দালালমুক্ত হলে রক্ষা পাবে গরিব মানুষগুলো

২০ জুলাই ২০২০ খ্রিস্টাব্দ : সোমবার

সম্পাদকীয়

দালালদের খপ্পরে পড়ে ঠকেছেন এমন মানুষের অভাব নেই। আর দালালদের দলাদলিতে সাধারণ জনগণ প্রতারিত হওয়ার পাশাপাশি ভোগান্তিতে ভুগেছেন এমন ঘটনারও শেষ নেই। এটা অত্যন্ত খুশির সংবাদ গত ১৫ জুলাই প্রিয় সময় পত্রিকায় ‘দালাল মুক্ত হতে চলেছে চাঁদপুর সদর হাসপাতাল : বক্সে বসছে নিয়মিত পুলিশ’ প্রকাশিত হয়েছে। এটা খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলতেই হবে।

সাধারণ জনগণ এই উদ্যোগে খুবই খুশি হয়েছেন। এমন উদ্যোগ আরো আগে নেয়া গেলে অন্তত দালালদের যন্ত্রণা থেকে অনেক সাধারণ গরীব রোগীরা রক্ষা পেতো। তবুও এখন থেকে রোগীরা আর দালালদের দেখতে পাবে না বলে নিশ্চিন্তে হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, ‘এখন থেকে সেখানে প্রতিদিন দুটি সিপটে নিয়মিত পুলিশ পাহাড়া থাকবে বলে জানা গেছে। প্রতিদিন একজন এস আই অথবা এ এস আই এবং সাথে ৩ জন কনস্টেবল সহ প্রতিদিন সেখানে দুটি সিপটে ৪ জন পুলিশ সদস্য ডিউটি করবে।’ এই ব্যবস্থার জন্যে সাধারণ রোগীরা সাধুবাদ জানাচ্ছে নিশ্চয়।

এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট বলা যায় যে, এখানে প্রতিদিন দালালদের দ্বারা রোগীরা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হয়েছে। দিনের পর দিন দালালদের দালালীর আধিপত্ত বিস্তার করে চলেছে। তাদের উপর কেউ কথা বলতে পারতো না; এমনকি প্রতিবাদও করার মতো কেউ ছিলো না। যদিও প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানা যায় যে, গত দুই বছরেরও অধিক সময় ধরে পুলিশ বক্সটি পুলিশবিহীন পড়েছিলো। সুতরাং নির্ভয়ে ও দাপটের সাথে দালালরা তাদের কার্যক্রম চালিয়েছে। তারা সুবিধা ভোগ করেছে উভয় দিক থেকেই। একদিকে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতো; অন্যদিকে ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকেও মোটা কমিশন পেতো। তাছাড়া হাসপাতালে বিভিন্ন বিভাগে অপ্রীতিকর ঘটনা লেগেই থাকতো। প্রায় দিনই রোগীদের মোবাইল, গহনা ও নগদ টাকা চুরির মতো ঘটনারও খবর পাওয়া যেতো। কিন্তু বর্তমানে দালালদের এই বিনা পুঁজিতে উপার্জন এখন বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আর আগের মতো হাসপাতালের বিভিন্ন চিকিৎসকদের কক্ষের সামনে হাসপাতালের নিকটতম বিভিন্ন প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টরের দালালদের উপস্থিতি থাকতে দেখা যায় না।

তবে কথা হচ্ছে, পুলিশ বক্স দিয়ে বহিরাগত দালালদের নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও ভেতরের দালালদের নিয়ন্ত্রণ করাটা শক্ত কাজই হবে। অর্থাৎ যে দালালরা হাসপাতালের বাইরে থাকতো, যারা কিনা বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিজস্ব লোক তারা এখন পুলিশ দেখেই পালিয়ে বেড়ায়। কিন্তু ভেতরে যে দালাল চক্র রয়েছে, তারা তো চুপিসারে রোগী পাঠিয়ে মোবাইলে কল করেই তদের কমিশনের কথা বলে রাখেন। তারা তো মোবাইল কলের মাধ্যমে দালালি করছেন, তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করাটা সম্ভব কিভাবে সেটাই একটা বড় প্রশ্ন।

সচেতন মহল আশা করছেন, সত্যিই যেন হাসপাতালটি দালালমুক্ত থাকে। তাহলে অনেক দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা নিরাপত্তার সাথে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারবে। সেই সাথে তাদেরও অর্থের অপচয় হবে না। তবে কথা হলো, ঐসব দালালদের আয় কিন্তু কমে গেছে। তারা চুপিসারে ভিন্নভাবে দালাদালি যেন না করতে পারে সেদিকেও নজর রাখা দরকার। তাছাড়া দালালদের দালালি করা যেন অব্যহত থাকে সেজন্যে তাদের পক্ষে অন্যেরা গোপনে দালালি করছে কিনা সেটাও নজরে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।