নদী থেকে বালি উত্তোলন : হুমকির মুখে প্রকৃতি

সম্পাদকীয়…

প্রকৃতির উপহার নদী। বাংলাদেশকে জালের মতো জড়িয়ে আছে নদী। তাই বাংলাদেশকে বলা হয় ‘নদীমাতৃক বাংলাদেশ।’ নদী বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ। শুধু নদীতে যে পরিমাণ মাছ পাওয়া যায়, তা’ বর্ণনা করে শেষ করা যাবে। বাঙালিকে ‘মাছে ভাতে বাঙালি’ বলার অন্যতম প্রধান মাছের উৎস নদী। তাছাড়া বাংলাদেশের মানুষের জন্যে নদীর উপকারিতার কথা মোটেও অস্বীকার করা যাবে না। বাংলাদেশের নদী তীরবর্তী মানুষসহ হাজার হাজার মানুষ নদীর উপর নির্ভর করে বেঁচে আছে।

কিছুদিন আগে প্রিয় সময় ডট কমে প্রকাশিত ‘চরভদ্রাসনে অবৈধ বালু উত্তোলনের ড্রেজার জব্দ ও জড়িতদের আর্থিক জরিমানা’ শিরোনামে সংবাদটি সবার দৃষ্টিতে পড়েছে। নদীকে বাঁচাতে যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তাকে আমরা স্বাগত জানাই। ‘পদ্মার পাড়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের উদ্দেশ্যে স্থানীয় রাস্তার পাশ দিয়ে বসানো ২ হাজার ফুট পাইপ ধ্বংস করা হয়’ অত্যন্ত ভালো একটি কাজ হয়েছে। এভাবেই নদীকে বাঁচানোর জন্যে এগিয়ে আসতে হবে।

প্রকৃতিপ্রেমী মাত্রই প্রকৃতির দান নদীর জন্যে কষ্ট অনুভব করবেই। এটা কতই না দুঃখজনক যে, আজ বাংলাদেশের নদীগুলো মরতে বসেছে। কোনো কোনো নদীকে মানুষ এখন মরা নদীই বলে। ওই নদীগুলো আর বেঁচে ফিরবে কিনা সন্দেহ। এখন সেই নদীতে চাষাবাদ হচ্ছে, রাস্তাঘাট হয়েছে, নদী দখল করে ঘরবাড়ি-এভাবে একসময় নদীটি হয়ে গেছে নিশ্চিহ্ন অথবা হয়ে গেছে ছোট খাল। থাকে না নদীর যৌবন, থাকে না তার দাপট! এভাবে হারিয়ে যায় মানচিত্র থেকে একটি নদী। তবে নামটি রয়ে যায়। বাংলাদেশে এমন নদীর কি অভাব আছে!

অবৈধ বালু উত্তোলন নদীর জন্যে কতোটা যে ভয়াবহ ক্ষতিকর-সেটা আমাদের সকলেরই জানা রয়েছে। এই নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রায়ই অনেক খবর আমরা দেখতে পাই। এটা যে ক্ষতিকর-এ বিষয়ে মোটামুটি আমরা কম-বেশি সকলেই একমত। সত্যিই এ নিয়ে আমাদের আরো দ্রæত গুরুতর ভাবনা জরুরী বোধ করি।

বালি উত্তোলনের কারণে নদীর পানিদূষণ হচ্ছে। সেই সাথে নদীগর্ভের গঠন প্রক্রিয়াও দ্রত গতিতে বদলে যায়। এর ফলে একসময় যখন নদী তার গতিপ্রকৃতি হারায় তখন নদীর পাড় ভাঙ্গতে শুরু করে। কেননা বালি উত্তোলনের কাছাকাছি মাটির ক্ষয় বেশি ঘটে। নদী থেকে বালি উত্তোলন নদীর উপর উল্লেখযোগ্য ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। এসব কার্যক্রমকে অবৈধ ঘোষণা করার পাশাপাশি এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার। মনে হয় বালি উত্তোলন সবচেয়ে বেশি হয় নদীগর্ভ থেকেই।

এটি যদি মাত্রাহীন হয়ে পড়ে তাহলে ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়বে। তাই প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় এখন থেকেই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। সুতরাং কঠোর আইন ও সেই আইনের বাস্তবায়ন ঘটালে তা বন্ধ হবে বলে সাধারণ জনগণের বিশ্বাস।