ওয়ানটাইম প্লাস্টিকের চায়ের কাপের ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে বহুগুণ

০২ সেপ্টেম্বর ২০২০ খ্রি. ১৮ ভাদ্র ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ১৩ মুহররম ১৪৪২ হিজরি, বুধবার

সম্পাদকীয়

প্লাস্টিক পরিবেশের জন্যে ক্ষতিকর পরিবেশবিদরা বলে থাকেন। কিন্তু প্লাস্টিকের ব্যবহার এখন কৌশলে মানুষের মুখের কাছে চলে এসেছে। আর বোধ করি, আমরা মানুষও এতোটাই অসচেতন যে গো গ্রাসে গ্রহণ করে চলেছি প্রতিনিয়ত। প্লাস্টিকের চায়ের কাপ ব্যবহার স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে বিষয়টি কোনো এক অজ্ঞাত কারণে মানুষের চিন্তা চেতনা থেকে হারিয়ে গেছে। কেউ কোনো কথা বলছে না। যদি হয় করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়ে প্লাস্টিকের ওয়ান টাইম চায়ের কাপের ব্যবহার করা যুক্তিসঙ্গত, তাহলে বুঝতে হবে আমরা ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে তুলেছি।

প্লাস্টিকের কাপে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি। তাছাড়া যখন চা পরিবেশন করা হয় তখন তা ধোয়া হয় না; সুতরাং এই কাপ স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেও নিরাপদ নয়। অতএব, এই প্লাস্টিকের কাপই এখন মরণ ফাঁদ। কিন্তু চা দোকানগুলোতে যেভাবে পরিবেশন ও খাওয়া হয় এতে মনে হচ্ছে, স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি তারা মোটেও জানে না।

যে পরিমাণ চা দোকান রয়েছে তাতে প্রতিদিন হাজার হাজার চা বিক্রি হচ্ছে। সে তুলনায় প্লাস্টিকের কাপের ব্যবহারই বেশি। দেখা গেছে, যখন চা পরিবেশন করা হয় তখন দোকানিরা কোনো পরিস্কারই করে না কাপগুলো। প্যাকেট থেকে বের করে সরাসরি চা ঢলে ক্রেতাদের খেতে দেয়া হচ্ছে। এতে করে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোদের চেয়ে ঝুঁকি থেকেই যায়। অপরদিকে ধুলোবালিসহ অদৃশ্য জীবানুর চাপের কাপে তো রয়েছেই।

প্লাস্টিকই গরম পানির সংস্পর্শে এলে রাসায়নিক খাবারের সঙ্গে মিশে যায়। আর চা বিক্রির সময় যেহেতু চা অত্যন্ত গরম থাকে সেহেতু দ্রুতগতিতে প্লাস্টিক থেকে রাসায়নিক তরল হিসেবে চায়ের সঙ্গে মিশে যায়। আর অতি সহজে সেই বিষাক্ত দ্রব্য মানুষের পেটে ঢুকে যায়। বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন হরমোনের কাজের স্বাভাবিকতা বিঘ্নিত হয়। অপরদিকে পুরুষদের ক্ষেত্রে শুক্রাণু কমে যায়। আমরা প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জেনেছি যে, হার্ট, কিডনি, লিভার, ফুসফুস এবং ত্বকও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমন কি স্তন ক্যানসার হওয়ারও আশঙ্কা থাকে।

তাছাড়া শুধু মানুষেরই ক্ষতি হচ্ছে এমন নয়, আমাদের পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। প্লাস্টিকের কাপ অপচনশীল হওয়ায় মাটির মারাত্মক ক্ষতি করে। মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। মাটির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে গাছপালার দারুণ ক্ষতি করে।

সবকিছুতে মানুষকেই সচেতন হতে হবে। যখন আমরা চা খাওয়ার জন্যে দোকানে বসবো তখন যেন আমরা বলতে পারি উন্নতমানের কাপে যে চা পরিবেশন করা হয়। তাহলে প্লাস্টিকের কাপের ব্যবহার কমে যাবে। কিন্তু আমরা সেটা অনেকেই করতে পারবো না। কারণ, আমরা ফ্যাশন করতে পছন্দ করছি, সেই ফ্যাশনই আমাদের মানসিকতা নষ্ট করে দেয়। কেউ কেউ রয়েছেন চা খাওয়ার পর যেখানে সেখানে প্লাস্টিকের চায়ের কাপটি ফেলে দেন, বিশেষ করে ড্রেনে ফেলে দেয়ার কারণে পানির ক্ষতি হচ্ছে, পানি স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারে না। অপরদিকে দূষিত হয়ে যাচ্ছে আমাদের চারিদিকের পরিবেশ।

সুতরাং প্লাস্টিকের চায়ের কাপের পরিহার করা উচিত। কেননা ওয়ানটাইম প্লাস্টিকের চায়ের কাপের ব্যবহারের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণে।

০২ সেপ্টেম্বর ২০২০ খ্রি. ১৮ ভাদ্র ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ১৩ মুহররম ১৪৪২ হিজরি, বুধবার