শিক্ষকদের দুর্দিন : স্কুল বিক্রির নোটিশ

সম্পাদকীয় …. 

শিক্ষকদের দুর্দিন, স্কুলের ভাড়া পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে স্কুল বিক্রির নোটিশ টানিয়েছেন। গত ক’মাস ছাত্রীছাত্রীদের কাছ থেকে বেতন নেওয়া বন্ধ। তাই পাবলিক স্কুলের ভাড়া চালাতে না পেরে হিমশিম খাচ্ছেন।

করোনাকালে আসলে বেশিরভাগ মানুষই কষ্টে আছেন। তার মধ্যে রয়েছন শিক্ষকরাও।

রাজধানীর মাটিকাটার ব্লু বার্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষক মিলন হোসেন বর্তমানে ভ্যানে করে পেঁয়াজ, রসুন বিক্রি করছেন।

ম্লান মুখে তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির পর আর বেতন পাইনি। প্রাইভেট-টিউশনিও বন্ধ। চার সদস্যের পরিবার নিয়ে কিভাবে চলব? বাধ্য হয়ে তাই ফেরি করছি। আমি শিক্ষক। সরকারের কাছে আকুল আবেদন, আমাদের শিক্ষকতা পেশায় ফেরার সুযোগ দিন।’

খুলনার পাইকগাছার ডেলুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষক আশীষ কুমার, ধর্মীয় শিক্ষক রবিউল আওয়াল রাতে মাছ ধরে দিনে বিক্রি করছেন। আমি নিজেও মাছ বিক্রি করছি। ২০ বছর ধরে শিক্ষকতা পেশায় আছি। অন্য কাজে মন সায় দেয় না।’

রাজধানীর মাটিকাটায় ১৫ বছর ধরে চলছে আইডিয়াল পাবলিক স্কুল। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীসংখ্যা ৩০০। শিক্ষক-কর্মচারী ২৫ জন। স্কুলটি বিক্রি করে দিতে নোটিশ টাঙানো হয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক নারগীস আক্তার আফসোস করে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতি মাসে প্রতিষ্ঠানটির পেছনে আমার খরচ সোয়া এক লাখ টাকা। মার্চ মাস পর্যন্ত বাড়িভাড়া ও শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করেছি। এরপর আর দিতে পারছি না। বাড়িওয়ালা বলে দিয়েছেন, এক মাসের ভাড়া মওকুফ করবেন। তার পরও তো অনেক টাকা দরকার। কোথায় পাব? দেনা না বাড়িয়ে তাই স্কুলটি বিক্রি করে দেওয়ার নোটিশ দিয়েছি। ন্যূনতম দাম পেলেই বিক্রি করে দেব।’

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সমস্যা না হলেও ঘোর বিপদে পড়েছেন ১০ লাখ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী। বেতনের সঙ্গে প্রাইভেট টিউশনিও বন্ধ। ফলে সংকট আরো বেড়েছে। উপায় না পেয়ে উদ্যোক্তারা স্কুল বিক্রি করে দিতে চাচ্ছেন। অনেক কিন্ডারগার্টেন স্কুলও বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। রাস্তার মোড়ে, স্কুলের সামনে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব স্কুল বিক্রির নোটিশ ঝুলছে।

এভাবে চলতে থাকলে স্কুলগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে। শিক্ষকরাও তাদের পেশা বদলাতে বাধ্য হবে ও হচ্ছে। আসুন আমরা সবাই মিলে শিক্ষকদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি। দেশগড়ার কারিগর শিক্ষকদের সম্মান জানাই।