কেন সাংবাদিকের উপর হামলা?

সম্পাদকীয়

ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা একজন সাংবাদিক বিশ^স্তভাবে প্রকাশের জন্যে সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্যে নিয়ে যান। এসব ঘটনার মাধ্যমেই মানুষ সবকিছু জানতে পারেন, নতুন অভিজ্ঞতা বা শিক্ষা লাভ করতে পারেন। শুধুমাত্র ক্রাইমই নয়, মানুষের ভালো মন্দ কাজের বিষয়গুলোও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। যা’ অন্যরা জেনে অভিজ্ঞতা সঞ্চার করেন। এভাবেই মানুষের জীবন চলছে। আর একজন সাংবাদিক তো সত্যের পক্ষেই লড়াই করে চলেন অবিরত। কিন্তু সেই সত্য হয়তো কারো কারো চক্ষুসূল হয়ে যায়। কারো স্বার্থে আঘাত লেগে যায় কিংবা কারো কাজের বেঘাত ঘটলেই সাংবাদিকের উপর হামলার মতো জঘন্য ঘটনা ঘটানো হয়। এসবই লজ্জাজনক ও অপমানের বিষয়!

আমরা অতীতেও সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনা শুনেছি। ঘটনা বিশ্লেষণে জানা যায় যে, কোনো সংবাদ প্রকাশের কারণেই ক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনা ঘটায়। সংবাদপত্রে প্রকাশ হলেই কারো কারো কাজের গতি নষ্ট হয়ে যায়, অথবা কারো স্বার্থে আঘাত লাগে; এ কারণে একজন নিরপরাধ সাংবাদিক তখন হয়ে যায় পথের কাঁটা। আর তখন পথের কাঁটা সরানোর জন্যে মরিয়া হয়ে যায় ও তার প্রতি আক্রমণের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এসবই আমাদের সমাজে ঘটে যাওয়া দুঃখজনক ঘটনাগুলোর বহিঃপ্রকাশ।

প্রিয় সময়ে ‘হবিগঞ্জ শহরে দিনে-দুপুরে সাংবাদিক তারেক হাবিবের উপর সন্ত্রাসী হামলা’ শিরোনামে সংবাদটি পাঠকমাত্রই জেনেছেন। তিনি একজন হবিগঞ্জ থেকে প্রকাশিত বহুল পঠিত ‘দৈনিক আমার হবিগঞ্জ’ পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক। হঠাৎই সাংবাদিক তারেক হাবিবের উপর সন্ত্রাসীদের হামলার বিষয়টি আমাদের সুশীল সমাজের জন্যে কষ্টদায়ক! ঘটনাটি ঘটেছে ৫ সেপ্টেম্বর শনিবার দুপুর দুইটার দিকে। কারা সেদিন সন্ত্রাসী হামলা করেছে সাংবাদিকের উপর তা আমরা প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জেনেছি।

তিনি সেদিন পেশাগত দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকা অফিসে যাচ্ছিলেন। আর তখন ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা সাংবাদিক তারেক হাবিবের উপর রড দিয়ে এলোপাথাড়ি বাড়ি দিয়ে তাকে আহত করে পালিয়ে যায়। সে সময় পথচারীরা তার এই করুণ অবস্থা দেখতে পেয়ে তাকে সদর হাসপাতালে পাঠায়।

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে, সাংবাদিককে সন্ত্রাসীরা কলম বন্ধ করতে বলেছিলো। তাকে হুমকি দিয়ে নানান কথা বলেছিলো। যেন ভবিষ্যতে কিছু না লেখা হয়। তাকে বারবার চিৎকার করে শাসিয়ে যায়। এসবই দুঃখজনক চিত্র।

আমরা বলতে চাই যে, একজন সাংবাদিকের উপর সংবাদ প্রকাশের কারণেই হামলা হয়েছে। যদি সমাজে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা প্রকাশের জন্যে হামলা হয় তাহলে সত্যপ্রকাশে অবিচল সাংবাদিকের জন্ম হবে না। এতে সমাজ আরো নষ্ট হয়ে যাবে। সমাজে ঘটে যাওয়া খারাপ ঘটনাগুলো গোপন থাকবে এবং ধীরে ধীরে সমাজ নষ্ট হয়ে যাবে। আর দুষ্ট প্রকৃতির মানুষ সমাজে বেড়ে যাবে এবং খারাপ ঘটনা ঘটতেই থাকবে। সমাজের সৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে যাবে এবং কোনো সত্য প্রকাশক সাংবাদিক প্রকাশ করতে চাইবে না। কিন্তু আমরা এমন পরিস্থিতি চাই না। আমাদের প্রশ্ন, সাংবাদিকের উপর কেন হামলা হবে? তবে হ্যাঁ, যদি এভাবেই সাংবাদিকদের উপর হামলা চলতেই থাকে এবং সঠিক বিচার না হয়; তাহলে সন্ত্রাসীরা প্রশ্রয় পাবে এবং আবারো সাংবাদিকের উপর হামলা হতে পারে। আর সাংবাদিকরা কোণঠাসা হয়ে পড়লে সমাজের সত্যপ্রকাশের জায়গা নষ্ট হয়ে যাবে।