হায় হায়! চট্টগ্রামে এসব কী হচ্ছে?

১৯ জুলাই ২০২০ খ্রিস্টাব্দ : রোববার

সম্পাদকীয়..

গত ১৭ জুলাই কী ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামে? আমরা এসব আশা করতে পারি? মোটেও না। প্রিয় সময় পত্রিকার পাঠক এই খবরটি পড়ে ছি ছি নিশ্চয় করেছে। গত ১৭ জুলাইয়ের প্রকাশিত সংবাদটির শিরোনাম ছিলো ‘চট্টগ্রামে পুলিশের হাতে মা-বোন লাঞ্ছিত, অপমানে যুবকের আত্মহত্যা’-এটি কতোই না দুঃখজনক ছিলো। তাহলে কোথায় আমাদের নিরাপত্তার স্থান? কে আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারে? এমন অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে এই জঘন্য ঘটে যাওয়া ঘটনাটি!

সেদিন (১৬ জুলাই) চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ বাদামতলী এলাকায় সত্যিকারে কী ঘটনাটি ঘটেছিলো পাঠক জেনেছেন। মা বোনকে পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে শুনে এক কিশোর আত্মহত্যা করেছে। সেই কিশোর মা বোনকে আটক করায় অপমানিত বোধ করায় আত্মহত্যা করেছে বলে মনে হচ্ছে। এটা কতোই না নির্মম একটি ঘটনা। পুলিশ আসামী ধরার জন্যে ডিউটি করবে এটা একেবারে স্বাভাবিক। তাই বলে যাকে ধরতে গেলো তাকে না পেয়ে পরিবর্তে অন্যজনকে ধরাটা কতোটা আইনী বিষয় সেটা একটা প্রশ্ন! উপরন্তু আসামীর মা-বোনকে আটক করে নিয়ে যাওয়াটাও যুক্তিসঙ্গত কিনা বা আইনসম্মত কিনা সেটাও বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য এ ঘটনাটির মাধ্যমে পুলিশেরই আইনের প্রতি কতোটা শ্রদ্ধা রয়েছে সেটা পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে। অথবা তারাও যে কখনো কখনো বেআইনীভাবে কাজ করতে পারেন প্রশ্ন কি করা যায় না?

আবার প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানা যায় যে, ‘তবে পুলিশ বলছে, মারুফের মা বোনকে আটক করা হয়নি। অভিযানের সময় মারুফের বোন অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলো পুলিশ।’ তাহলে প্রশ্ন থেকে যায় যে, যদি তাই হয়, তাহলে মারুফ কেন আত্মহত্যা করলো? আবার স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে পুলিশের অভিযানে নেতৃত্বদানকারী ডবলমুরিং থানার এসআই হেলাল খানকেও ক্লোজ করা হয়েছে কেনো? তবে আর যাই হোক, এই ঘটনার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, একজনের প্রাণ চলে গেছে ও একটি পরিবার তাদের একজন সদস্যকে হারিয়েছে দুঃখজনকভাবে।

এই ঘটনায় পুলিশের কোনো গাফিলতি আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন উপ-কমিশনার। অবশ্যই এটি শক্ত একটি পদক্ষেপ হয়েছে। এতে পরিস্কার হয়ে যাবে, আসল সত্য ঘটনা।

পুলিশ জনগণের বন্ধু এটা আমাদের মানতেই হবে। জনগণের বিপদে পুলিশ পাশে থাকবে এমনটা প্রত্যেকে আশা করে। কখনো কখনো তারাও প্রশংসনীয়ভাবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে এমন জঘন্য ঘটনার কারণে পুলিশের উপর আঙ্গুল তুলে কথা বলতে বাধ্য হন সাধারণ জনগণ। এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই আশা করা যায় না। পুলিশের কাছ থেকে জনগণ ভালো ব্যবহারই আশা করেন। পুলিশ যদি নিরাপত্তা প্রদানের পরিবর্তে এমন ঘটনার জন্ম দেন তাহলে জনগণ তাদের উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলবে। সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হবে এবং সেই ক্ষোভের কারণে বড় ধরনের ঘটনাও ঘটে যেতে পারে। যেমন সেদিনই জনগণের উত্তেজনায় ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটেছিলো। দুর্ভাগ্য খারাপ হলে হয়তো সেদিনই আরো মারাত্মক ও আরো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে যেতো। যা হয়তো সেই এলাকার জন্যে স্মরণীয় ও ইতিহাস হয়ে থাকতো। কিন্তু সেদিন একজনের প্রাণ চলে যাওয়া; তাও আবার আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটে যাওয়া কতোই না মর্মান্তিক ছিলো! এলাকায় উত্তেজনার পাশাপাশি শোকের ছায়াও নেমে এসেছিলো। যা হয়তো এলাকার মানুষ কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। এই শোক ভুলতে এলাকার মানুষের দীর্ঘদিন কেটে যাবে!

অবশ্য এই ঘটনার কারণে সাধারণ জনগণ ‘হায় হায় এসব কী হচ্ছে’ এমন অনুভূতি নিয়ে আলোচনার ঝড় তুলেছে। তবুও আমরা প্রত্যাশা করতেই পারি যে, যেহেতু এই ঘটনায় আইনের লোক যে কোনোভাবে যুক্ত সেহেতু সন্তোষজনক ও দৃষ্টান্তমূলক একটি সমাধান আসবে। যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে-সেই প্রত্যাশায় আমরাও চোখ কান খোলা রেখে জেগে আছি।