ইসলামে পর্দার বিধান

মিজানুর রহমান রানা :
যে যে ধর্মের অনুসারীরা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিষয়াদি পালন করবে। ইসলামে এর কোনো বাধার প্রচলন নেই। মুসলিমরা কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী চলবে। আর অন্য ধর্মের লোকেরা তাদের ধর্মীয় অনুশাসন অনুযায়ী চলবে। এতে মুসলিমরা যেমন বাধা সৃষ্টি করবে না, তেমনি অন্য ধর্মের লোকেরাও মুসলমানদের বাধা দিতে পারবে না। এটাই যে কোনো রাষ্ট্রের নীতি।

আজ সারাবিশ^সহ ভারতেও মুসলিম নারীদেরকে হিজাব বা পর্দা নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে মুসলিম নারীদেরকে পর্দার অন্তরালে থাকতে বাধা সৃষ্টি করে তাদের মতো বেপর্দায় চলাফেরা করতে উৎসাহ দিচ্ছে এবং বেপর্দার একটা পরিবেশ তৈরি করে মুসলিম নর-নারীকে জি¦না ব্যাভিচারে বাধ্য করা হচ্ছে।

আল কুরআনের অনেক সূরাতে আল্লাহ তায়ালা পর্দা প্রথার কথা প্রতক্ষ্য ও পরোক্ষভাবে বলেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘‘মুমিন মহিলাদের বলো, তারা যেন তাদের নজর সংযত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে, সাধারণ প্রকাশ থাকা ব্যতীত তাদের আবরণ প্রকাশ যেন না করে, তাদের ঘাড় ও বক্ষদেশ যেন ওড়না দ্বারা ঢেকে রাখে, আর তাদের আবরণ যেন প্রকাশ না করে তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র কিংবা স্বামী-পুত্র, ভাই, ভাইপো, বোন, বোনপো কিংবা চাকরাণী যারা তাদের অধিকারভুক্ত কিংবা অনুগত, যৌন কামনা শূন্য পুরুষ কিংবা নারী – গোপন অঙ্গে অজ্ঞ বালক ব্যতীত অন্যদের সম্মুখে সজোরে পদ নিক্ষেপ না করে নিজেদের আবরণ প্রকাশের কারণে, হে মুমিনরা সার্বিকভাবে তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর, যাতে সফলকাম হতে পার।’’ আল কুরআন- সূরা নূর, আয়াত ৩১।

অনেক হাদিসে ইসলামের নবী মুহাম্মাদ (সা.) পর্দা করার কথা বলেছেন। তাই মুসলিম নর ও নারীর জন্যে পর্দা করা ফরজ।

মুসলমান নর-নারী তাদের ধর্মীয় বিধান মতে পর্দা করবে। এটা তাদের অধিকার। এটা তাদের ইচ্ছা। এই অধিকার ও স্বাধীন ইচ্ছার ওপর অন্য ধর্মের লোকেদের অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হস্তক্ষেপ সমাজে বৈষম্য তৈরি করবে। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে মানুষে মানুষে হিংসা হানাহানি বৃদ্ধি করবে।

জেনে রাখুন, আমরা কেন পর্দা করবো : পর্দার অন্তরালে থাকা মানুষটির অন্তর আল্লাহর ভয়ে ভীত বলেই সে পর্দা করে। পর্দা শুধু বহিরাবরণই নয়, পর্দা অন্তরেরও সৌন্দর্য। পর্দানশীল মানুষ তার সকল সৌন্দর্য শুধু আল্লাহর ইচ্ছা-অনিচ্ছার অধীন করে নেয়। আল্লাহতায়ালা যা করতে আদেশ করেছেন, তা-ই সে করে। আর আল্লাহতায়ালা যা নিষেধ করেছেন, তা সে করে না। এটাই হচ্ছে পর্দার সৌন্দর্য। এছাড়াও মন্দ মানুষের কুদৃষ্টি, কুচিন্তা থেকে পর্দা মুসলিম নর-নারীকে হেফাজত করে। সমাজে ধর্ষণ, ব্যাভিচার রোধ করে। মানুষকে সভ্য ও পরিশীলিত হতে সাহায্য করে।

পর্দার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে নবী আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা ও মু’মিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের জিলবাবের একাংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আহযাব: ৫৯)

আল্লাহ তায়ালাই এ বিধানের প্রবর্তক। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যখন তোমরা তাদের নিকট কিছু চাইবে তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এ বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ’। (সূরা আহযাব: ৫৩)

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ এবং তার রাসূল কোনো বিষয়ের নির্দেশ দিলে কোনো মু’মিন পুরুষ কিংবা কোনো মু’মিন নারীর জন্য সে বিষয় অমান্য করার কোনো অধিকার থাকে না। আর যে আল্লাহ ও তার রাসূলকে অমান্য করে সে অবশ্যই পথভ্রষ্ট।’ (সূরা আহযাব: ৩৬)

মূলত পর্দাহীন নারীরা হচ্ছে জগতের সবচেয়ে নিকৃষ্ট নারী। তাদের ব্যাপারে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে সবচে নিকৃষ্ট তারাই যারা পর্দাহীনভাবে চলাফেরা করে। (বায়হাকী: ১৩২৫৬)

সুতরাং হে ভিন্নধর্মীরা, তোমরা সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করো না। সমাজে সব ধর্মের মানুষ তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। তোমরা তোমাদের ধর্ম পালন করো। অন্য ধর্মের মানুষের ওপর জোর জবরদস্তি করে অন্যায় চাপিয়ে দিও না। তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্রে বৈষম্য তৈরি হবে।