখা, বিমানের ভাড়া হ্রাস করা সহ বিভিন্ন দাবী-দাওয়া তুলে ধরেন।