পরকীয়া ও নৈতিক অবক্ষয়

সম্পাদকীয় ….

গত ২ জুলাই বৃহস্পতিবার পঞ্চগড় জেলায় সংঘটিত প্রকাশিত ‘পরকীয়ার জেরে স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন, প্রেমিক পলাতক’ সংবাদটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ও লজ্জাজনক। এসব ঘটনায় কী প্রমাণ করে সেটা পাঠক মাত্রই বোঝার ক্ষমতা রাখেন। প্রশ্ন জাগে, আমরা কেমন সমাজে বসবাস করছি। পরকীয়ার জের ধরে স্বামীকে হত্যা করলো নিজেরই স্ত্রী ও তার প্রেমিক। পরকীয়া আমাদের সমাজকে নষ্ট করে দিয়েছে এবং পরিবারগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। একটি পরিবার পবিত্র পরিবার। কিন্তু আমাদের নৈতিক অবক্ষয় এমনই চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটাতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। পরকীয়ার প্রতিবাদ করায় মারধরের ঘটনা, হত্যার হুমকি, এমনকি খুনের মতো জঘন্য ঘটনাও ঘটে।

স্ত্রীর আশ্রয় স্বামী। বিবাহের মাধ্যমে স্বামী ও স্ত্রীর পবিত্র বন্ধন তৈরি হয়। কিন্তু সেখানে ‘পরকীয়া’ বিষয়টি যখন পরিবারে ঢুকে যায়; তখন সেই পরিবার তার নিজস্ব অস্তিত্ব হারাতে বসে। কী নির্মম ঘটনা যে, নিজের স্বামীকে হত্যা করে অন্যের হাত ধরে নতুন সংসার শুরুর নিকৃষ্ঠ পরিকল্পনা! এই অপরাধের জন্যে ওরা যে নিজেরা রক্ষা পেতে পারে না, আইন তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসবেই, সেই বিষয়টি তারা ভুলে যায় কেন? এত দুঃসাহস তাদের আসে কোথা থেকে? মানুষ এত নির্মম ও নিষ্ঠুর হয় কী করে? এসব প্রশ্ন এখন মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে।

অবশ্য এখন এ ধরনের ঘটনাকে মানুষ স্বাভাবিকভাবে নিতে শুরু করেছে। কারণ, প্রায় দিনই এমন ঘটনা মানুষকে আঘাত করে। আঘাত করতে করতে মানুষের সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এসব ঘটনা এখন মামুলি বিষয় হয়ে গেছে। এভাবে মামুলি বিষয় হয়ে যাওয়াটাই নৈতিক অবক্ষয়!

পরকীয়া একটি পবিত্র পরিবার ধ্বংস করে। এই পরকীয়া স্ত্রী অথবা স্বামী যে কেউ করে। কেন পরকীয়ায় জড়িয়ে যায় এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। তবে এখন শুধু এটাই বলতে হয় যে, পরিবারে যেন এমন হীন কাজ না ঘটে ও পরিবার নষ্ট না হয় সেজন্যে নৈতিক শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেয়া দরকার। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে শিক্ষা অর্জন করে পরিবারকে রক্ষা করতে হয়। কারণ, একটি পরিবারের সাথে আত্মীয়স্বজন হতে শুরু করে অনেকগুলো পরিবার জড়িত থাকে। পরকীয়ার জন্যে লজ্জার পাশাপাশি সমূহ ক্ষতির শিকার হতে হয় সেই পরিবারের সাথে জড়িত সমস্ত আত্মীয়স্বজনকে। এ ধরনের ঘটনা ঘটে গেলে যুক্তিতর্কে মীমাংসা অনেক সময় করা যায় না। আবার সেসব যুক্তি সঠিক নাও হতে পারে না। সেসব যুক্তি মানুষের সম্মান বাঁচাতে পারে না। যেন পরিবারে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করাই হলো সবচেয়ে বড় যুক্তি!

স্বামী স্ত্রীকে, অথবা স্ত্রী স্বামীকে বিশ্বাস করাটা মোটেও অপরাধ নয়। সংসারে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিশ^াস থাকতেই হবে। কিন্তু সেই বিশ^াসের অমর্যাদা করে মোহের বশবর্তী হয়ে বিশ্বাস ভঙ্গ করাটা কতটা নির্মমতার পরিচয়। তাই বলে সংসারের মধ্যে ‘সন্দেহ’ বীজটি পুতে দিতে হবে সে রকম কোনো বিষয় আলোচনায় আসাটা যৌক্তিক হতে পারে না। এতে সংসারের সুখ ও শান্তি নষ্ট হবে। কিন্তু সন্দেহ না করে, শুধু বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে থাকার সুযোগ যদি ‘পরকীয়া’ নামক বিষ সংসারে ঢুকে যায়, তখন সেখানে দুঃখ কষ্টের আগমন প্রত্যাশীত!

বিশেষ করে দেখা গেছে, বিয়ের আগে স্কুল কলেজের বন্ধুবান্ধব অথবা প্রেমিক প্রেমিকা জুটে যায়। এসব ক্ষেত্রে পারবারিকভাবে বা ঘটনাক্রমে অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেলে পরকীয়ার জন্ম হতে পারে। পুরোনোদের সাথে যোগাযোগ, তারপর ধীরে ধীরে সেই যোগাযোগের সূত্রধরে সুযোগের অপেক্ষা। অথবা সংসার জীবনের কোনো খারাপ সময়ে কাউকে হঠাৎ ভালো লেগে যায়। তখন মনের মধ্যে মোহ কাজ করে। নিজের স্ত্রী অথবা স্বামীর চেয়ে অন্যকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। এই মনে হওয়াটা হচ্ছে, ‘নদীর এপার কহে, ওপারে যত সুখ’-এমন ধরনের। অর্থাৎ নিজের স্বামী অথবা স্ত্রীকে যে সুখীই আছে সেটা মুহূর্তের মধ্যে ভুলে যায়। পরকীয়া যে অপবিত্রতা তখন সেটা মাথায় কাজ করে না।

প্রতিটি পরিবার সুখে থাকলে জগৎ সুখী হবে। আমরা সেই প্রত্যাশা করি! পরিবারে নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিশ্বাস রক্ষা করে চলি। তাহলে সেই বিশ্বাসই আমাদের সুখী করবে।

প্রকাশকাল : ১৬ জুলাই, ২০২০ খ্রি. বৃহস্পতিবার