মরার পর ছুঁইলো না কেউ, দাফন করলো পাথওয়ে

নিউজ ডেস্ক :
রাজধানীর মিরপুর-১৩ নম্বর এলাকায় অনেকগুলো টিনসেড বাড়ি ও জায়গা-জমির মালিক মো. জাহিদ। সেসবের আয়ে রাজার হালেই চলছিল জীবন। আত্মীয়-স্বজনেরও অভাব নেই।

তবে এক সপ্তাহ ধরে করোনার উপসর্গ শ্বাসকষ্টে ভুগে মারা যাওয়ার পর এগিয়ে আসেনি পরিবার, আত্মীয়-স্বজনের কেউ। সোমবার (১১ মে) সন্ধ্যায় মারা যাওয়ার পর রাত ১০টা পর্যন্ত পড়ে ছিল ওই যুবকের নিথর মরদেহ। এসময় কেউ ছুঁয়েও দেখেনি তাকে।

এমন খবর পেয়ে সেখানে হাজির হন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পাথওয়ের সদস্যরা। গোসল-কাফন শেষে রাত সাড়ে ১২টার দিকে মরদেহ দাফন করেন প্রতিষ্ঠানটির দাফন টিমের সদস্যরা।

এলাকাবাসী ও পাথওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী মিরপুর-১৩ এর সি ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের ৩৯ নম্বর বাড়ির মৃত মুল্লুক চানের ছেলে মো. জাহিদ। তিনি পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে তৃতীয়।

গত এক সপ্তাহ ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন জাহিদ। কিন্তু তিনি করোনার কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেননি। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ওই যুবক মারা যাওয়ার পর মরদেহের দাফন করা নিয়ে পরিবার বিপাকে পড়ে। কেউ কাছে যায় না, ছুঁয়েও দেখে না।

দাফনের ব্যবস্থা করতে প্রতিবেশী, আত্নীয়-স্বজনরাও সহযোগিতা করেনি। শেষমেশ খবর যায় সামাজিক সংগঠন পাথওয়ের দাফন টিমের কাছে।


এ ব্যাপারে পাথওয়ের নির্বাহী পরিচালক মো. শাহিন  বলেন, ওই যুবকের এলাকায় বসবাস করেন আমাদের দাফন টিমের প্রধান মনির। দাফনের কোনো সুরাহা না হওয়ায় আত্মীয়দের মধ্য থেকে মনির ভাইয়ের কাছে খবর যায় দাফনের জন্য। এরপর আমাকে জানান তিনি। রাতেই আমি পুরো দাফন টিমকে সেখানে পাঠিয়ে দেই। পাথওয়ের টিম ঘটনাস্থলে ছুটে যায় এবং ধর্মীয় রীতি মেনে রাত ১২টার দিকে মিরপুর-১৩ এর বাইশটেকি কবরস্থানে দাফনকার্য সম্পন্ন করে।

তিনি আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে বা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির মরদেহ দাফনে ভীতির পাশাপাশি বাধা সৃষ্টি করছেন স্থানীয়রা। অনেক জায়গায় আবার টাকার বিনিময়ে অন্য রোগে আক্রান্ত মরদেহেরও দাফন সম্পন্ন করতে হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাধা পাওয়ার পর পুলিশ কিংবা প্রশাসনের সহায়তা নিতে হচ্ছে দাফনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে।

এই ক্ষেত্রে সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে ১৩ সদস্যের দাফন টিম গঠন করেছে পাথওয়ে। দেশের কোথাও করোনা আক্রান্ত হয়ে অথবা করোনা সন্দেহে কেউ মারা গেলে মৃতের কবর খনন ও জানাজাসহ দাফনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে প্রস্তুত আমরা। এক্ষেত্রে ইসলামি রীতি অনুযায়ী দাফন-কাফন করছি আমরা। আমাদের যথেষ্ট পিপিই আছে। নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করেই এই কাজটি করছি আমরা।