ড্রেণ নির্মানকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের উপর এলাকাবাসীর ক্ষোভ!

সম্পাদকীয় …

অনিয়মে কোনো কিছু সঠিকভাবে হয় না। সেখানে ঘাপলা থাকে ও ভুলের পাহাড় বিদ্যমান থেকে যায়। সেই ভুলের জন্যে মারাত্মক ঘটনা হঠাৎই ঘটে যেতে পারে। তখন আর কিছ্ইু করার থাকে না, শুধুমাত্র হাহুতাশ করা ছাড়া। এমন ভুল খামখেয়ালীপনা মানুষই করতে পারে। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে তারা অনেক সময় ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়। আর ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকাটাই সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে তোলে ও মানুষ প্রশ্রয় পেয়ে যায়। এসব ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকা মানুষগুলোর কারণেই অসহায় মানুষগুলোর করুণ মৃত্যুও ঘটে যায়। তেমন একটি ঘটনা ঘটেছে ভোলার মনপুনরায়।

প্রিয়সময়ে ‘মনপুরায় ড্রেণ নির্মানের অনিয়ম, খেয়ে নিলো রিক্সাচালক মামুনের প্রাণ’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি এলাকাবাসীর মতো সারাদেশের মানুষকে কষ্ট দিয়েছে। সেই সাথে একটা প্রশ্ন আসছেযে, অনিয়মের কারণে যে ঘটনা ঘটলো তার সমাধান কীভাবে কর্তৃপক্ষ এখন করতে পারবে?

আমরা প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, ভোলার মনপুরায় নির্মানাধীন ঢাকনাবিহীন ড্রেনে পড়ে গিয়ে রিক্সাচালক মামুনের মৃত্যু ঘটেছে। সে সময় (গত ২২ আগস্ট) মামুন মাথায় করে বোঝা বহন করে নিয়ে যাচ্ছিলো। তখন ড্রেনে পড়ে গিয়ে মারাত্মকভাবে আহত হয় মামুন। ওই ড্রেনে কোনো ঢাকনা ছিলো না, সম্পূর্ণ খোলাই ছিলো। এ কারণে ড্রেনের মধ্যে পড়ে যায় মামুন। তাকে রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো চিকিৎসার জন্যে। কিন্তু আঘাতের পরিমাণ এতোটাই মারাত্মক ছিলো যে, তিন সপ্তাহ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে তার মৃত্যু হয়। সাথে সাথে মামুনের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জেনেছি যে, ‘সেইসাথে এলাকার মানুষের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে উপজেলার বানিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র হাজীর হাট বাজারে ড্রেণ নির্মানকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের উপর।’ আর এটা একেবারে স্বাভাবিক বিষয় ছিলো যে, ঢাকনাবিহীন ড্রেন নির্মাণ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো।

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা আরো জানতে পারলাম যে, ‘ভোলার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘আলফি এন্টারপ্রাইজ’ এই ড্রেণ নির্মানের কাজ পায়। হাজীর হাট বাজারের সদর রোডে ড্রেণ নির্মানের কাজ শুরু করার ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও অবহেলার কারনে এখনো কাজ শেষ হয়নি। ড্রেণের ওয়াল নির্মান হলেও সকল ড্রেন এখনো রয়েছে ঢাকনা বিহীন-খোলা। যার ফলে হাজীর হাট বাজারের ব্যবসায়ীসহ হাজার হাজার মানুষ রয়েছে প্রাণের ঝূঁকিতে। যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে রিক্সাচালক মামুনের মতো বড় কোন দুর্ঘটনা।’ সুতরাং এ থেকেই পরিস্কার যে, অনেকটা খামখেয়ালীপনার পরিচয় দিয়েছে সেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। মামুনের মৃত্যু যদিও আমাদের কাঁদিয়েছে। আমরা চাই না যে, আর কোনো প্রাণ এভাবে হারিয়ে যায়। সেই সাথে এ ধরনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণ করার দরকার রয়েছে বলে আমরা মনে করছি। আমরা জেনেছি যে, অজানা কারণেই সেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি কাজ বন্ধ রেখেছিলো। সেই অজানা কারণটিরও অনুসন্ধান করার দরকার রয়েছে। এধরনের অনিয়ম প্রদর্শনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বার বার কাজ পাইয়ে দেয়ার বিষয়েও গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। জনসাধারনের চরম ভোগান্তিসহ ব্যাপক অনিয়ম ও দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ রয়েছে সেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। সুতরাং শীঘ্রই ভোগান্তি থেকে মুক্তি চান বাজার ব্যবসায়ীরা ও এলাকাবাসী।

আমাদের মতে, এ ধরনের কাজ দেয়ার ক্ষেত্রে কাজের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে তদারকি করা উচিত ছিলো। যদি পূর্ব থেকে সেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম মনিটরিং করা হতো তাহলে একটি পরিবার তার উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারাতো না। আমরা চাই, মামুনের মৃত্যুর বিষয়ে সেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ কর্তৃপক্ষের জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। কেননা আমরা প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, ড্রেণ নির্মানকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের উপর এলাকাবাসীর ক্ষোভ উঠেছে। সুতরাং এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরী হয়ে উঠেছে; অন্যথায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে!

আমরা সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, প্রিয় সময় গুজব প্রচার করে না

২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ খ্রি. ০৯ আশ্বিন ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ০৬ সফর ১৪৪২ হিজরি, বৃহস্পতিবার