অ্যাডভোকেট শাহজাহান শাওন, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট :
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে সারাদেশে চলছে লকডাউন। এই লকডাউনকে কেন্দ্র করে দেশের সব আদালত বন্ধ আছে। শুধু জরুরি কারণে গ্রেফতার করা আসামির জামিন আবেদন নিষ্পত্তিতে একজন বিচারিক হাকিম স্বল্প সময়ের জন্য বসেন। তাই আদালত বন্ধ থাকায় অপেক্ষাকৃত তরুণ আইনজীবীরা আছেন বিপাকে। কারণ ঢাকা, চট্টগ্রাম এর কোর্ট গুলোতে প্রতিদিন হয়ত সব মিলিয়ে ২০০-৪০০ জামিনের পিটিশন শুনানীর জন্য প্রস্তুত থাকে।
এসব পিটিশন শুনানীর জন্য হয়ত ৯০-১০০ জন আইনজীবীর প্রয়োজন হয়। ফলে দেশের প্রায় ৫৯ হাজার আইনজীবী বেকার হয়ে পড়েছে। কিন্তু ঢাকা বারে সিনিয়র, জুনিয়র, শিক্ষানবিশ আইনজীবীসহ প্রায় ২৫০০০ আইনজীবী আছেন এবং চট্টগ্রাম বারে সিনিয়র, জুনিয়র, শিক্ষানবিশ আইনজীবীসহ ৭৫০০ আইনজীবী আছেন।
আইনজীবীগণ বেতনভূক্ত নয় এমনকি সরকারী অনুদানও প্রাপ্ত হয় না। আইনজীবীদের অবিভাবক বাংলাদেশ বার কাউন্সিল দেশের প্রায় ৬০,০০০ আইনজীবীর জন্য এই করনাকালীন সময়ের জন্য তেমন কোন কার্যকরি ভূমিকাও করতে পারেনি। ফলে অধিকাংশ আইনজীবীগণ আর্থিক চাপ সামলাতে অনেকে হিমশিম খাচ্ছেন।
অনেকে চেম্বার খরচ, বাসাবাড়ি খরচ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ সামলাতে না পেরে সবকিছু বন্ধ করে গ্রামের বাড়িতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। আদালত বন্ধ থাকায় অলস সময় কাটছে। যেহেতু আইনজীবীরা সরকারিভাবে কোনো ভাতা পান না, তাই আয় নির্ভর করে মামলা পরিচালনার উপর। এখন আদালত বন্ধ থাকায় স্বাভাবিকভাবেই বিপাকে পড়তে হয়েছে।
আইনজীবীদের জন্য আলাদা ব্যাংক থাকলে এ ধরনের ক্রান্তিকালে ঋণ সুবিধা পাওয়া সম্ভব হতো। করোনার চিকিৎসায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম বারের পক্ষ থেকে মেডিক্যাল সার্ভিস আছে, তবে তা খুবই অপর্যাপ্ত। তাই ক্রান্তিকালীন ব্যবস্থা হিসেবে বার কাউন্সিলের নতুন ভবনে জরুরি মেডিক্যাল সেবার ব্যবস্থা রাখা উচিত।
দীর্ঘদিন আদালত বন্ধ থাকায় আদালতে কোনো কাজ নেই। এ সময়টা অনেকেই গ্রামের বাড়ি আছে। রমজান ঈদ চলে গেছে, কোরবানীর ঈদ আসন্ন। ফলে এখন দিনাতিপাত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
চলমান বন্ধে মামলার ডায়েরি এলোমেলো হয়ে গেছে। সবমিলিয়ে আদালত খুললেও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে আরও সময় লাগবে। তাই যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে ওঠা কষ্টকর হয়ে পড়বে।
করোনার ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে আদালত বন্ধ রাখাটা জরুরি হয়ে পড়েছিল। তবে র্ভাচ্যুয়াল কোটে শুধুমাত্র গ্রেফতারকৃত আসামীদের জামিন শুনানী হইলেও বাদীর স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে না। এই করনাকালীন সময়ে চেকের মামলা, অর্থ ঋণ মামলা, সিভিল মামলা, ফৌজদারী কার্য্যবিধির অধিনে মামলা সমূহে প্রতিকার পাওয়ার সুবিধা না থাকায় বিচারপ্রার্থীগণ সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে এবং এসব মামলার আসামী/বিবাদীগণের জন্য করনা আর্শীবাদ হয়ে উঠেছে এবং ৬০ হাজার আইনজীবী বেকার হয়ে পড়েছে।
আবার ভার্চুয়াল কোটে যে সব জামিনের আবেদন শুনানী হয় সেসব পিটিশন প্রস্তুত করার জন্য আইনজীবীদের বারে ওকালতনামা, জেলখানায় ওকালতনামা পাঠাতে হয়, কোটে যেতে হয়, নথী দেখতে হয়, পেশকার, পিয়ন, সেরেস্তাদার, জি আরও দের সহিত যোগাযোগ করতে হয় (খুশী করতে হয়), জামিন হলে বেইল বন্ড সংশিষ্ট পেশকার/সেরেস্তায় দাখিল করতে হয়। এতে করনার ঝুকি রয়েই যায়।
তবে তুলনামূলক সিনিয়র আইনজীবীরা অবশ্য করোনার ভয়াবহতার তুলনায় লকডাউনের ক্ষতিকে বড় করে দেখছেন না। তারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হওয়ায় সমস্যা হয় না। করোনা একটি বৈশ্বিক দুর্যোগ। এর ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে লকডাউনের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা যথার্থ ছিল।
আইনজীবীদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বারের সদস্যদের সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হয়েছে। তবে তা ছিল খুবই নগন্য। আইনজীবীগণ তাদের পেশার রয়েলিটির কথা চিন্তা করে তাদের অসহায়ত্বের কথা তাদের স্ত্রীদের কাছে পর্যন্ত বলতে পারেন না। ফলে তারা অসহায় জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছে।