২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন : স্বপ্নের বাস্তবতা

সম্পাদকীয়
বহু প্রতীক্ষা ও দীর্ঘশ্বাসের অবসান হলো, বাস্তব রূপ নিলো পদ্মা সেতু। শুধুমাত্র উদ্বোধনের অপেক্ষা। আনন্দ প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে, হাসি মুখে মুখে দেখা দিচ্ছে। ২৫ জুন সেই হাসির প্রতিধ্বনি চারিদিকে ছড়িয়ে যাবে, ছড়িয়ে যাবে বিশ্বব্যাপী।

দীর্ঘদিন যে স্বপ্ন দেখে আসছি আমরা, সেই স্বপ্নের বাস্তবতায় আমরা সকলেই খুশি। সেই পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মিত একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা যুক্ত হয়েছে সরাসরি। ঢাকা থেকে খুবই সহজে যাতায়াত করা যাবে। তাছাড়া দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সাথে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটেছে। যা’ এতোদিন সর্বক্ষেত্রে খুবই কঠিন বিষয় ছিলো। একটি নতুন দিগন্তের সূচনা ঘটলো এর মধ্য দিয়ে। কেননা বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু ইতিহাসের একটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং ছিলো নির্মাণ প্রকল্প। দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির ওপরের স্তরে রয়েছে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরটিতে রয়েছে একটি একক রেলপথ।

৬.১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮.১০ মিটার প্রস্থ পরিকল্পনায় নির্মিত হলো দেশটির সবচেয়ে বড় সেতু। দূর থেকে তাকিয়ে দেখলে মনে হয় বাংলাদেশের গর্ব ও ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি, স্বাধীনতার শক্তি ও সাহস, স্বপ্নের বাস্তবতা, হাসি ও উল্লাস ধ্বনিত হচ্ছে চারিদিকে। আহা! সে কি অপূর্ব দৃশ্য।

সবচেয়ে বড় গর্বের বিষয় হলো, সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো হলো পদ্মা সেতু। নির্মাণে মোট ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা প্রায়। বলতেই হবে, বাঙালির সাহস রয়েছে। যেভাবে স্বাধীনতা অর্জন করেছে অসীম সাহস নিয়ে, সেভাবেই বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে শক্তি দেখানোর মতো সময় দেখিয়েছে বাঙালি।

শরীয়তপুরবাসীর কাছে পদ্মা সেতু ছিল স্বপ্নের মতোই। তারা স্বপ্ন দেখতেন, সেতু দিয়ে স্বল্প সময়ে রাজধানীতে আসা-যাওয়ার। তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। আগামী ২৫ জুন যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে পদ্মা সেতুর দ্বার। এতে খুশি পদ্মার দক্ষিণ পাড়ের সাধারণ মানুষ। সেতুকে ঘিরে হচ্ছে এখন নানা পরিকল্পনা। গড়ে উঠছে শিল্প-কারখানা; কর্মসংস্থানের আশায় চেয়ে আছেন এলাকার লাখ লাখ মানুষ।

সরেজমিন শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে এখানে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লি ও সিকদার হিমাগার নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। এছাড়া, অর্থনৈতিক অঞ্চল করার সরকারি পরিকল্পনা চলছে। সেতু পুরোদমে চালু হলে ব্যাপক প্রসার ঘটবে আবাসন শিল্পের। এগুলো বাস্তবায়ন হলে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আলোর মুখ দেখবে শরীয়তপুরবাসী।

পদ্মা সেতু বাঙালির ইতিহাসে একটি মাইলফলক। অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি এই সেতু বাঙালির জীবনের একটি বড় অর্জন। এই সেতুর সাথে মিশে আছে ১৭ কোটি বাঙালির সুখ-দুঃখ আর আর্থ-সামাজিক মুক্তির সোপান। ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম সেই স্বাধীনতারও মহানায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।