একজিমা হলে কী করবেন?

হাকীম মিজানুর রহমান :

চর্মরোগ তো অনেক ধরনের হয় তবে খুব পরিচিত একটি সমস্যা হলো একজিমা এবং এটি সাধারণত হাতে ও মুখে হয়। যা ত্বককে অনেক শুষ্ক করে দেয় এটি। একজিমার আকার বেড়ে গেলে ত্বক এতই শুষ্ক হয়ে যায় যে শরীর ফেটে রক্ত বের হয়। যাদের একজিমা আছে তাদের দরকার বাড়তি যত্ন। তাই জেনে নিন একজিমা হলে কি খাবেন এবং কী করবেন?

অতিরিক্ত তেল, চর্বি যুক্ত খাবার খেলে মুখে যেমন ব্রণ হয় ঠিক তেমনি একজিমা হলেও খাবারে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। এমন খাবার খেতে হবে যেটা আপনার লিভার ভাল রাখে।

প্রতিদিন খাবারের তালিকায় প্রচুর পরিমাণে সবজি রাখতে হবে। ফরমালিন এবং কীটনাশক দেয়া শাক সবজি পরিহার করতে হবে।

আরো পড়ুন : জেনে নিন দীর্ঘক্ষণ মিলনের ঔষধ

 

গরুর মাংস পুরোপুরি ভাবে বন্ধ করতে হবে। যদি খেতেই হয় সবুজ ঘাস খাওয়া এমন গরুর মাংস খাওয়া যেতে পারে, তাও অল্প পরিমাণে। ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে এমন খাবার যেমন রুই মাছ, বাদাম ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে।

যদি সম্ভব হয় কার্বোহাইড্রেট খাবার একদমই কম খাবেন। কার্বোহাইড্রেট আছে ভাত, রুটি ও গম জাতীয় খাবারে।

গরুর দুধ একজিমা রোধে অন্যতম সহায়ক। কিন্তু সেটা খাওয়া যাবে না। বরং না খেয়েই রোধ করতে হবে। ২ সপ্তাহ গরুর দুধ না খেয়ে দেখতে পারেন। যেকোনো দুধ জাতীয় খাবার বন্ধ করুন। যেমন কেক, পায়েস ইত্যাদি।

আরো পড়ুন : শ্বেতীর সাদা দাগ দূর করার উপায়

গরুর দুধের পরিবর্তে মহিষের, পাঠা অথবা ভেড়ার দুধ খেতে পারেন। তাছাড়া বাদাম, সয়া দুধ, রাইস দুধ গরুর দুধের পরিবর্তে খেতে পারেন।

কিছু সাপ্লিমেন্ট একজিমা প্রতিরোধে সহায়ক। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে কিছু সাপ্লিমেন্ট নেয়া যেতে পারে। ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের শুষ্কতা এবং চুলকানি প্রতিরোধে সহায়ক। একজিমা প্রতিরোধে ওমেগা ৩, ৬, ৯ অনেক ভাল কাজ করবে। ভিটামিন এ, ডি, ই ত্বকের কোলাজেন সুরক্ষায় অনেক কার্যকর।

সাধারণভাবে ত্বকের ওপরের স্তরের এপিডার্মিসের যেকোনো প্রদাহই একজিমা নামে পরিচিত। যেখানে ত্বক লালচে হয়ে যায়, চুলকায়, ছোট ছোট দানা ও ফোস্কার মতো ওঠে, দাগ পড়ে যায়, পানির মতো বের হয়।

আরো পড়ুন : মেহ প্রমেহ ও প্রস্রাবে ক্ষয় রোগের কার্যকরী সমাধানসমূহ

একজিমা ত্বকের প্রদাহজনিত রোগ, যা একটি নির্দিষ্ট স্থানে প্রথমে দেখা দেয়। ত্বক লালচে রং ধারণ করে, তারপর একটু ফুলে ওঠে। পরে ছোট ছোট দানা ও ফোস্কা বেরোয়। ফোস্কা ফেটে গিয়ে রস ঝরতে থাকে বা সেখানে জীবাণু সংক্রমণের কারণে পুঁজ দেখা দেয়। কখনো আবার ছোট গুটিগুলো মিশে গিয়ে ত্বক পুরু ও শক্ত করে ফেলে। একে বলে লাইকেনিফিকেশন। লাইকেনিফিকেশন দীর্ঘস্থায়ী হলে চামড়া খুবই পুরু ও শক্ত হয়ে ওঠে এবং বায়ুতে আর্দ্রতা কম থাকলে ওই ত্বক ফেটে যায়, বড় বড় খোসা হিসেবে উঠে আসে। তখন তীব্র চুলকানির অনুভূতি মনে হয়, চুলকাতে চুলকাতে চামড়া ছিঁড়ে রক্ত বের হতে থাকে। এটাই একজিমা।

একজিমা কয় ধরনের হয়ে থাকে?

