প্রবাস রাজনীতি ও আমাদের ভাবমূর্তি সংকট

জাশেদ আলম, কাতার থেকে :

কাতার মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ একটি ছোট ধনী দেশ। সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত দেশটিতে লাখও প্রবাসীদের মধ্যে একজন শ্রমিক হিসেবে সাড়ে তিন বছর ধরে কর্মরত আছি । প্রবাসে আসার পূর্বে দেশটি সম্পর্কে মুটামোটি ধারণা নিয়ে ছিলাম। কাতারের আয়তন ১১৫৭১ বর্গ কিলোমিটার। যা সিলেট বিভাগের আয়তনের চেয়েও কম। জন সংখ্যা ২৬ লক্ষ্যের বেশি এর মধ্যে কাতারী মাত্র ৩-৪ লাখ।

বর্তমানে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ বাংলাদেশী শ্রমিক কাতারে কর্মরত আছেন। কাতারে বাংলাদেশিরা পরিশ্রম, কর্মদক্ষতা, সততা দিয়ে যথেষ্ট সুনাম অর্জণ করেছেন। বিগত কয়েক বছর ধরে কিছু দেশিও নোংরা রাজনীতি ও ভিসা দালালীর জন্য আমাদের দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে বিনষ্ট হচ্ছে। কতিপয় বাংলাদেশী অল্প পরিশ্রমে অধিক মুনাফার লোভে বাংলাদেশ থেকে মাদক এনে বিমানবন্দরে ধরা পড়ছেন। ২০১৯ সালের হিসেব অনুযায়ী ১৫২ জন বাংলাদেশি মাদক কারবারের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে কারাগারে রয়েছেন। এ ছাড়া কাতারের তিনটি কারাগারে নানা অপরাধে জেলে রয়েছেন ২৩২ জন বাংলাদেশি। মুষ্টিমেয় কিছু দালাল আর দূর্নীতিবাদ মানুষের জন্য কাতারে কমিনিউটি মাথা কাটা যাচ্ছে।

http://picasion.com/

কাতার দূতাবাস ও বাংলাদেশ কমিউনিটি সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের শেষ দিকে কাতারের রাজধানী দোহার ন্যাশনাল নামের একটি এলাকায় জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশীরা দুই নেপালি নাগরিককে প্রচণ্ড মারধর করেন। রক্তাক্ত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে ডাক্তার দুইজনকেই মৃত ঘোষণা করেন। এরপরই কাতার পুলিশ অভিযান চালিয়ে খুনের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ২১ বাংলাদেশী শ্রমিককে গ্রেফতার করে। এর পর থেকেই বাংলাদেশী কমিউনিটিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

বাংলাদেশে নির্বাচন চলাকালীন আরেকটি ঘটনা উল্লেখ করতে চাই। শুক্রবার রাজধানী দোহায় সমুদ্র নিকটবর্তী ক্যারিফুর নামক স্থানে বেড়াতে গিয়েছিলাম । হঠাৎ পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে দেশীয় একটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রতীকের স্লাোগান আসছে। ওপর প্রান্তে অন্য একটি দলের স্লোগান হচ্ছে, বুঝতে পারলাম না কাতার নাকি দেশের কোন রাজপথে আছি। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যটকদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ল। উৎসুক সবাই কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিল না। কিচ্ছুক্ষণ পর পুলিশের গাড়ি আসল, সাথে সাথে দুটি মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল । ভাবতে খুব খারাপ লাগলো নোংরা রাজনৈতিক ক্ষমতার আদিপত্য জাহির এখানেও হয়। আবার ভিসা বা অবৈধ ধান্দা করে নিজের কুকর্ম ঢাকার জন্য রাজনৈতিক আশ্রয় নিচ্ছেন কেউ কেউ।নিজেদের রাজনৈতিক পদের বলে বাংলাদেশের কমিউনিটিতে বিভাজন সৃষ্টি করে নিজেদের ফায়দা হাসিল করছেন । এমন কি বিভিন্ন সময় রক্তক্ষয়ী রাজনৈতিক সংঘাতের ঘটনাও ঘটছে।

সম্প্রতি সময় নোংরা রাজনীতির আরেকটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে পর্তুগাল লিবনের মার্টিম মনিজে। পর্তুগাল বিএনপির সভাপতি অলিউর রহমান চৌধুরী ও পর্তুগাল আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফরহাদ মিয়ার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় একজন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছে। দেশটিতে বাংলাদেশী অভিবাসন প্রত্যাশিদের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা বলা যেতে পারে। অর্থ খরচ করে এক রাশ স্বপ্ন নিয়ে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেরা বিদেশে আসে ভালো উপার্জনের আশায়। মুষ্টিমেয় কিছু অসাধু স্বার্থলোভী মানুষ অসহায় এই মানুষদের স্বপ্ন নিয়ে খেলে। নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রবাসীদের বানায় নেতা হবার হাতিয়ার। গ্রুপিং মারা মারি আমাদের জাতীয়তায় লেপন হয় অবহেলা অবজ্ঞা আর বঞ্চনাময় কটুবাক্য।

যোগ্যতা থাকা সত্যেও শুধু বাংলাদেশী হবার কারনে ভালো চাকুরী থেকে বঞ্চিত হয় হাজারও স্বপ্নবাজ ছেলে । তবে আশা করতেই পারি যাদের ভোটাধিকার নাই প্রবাসেও কমিউনিটি ব্যতীত কোথাও প্রভাব কাটানোরও কোন সুযোগ নেই এমন অপদার্থ অপ্রয়োজনীয় প্রবাস রাজনীতি বন্ধ করা হোক। রাজনৈতিক দল গুলো দেশের বৃহত্তর স্বার্থে প্রবাসর শাখা কমিটির অনুমোদন দেয়া বন্ধ করবে। আমরা কোন নেতা হবার জন্য না, ভালো কাজ আর ভালো কর্মী হয়ে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে বিদেশ আসি। প্রবাসী আমরা আমাদের মেধা পরিশ্রম সততা দক্ষতা দিয়ে লাল সবুজের পতাকাকে আরও বহুদূর নিয়ে যেতে চাই।।। যেন স্বগর্বে পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে বলে উঠতে পারি,

আমি বাংলাদেশী

আমি গর্বিত।

আমি প্রবাসী, আমিই গর্বিত বাংলাদেশী।