সোনারগাঁয়ে লাইসেন্সবিহীন বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ৮০ ভাগ প্রসূতিকেই সিজারিয়ানে বাধ্য করছে

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি :
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ৮০ ভাগ সন্তান প্রসব হচ্ছে সিজারিয়ানে। এর বেশিরভাগই অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হচ্ছে বলে অভিযোগ সচেতনমহলের। অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ানে সন্তান প্রসব করলে মা এবং সন্তান দু’জনই পড়েন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।

আরো পড়ুন : ৮০ ভাগ প্রসূতিকেই সিজারিয়ানে বাধ্য করার বিষয়টা দুঃখজনক!

এসময় বিভিন্ন ধরনের চেতনা এবং বেদনানাশক ওষুধ দেওয়া হয় মাকে। যার প্রভাব পড়ে মা এবং নবজাতকের ওপর। আবার অস্ত্রোপচারে গর্ভ নষ্টের ঝুঁকিও বাড়ে, বাড়ে শিশুমৃত্যুর হার, মায়ের বুকের দুধ শুরু করাতেও সমস্যা হয়। আর অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের সঙ্গে অপরিণত শিশু জন্মেরও সম্পর্ক রয়েছে। যার ফলে শিশু প্রতিবন্ধী হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে। এসব সত্ত্বেও সোনারগাঁয়ে স্বাভাবিক প্রসবের চেয়ে অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের প্রবণতা ব্যাপকহারে বাড়ছে। আর এভাবেই সিজারিয়ান পরিণত হয়েছে হাসপাতাল ক্লিনিকগুলোর বড় ব্যবসাক্ষেত্র।

বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রসূতি মা গেলেই তার পরিবারকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে অপারেশন করাতে। সিজারিয়ানের মাধ্যমে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে এই হার ৮০ শতাংশ। বিশেষ করে পরিবারগুলো যতো ধনী হচ্ছে, ততো বাড়ছে সিজারিয়ানের হার ।

সোনারগাঁ উপজেলার ১৮টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মধ্যে একটি ছাড়া কোনো হাসপাতালেরই লাইসেন্স নেই। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্যতা করে অবৈধভাবে এসব হাসপাতাল চালাচ্ছেন মালিকরা।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মোগরাপাড়া, কাঁচপুর ও সাদিপুর ইউনিয়নের ১৮টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো হলো – ইনসাফ ল্যাব এন্ড হসপিটাল, সেবা জেনারেল হাসপাতাল, মা জেনারেল হাসপাতাল, সোনারগাঁ সেন্ট্রাল হাসপাতাল, সোনারগাঁ সেবা জেনারেল হাসপাতাল, সোনারগাঁ জেনারেল হাসপাতাল, রয়েল স্পেশালাইজড হসপিটাল, মেডিকেয়ার হাসপাতাল, আয়েশা আমজাদ হাসপাতাল, সোনারগাঁ ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ইসলামিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কাঁচপুর ইউনাইটেড হাসপাতাল, শুভেচ্ছা জেনারেল হাসপাতাল, গ্রীন লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মাতৃ সেবা হাসপাতাল, কাঁচপুর জেনারেল হাসপাতাল, নয়াপুর জেনারেল হাসপাতাল, আলফাত জেনারেল হাসপাতাল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সর্বশেষ ২০১৮ সাল থেকে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর লাইসেন্সের জন্য অনলাইনের আবেদন করতে বলা হয়। লাইসেন্স পেতে যে সব শর্তাবলী চাওয়া হয় তার মধ্যে সোনারগাঁ উপজেলার মোগরাপাড়া চৌরাস্তার শুধুমাত্র ইনসাফ হাসপাতাল সবধরনের শর্তাবলী পুরণ করেছে। এ কারণে তাদের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। ওই উপজেলার অপর ১৭টি হাসপাতাল সবগুলো শর্তাবলী পুরন করতে না পারার কারণে ২০১৮ সালের পর আর কাউকে লাইসেন্স দেওয়া হয়নি।

লাইসেন্স ছাড়া এসব হাসপাতাল কিভাবে চলছে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লাইসেন্স ছাড়া হাসপাতাল চলছে কিভাবে? স্থানীয় প্রশাসনের উচিত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া। লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করলেই তাদের সব কাজ বৈধ হয়ে যাবে এটা কিভাবে ভাবা হচ্ছে। বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সোনারগাঁ উপজেলার বেসরকারি ক্লিনিক এসোসিয়েশনের সভাপতি ও সোনারগাঁ সেবা জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুরে আলম জানান, আমার মালিকানাধীন হাসপাতালের ২০১৯ সাল পর্যন্ত লাইসেন্স আছে। চলতি বছরের লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছি কিন্তু লাইসেন্স নবায়ন হচ্ছে না। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও অসাধু কিছু কর্মকর্তাদের কারণেই সোনারগাঁয়ের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর লাইসেন্স হচ্ছে না।

সাবেক মেম্বার রুনা আক্তার জানান,আমার ছোট শিশুকে ভুল চিকিৎসা দিয়ে তারা মেরে ফেলেছে, আমি এখনো সঠিক বিচার পাইনি । ছোট একটি উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে ১৮টি হাসপাতাল ব্যাঙের ছাড়ার মতো গড়ে উঠেছে। করোনা ভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকে এসব হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা হাসপাতালে আসছেন না। যারা আসছেন তারা ফি বাড়িয়ে দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই এসব হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এরই মধ্যে আবার তাদের লাইসেন্স নেই। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পলাশ কুমার সাহা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সোনারগাঁয়ের ১৮টি হাসপাতালের মধ্যে একটি ছাড়া কারো লাইসেন্স নেই। হাসপাতালগুলোর মালিকরা আমাকে জানিয়েছেন তারা লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু লাইসেন্স পাচ্ছেন না। লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন এর রশিদ দেখিয়ে তারা ব্যবসা করছেন। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।