আরো পড়ুন : পাইলস রোগে করণীয়

একজিমা দুই ধরনের হতে পারে। অভ্যন্তরীণ একজিমা ও বাহির একজিমা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ একজিমা বেশি হয়। অভ্যন্তরীণ একজিমা সেগুলোকেই বলা হয়, যা শরীরের নিজস্ব কারণের জন্য হয়। এর আবার কয়েকটি ভাগ আছে। যেমন—

♦ অ্যাটোপিক একজিমা

♦ লাইকেন সিমপ্লেক্স একজিমা

♦ সেবোরিক একজিমা

♦ পস্ফোলিক্স, যা হতে পারে হাতে বা পায়ে

♦ পিটিরিয়াসিস অ্যালবা একজিমা

♦ ইড ইরাপশন একজিমা

♦ ভেরিকোজে একজিমা

♦ এক্সফোলিয়েটিভ একজিমা

♦ নামুলার একজিমা

♦ লাইকেন স্ট্রিয়েটার

♦ অটো-ইমিউন প্রোজেস্টেরন ডার্মাটাইটিস

♦ মানসিক চাপজনিত একজিমা।

যেসব একজিমা শরীরের বাইরের কোনো কারণে হয় তা এ গোত্রের একজিমা। এর মধ্যে আছে—

♦ সংস্পর্শ একজিমা বা কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস। এটা হতে পারে ইরিটেশন ও অ্যালার্জি থেকে।

♦ জীবাণুঘটিত একজিমা

♦ স্ক্যাবিয়াস একজিমা

♦ গাছপালা ও আলোক সংবেদনশীলতাজনিত একজিমা

♦ অপুষ্টিজনিত একজিমা

♦ শীতজনিত একজিমা

♦ ওষুধের অ্যালার্জি বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াজনিত একজিমা।

কারণ

একজিমার কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে মনে করা হয় নিচের কারণগুলো একজিমার জন্য দায়ী। এগুলো হচ্ছে—

♦ বংশগত

♦ শরীরের ভেতরে বিক্রিয়াজনিত

♦ একজিমা করে এমন কোনো পদার্থ শরীরের সংস্পর্শে আসা

♦ থাইরয়েডজনিত অসুখ থাকলে।

কোথায় হয়?

শরীরের বিভিন্ন অংশে একজিমা হতে পারে। বেশি হয়—

♦ কান

♦ হাতের কুনই

♦ চোখের পাতা

♦ স্তন

♦ শিশুদের কুঁচকি

♦ শরীরের বিভিন্ন ভাঁজ।

একজিমা কি বংশগত?

কিছু কিছু একজিমা, যেমন এটোপিক একজিমা ও লাইকেন সিমপ্লেক্স বংশগত। তবে মা-বাবার কারো থাকলে সব সন্তানেরই যে এ রোগ হবে এমন কোনো কথা নেই। সংস্পর্শ একজিমা, স্ক্যাবিয়াস একজিমা বা ছত্রাকজনিত একজিমার সঙ্গে সাধারণত বংশগত কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায় না।

একজিমা কি ভালো হয়?

অবশ্যই ভালো হয়। সঠিক চিকিৎসা এবং যে কারণে একজিমা হচ্ছে তা পরিহার করতে পারলে বাহির একজিমা প্রায় সব ক্ষেত্রেই নির্মূল হয়। অভ্যন্তরীণ একজিমাও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেরে যায়। তবে তার চিকিৎসা একটু দীর্ঘস্থায়ী। অভ্যন্তরীণ একজিমা বারবার হওয়ার প্রবণতা দেখায়।

যা করবেন, যা করবেন না

একজিমা হলে নিমপাতার পানি বা ডেটল পানি দিয়ে কখনোই পরিষ্কার করা উচিত নয়। একজিমার জায়গাটুকু শুধু পরিষ্কার ফুটানো ঠাণ্ডা পানি কিংবা ডাক্তারের পরামর্শ মতো লোশন দিয়ে ধোয়া যেতে পারে। নিমপাতা বা অন্য গাছগাছড়া, অ্যান্টিসেপটিক, সাবান ইত্যাদি লাগালে একজিমা আরো বেড়ে যেতে পারে। খুব কম ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে। ওষুধ বা নিমযুক্ত সাবান পরিহার করে চলা ভালো। আর বেশি মাত্রায় ক্ষারীয় সাবান, শর্ষের তেল, কাদামাটি, গাছপালা, চন্দন, নোংরা পানি, আনাজপত্র—বিশেষত পেঁপে, রসুন, পেঁয়াজ ইত্যাদির সংস্পর্শে আসা একজিমা রোগীর উচিত নয়।

আবার বরিক এসিডের মলমও একজিমার ওষুধ নয়। একজিমার কারণ বিভিন্ন। শুধু এক ধরনের ওষুধেই সব একজিমা সারে না। বরিক এসিডে অনেক রোগীর ত্বকে এলার্জি সৃষ্টি হয়। ফলে একজিমা বেড়ে যেতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে কোনো মলমই লাগানো উচিত নয়। একজিমা রোগীর সমুদ্রে গোসল না করাই ভালো। নোনা পানি এবং বালুর প্রভাবে একজিমা অনেক সময় বেড়ে যায়।

একজিমায় স্টেরয়েড

খুব বাধ্য না হলে অর্থাৎ একজিমা খুব বেশি মাত্রায় না হলে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া স্টেরয়েড ওষুধ কখনোই সেবন করা উচিত নয়। স্টেরয়েড-জাতীয় ওষুধে এমন অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়, যা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। বিশেষ করে মুখে সেবনযোগ্য স্টেরয়েড। তাই একজিমায় চেষ্টা করা উচিত এ ধরনের ওষুধ এড়িয়ে চলতে। তবে ত্বকের ওপরে লাগানোর স্টেরয়েড মলম ক্রিম বা লোশন লাগাতে কোনো বাধা নেই। কারণ শরীরের ভেতরে তা খুব সামান্যই প্রবেশ করে। ছোট ছেলেমেয়ের ক্ষেত্রে কম শক্তির স্টেরয়েড ক্রিম লাগানো যেতে পারে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা

একজিমা চোখে দেখেই নির্ণয় করা যেতে পারে। কখনো কখনো কিছু কিছু ল্যাবরেটরির পরীক্ষা করা যায় এবং কিছু কিছু ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে চামড়া কেটে হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার জন্য পাঠানোর প্রয়োজন হতে পারে।

চিকিৎসা

চিকিৎসা খুব বেশি কঠিন নয়। পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেটের দানা ঈষৎ গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে রোজ এক থেকে দুবার ক্ষতস্থানে ধৌত করা যেতে পারে। স্টেরয়েড মিক্সড অ্যান্টিবায়োটিক মলম বা ক্রিম একজিমায় রোজ দুবার লাগাতে হবে সাত হতে ১৪ দিন। ক্ষেত্র বিশেষে আরো বেশি দিন প্রয়োজন হতে পারে। কখনো কখনো একজিমার সঙ্গে ফাঙ্গাল ইনফেকশন থাকলে অ্যান্টি ফাঙ্গাল মলমের সঙ্গে ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্রাপ্তবয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে মুখে সেবনযোগ্য ওষুধ হিসেবে ফেক্সোফেনাডিন ট্যাবলেট ১২০ মিলি গ্রাম রোজ দুবার করে কয়েক সপ্তাহ চালানো যেতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে এ ডোজ অনেক কম হবে, যা আসলে নির্ভর করে শিশুর বয়স ও ওজন কত তার ওপর।

যদি যথেষ্ট পরিমাণে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন থাকে, তাহলে মুখে অ্যান্টিবায়োটিক ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট খেতে হতে পারে এক সপ্তাহ। কখনো কখনো একজিমার সঙ্গে ভিটামিনের অভাব থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভিটামিন ট্যাবলেট বিশেষ করে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স একটি করে দুবার ১৫ দিন থেকে এক মাস সেবন করা যেতে পারে।

সারাদেশে অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে কুরিয়ার যোগে অর্ডার অনুযায়ী ঔষধ পাঠানো হয়। বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন।

হাকীম মিজানুর রহমান (ডিইউএমএস)

হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।
একটি বিশ্বস্ত অনলাইন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান।

মুঠোফোন : 01742057854 (সকাল দশটা থেকে বিকেল ৫টা)

ইমো/হোয়াটস অ্যাপ : 01762240650

শ্বেতীরোগ একজিমাযৌনরোগ, পাইলস (ফিস্টুলা) ও ডায়াবেটিসের চিকিৎসক।

সারাদেশে কুরিয়ার সার্ভিসে ঔষধ পাঠানো হয়।